বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে গত ছয় মাসে পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে ৯ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গার। মিয়ানমারের ভেতরে আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা এ মাইনে পা হারানো যুবক ও কিশোররা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে মো. ইউনুছ নামে আরও এক রোহিঙ্গা যুবকের মাইন বিস্ফোরণে ডান পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের ২ পূর্ব ক্যাম্পের ১-বি ব্লকের বাসিন্দা। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের ২০০ মিটার ভেতরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায় এলাকাবাসী। শূন্য রেখার কাঁটাতারের ওপর তাকে পড়ে থাকতে দেখে লোকজন। সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে বেসরকারি হাসপাতাল, পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
এই রোহিঙ্গা যুবকের মতো গত ২৫ জুন সকালে মাইন বিস্ফোরণে ওমর মিয়া নামে এক যুবকের ডান পা উড়ে গেছে। সে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের মৌলভিকাটান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল হাফেজের ছেলে। এ আগে ২২ জুন জারুলিয়াছড়ির পাশে জামছড়ি সীমান্তে মো.

আরাফাত নামে এক কিশোরের পা উড়ে যায়। সে জামছড়ি পাড়ার খুল্ল্যা মিয়ার ছেলে।

স্থানীয়দের ধারণা, মিয়ানমারের ভেতরে আরাকান রাজ্যের সিংহভাগ এখন আরাকান আর্মির দখলে। তারাই সীমান্তে স্থল মাইন পুঁতে রেখেছে। বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা যুবক-কিশোররা যখন মিয়ানমারের ২০০-৪০০ মিটার ভেতরে প্রবেশ করে তখন মাইন বিস্ফোরণের শিকার হয়। এ পর্যন্ত যেসব যুবক ও কিশোর আহত হয়েছে তারা বেশির ভাগ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। 

সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও জামছড়ি পাড়ার বাসিন্দা সাবের হোসেন জানান, আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মাটিতে মাইন পুঁতে রেখেছে। সে মাইনে পা পড়ার পর বিস্ফোরিত হয়। বিভিন্ন কাজে মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে লোকজন প্রবেশ করার পরই এ ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত ছয় মাসে বাংলাদেশি ও বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গা মিলিয়ে ৯ জন মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছে। এ বিস্ফোরণের ঘটনা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও সদর ইউনিয়নের সীমান্তেই বেশি। 

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মাসরুরুল হক বলেন, ২০০-৪০০ মিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, চোরাচালানের উদ্দেশ্যে তারা সেখানে যায়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন আর ক ন র ভ তর

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতু থেকে খুলে ফেলা হচ্ছে রেললাইন

যমুনা সেতুর ওপর থেকে রেললাইন খুলে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ বৃহস্পতিবার নাট-বোল্টসহ যন্ত্রাংশ খোলার কাজ শুরু করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, গত ১৮ মার্চ যমুনা রেলসেতু চালু হয়েছে। এরপর থেকে সড়ক সেতু দিয়ে ট্রেন চলছে না। যমুনা সেতুর ওপর রেললাইনের প্রয়োজন নেই। এ কারণে সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের মাধ্যমে যৌথ পরিকল্পনায় সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, রেললাইন খোলা শুরু হয়েছে। উপরিভাগে যানবাহনের জটলা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আগামীতে সেতুর দুটি লেন প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। রেললাইন খুলে নেওয়া হলে সড়ক সেতুতে আরও প্রায় সাড়ে তিন মিটার জায়গা বাড়বে। এটা মূল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযোগ করতে পারব। এতে উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার বাড়বে। এ ধরনের সেতু আন্তর্জাতিকভাবে ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত হয়। বর্তমানে যমুনা সেতুর প্রতি লেন ৬ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ। এ কারণে দুর্ঘটনা বা যানজট হয়। রেললাইন অপসারণের পর প্রতি লেন প্রস্থ হবে প্রায় ৮ মিটার। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লাগে। প্রশস্তকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সাসেক-২) পরিচালক ড. ওয়ালীউর রহমান। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এবারের ঈদে সেতু দিয়ে এক দিনে ৬৫ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে সেতু কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদের আগে-পরে বিপাকে পড়ে। সেতুর ওপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় এলেঙ্গা ও সিরাজগঞ্জসহ দুই পারে থেমে থেমে যানজট হয়। সেতুর উপরিভাগ প্রশস্ত করা হলে দুর্ঘটনা ও যানজট কমতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধন হয়। এর নকশায় রেলপথ ছিল না। পরে সেতুর ওপর উত্তর পাশে লোহার খাঁচা, বার ও অ্যাঙ্গেল যুক্ত করে রেললাইন বসানো হয়। ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হয়। নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে ট্রেন চলার কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতি বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি তৈরি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ