ফাগুনের বিকেলে নীল আকাশে তরতর করে উড়ছিলো লাল ঘুড়িটা। আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছে লাল ঘুড়ির। গত এক মাস ধরে সে একটা ঘুড়ির দোকানে আটকে ছিলো। আজ সে আকাশে উড়ছে। কী মজা! কী মজা! নিচের উঁচু উঁচু অট্টালিকার ছাদে ছোট ছেলেমেয়েরা খেলা করছে। কেউ আবার ছাদবাগান পরিচর্যা করছে। ওপর থেকে শহরটিকে বেশ সুন্দর লাগছে তার কাছে। ওপর থেকে কোনো কিছু দেখার আনন্দ দারুণ!
হঠাৎ দুটি চিল ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে খেলতে ঘুড়িটির পাশ ঘেঁষে উড়ে গেলো। একটি চিল তাকে বললো, খেলবে নাকি আমাদের সাথে?
লাল ঘুড়ি বললো, তা খেলবো নিশ্চয়ই। কিন্তু তোমরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে খেলতে যাচ্ছো কোথায়?
অন্য চিল জবাব দিলো, আমরা শহরতলির এক গাঁয়ে যাচ্ছি। শুনেছি ওখানে খেলার মাঠে বাহারি ঘুড়ির উৎসব শুরু হয়েছে।
আগ্রহে জ্বলজ্বল করে উঠলো লাল ঘুড়ির চোখ। তাই নাকি! তোমাদের সাথে নেবে আমাকে?
কেন নেবো না। চলো আমাদের সাথে। একসঙ্গে বলে উঠলো চিল দুটি।
রওয়ানা দিতে গিয়ে ঘুড়ি বুঝতে পারলো, সে চিলদের মতো উড়তে পারছে না। তার শরীর যে সুতায় বাঁধা।
লাল ঘুড়ির খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। উড়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা করে দুই-তিনটা চক্কর দিলো। এদিকে চিলেরা তার জন্য আর অপেক্ষা না করে চলে গেলো।
ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরের হাতের নাটাইটি ঘুড়ির মনের ইচ্ছে বুঝতে পারলো। সে ঘুড়িকে জিজ্ঞেস করলো, এভাবে জোরজবরদস্তি করছো যে?
ঘুড়ি বললো, আমি চিলদের সাথে উড়ে যেতে চাই শহরতলির গাঁয়ে। আচ্ছা নাটাই, তুমি কি আমাকে ছেড়ে দিতে পারো না? আমি স্বাধীনভাবে পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাই।
নাটাই রাগান্বিত হয়ে বললো, ছেড়ে দেবো মানে? তোমাকে ধরে রাখাই তো আমার কাজ। এটি আমার দায়িত্ব।
ঘুড়ি অনুনয় করে বললো, নাটাই ভাই, দয়া করে আমাকে একটিবার মুক্ত করে দাও। আমি তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
ঘুড়ির অনুনয়ে এবার নাটাইয়ের মন গললো। কিন্তু মন গললেই বা কী। কোনো ক্ষমতা তো নেই তার হাতে। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আমি কি ইচ্ছে করে তোমাকে ধরে রাখি? আমাকে এই কিশোরের হাত দুটো যেভাবে চালায় সেভাবেই চলি। সে আমাকে সুতো ছাড়তে বললে ছাড়ি, গোটাতে বললে গোটাই। তোমাকে মুক্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ছেলেটি যদি অন্য কোনো কিশোরে সাথে কাটাকাটি খেলে তাহলে হয়তো তুমি মুক্তি পেতেও পারো।
হতাশ ঘুড়ি খেয়াল করলো, এরই মধ্যে অন্য ছাদ থেকে একটি নীল ঘুড়ি উড়তে শুরু করেছে। নীল ঘুড়িটি ওড়াচ্ছে আরেকজন কিশোর। তরতর করে আনন্দে ওপরে উঠে আসছে নীল ঘুড়ি। লাল ঘুড়ির মনে আশা জেগে ওঠে। ওরা যদি কাটাকাটি খেলা শুরু করে আর যদি একবার সুতা কেটে ভোকাট্টা হয়ে যেতে পারি, তাহলেই কেল্লা ফতে।
নীল ঘুড়িটা কাছাকাছি আসতেই লাল ঘুড়ি ডেকে বললো, কেমন আছ নীল ঘুড়ি?
নীল ঘুড়ি জবাব দিলো, এতোদিন ভালো ছিলাম না। এখন বেশ ভালো আছি। এই দেখো না কেমন ডানা মেলে উড়ছি।
লাল ঘুড়ি বললো, কিন্তু আমরা কি আর পাখির মতো স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াতে পারি?
তা তুমি ঠিকই বলেছো, কিন্তু কাগজের ঘুড়ি হয়ে উড়তে যে পারছি– এটি কম কিসে।
লাল ঘুড়ি এবার প্রস্তাব দিলো, চলো আমরা চিলদের মতো ছোঁয়াছুঁয়ি খেলি। মনে মনে ভাবলো, যদি খেলতে গিয়ে সুতায় প্যাঁচ লেগে যায় তাহলে হয়তো ভোকাট্টা হয়ে মুক্তি পেতে পারি।
লাল ঘুড়ির প্রস্তাবে রাজি হলো নীল ঘুড়ি। দুই ঘুড়ি মিলে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা শুরু করলো। আকাশে পাক খেতে খেতে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় মেতে উঠেছে দুই ঘুড়ি। একই সঙ্গে দুই ছাদের দুই কিশোর পাল্লা দিয়ে একে অন্যের ঘুড়ি ভোকাট্টা করার চেষ্টায় মেতে উঠেছে। দুই ঘুড়ির মাঞ্জা সুতা একটু পরপর ঘষাঘষি খাচ্ছে। এবার নীল ঘুড়িওয়ালা কিশোর সুকৌশলে নাটাইয়ে মারলো টান। ঘ্যাঁচ করে কেটে গেলো লাল ঘুড়ির সুতা। ঘুড়ির ইচ্ছাপূরণে সামিল হলো দুষ্টু বাতাস। ওপরে উঠতে থাকলো লাল ঘুড়ি। বাতাস লাল ঘুড়িকে উড়িয়ে নিয়ে চললো শহরতলির গাঁয়ের দিকে। লাল ঘুড়ির আনন্দ আর দেখে কে? আজ সে মুক্ত, স্বাধীন! নীল ঘুড়ির জন্য এবার খুব করুণা হচ্ছে তার! আহারে বেচারা!
কিন্তু একি? লাল ঘুড়ি যে নিচে পড়ে যাচ্ছে! বাতাস গেলো কোথায়? তার ডানা তো পাখির ডানার মতো কাজ করছে না। চলে যেতে যেতে বাতাস বললো, তোমাকে তো অনেকটাই সাহায্য করলাম। এখন নিজের শক্তিতে ওড়ো। ছোটবোন বাউকুড়ানি আমাকে ডাকছে। নিরুপায় লাল ঘুড়ি আর নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না। পড়লো এসে বিদ্যুতের খুঁটির ওপর। ঘুড়ির গায়ে জড়িয়ে থাকা সুতা পেঁচিয়ে গেলো খুঁটি ও বিদ্যুতের তারে। কোনোভাবেই সে আর মুক্ত হতে পারলো না। লাল ঘুড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারলো। ওড়ার যে স্বাধীনতাটুকু সে পেয়েছিলো, তাতেই তার খুশি থাকা উচিত ছিলো। n
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মালয়েশিয়ায় আরো বাংলাদেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন: আশা প্রধান উপদেষ্টার
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আরো অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ আশা প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে কুয়ালালামপুরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এরপর দুই দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি সহযোগিতামূলক নোট বিনিময় স্বাক্ষর করা হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। তারা উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, যা তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন, সন্তানের লেখাপড়া এবং ভালো শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জন্য এই দরজা খোলা থাকবে এবং আমাদের দেশের আরো অধিকসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।”
বাংলাদেশের কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, “মালয়েশিয়ার জনগণ তাদের সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্য এবং বন্ধুর মত আচরণ করে। এতে তারা খুব খুশি। তারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখান থেকে অনেক কিছু শেখে, যা দেশে ফিরে যাওয়ার পর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়ক হয়।”
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আমাদের মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে আপনারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।”
একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত বছর ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আমরা সহযোগিতা খুঁজছিলাম, আর তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বন্ধুর মত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমাদের শক্তি জুগিয়েছিলেন। ”
বাংলাদেশে সঠিক পথ নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্পের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছি। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করেছি।”
“ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও কার্যকর করা গেছে। যে কারণে এক বছরের মাথায় এসে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারছি।” আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থন চান।
সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আশা প্রকাশ করে বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক হবে।”
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইভা