Samakal:
2025-11-17@07:46:00 GMT

আলোচনাই সমাধানের পথ

Published: 27th, June 2025 GMT

আলোচনাই সমাধানের পথ

সংস্কার লইয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যেই অচলাবস্থা বিদ্যমান, তাহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান, সমস্যাটি নিরসনে সরকার অদ্যাবধি যথেষ্ট সক্রিয় নহে, যাহা অধিকতর উদ্বেগের কারণ। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা জানি, সরকার এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্তিপূর্বক রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুইটি বিভাগ সৃষ্টি করিয়া গত ১২ মে একটা অধ্যাদেশ জারি করে। উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হইয়াছিল, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে করহার নির্ধারণের ন্যায় নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা সম্ভবপর হইবে এবং ফলস্বরূপ রাজস্ব ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরাজমান দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ হইবে। কিন্তু অভিযোগ উঠিয়াছে, অধ্যাদেশটি জারির পূর্বে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহিত উহা লইয়া যথেষ্ট পরিমাণ আলোচনা করা হয় নাই। অনেকটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের একটি শর্ত পূরণের তাগিদ হইতে অতি দ্রুততায় অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। আইএমএফের শর্ত ছিল রাজস্বনীতি ও আদায়ের কাজে আলাদা সংস্থা করা। ইহাসহ আরও কিছু শর্ত অপূর্ণ থাকিবার কারণে আইএমএফ উক্ত ঋণের দুইটি কিস্তির অর্থ আটকাইয়া দেয়। এখন আইএমএফের কিস্তি ছাড় করিতে গিয়া যদি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণই স্থবির হইয়া থাকে, তাহা হইলে পদক্ষেপটি হিতের বিপরীতে অহিতই ডাকিয়া আনিতেছে, বলা যায়।

তবে সরকার যথেষ্ট সচেতন থাকিলে যে এহেন অচলাবস্থা পরিহার করা যাইত, তাহাও বলা প্রয়োজন। জানা গিয়াছে, এনবিআরের কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানটির বিভাজন তথা ইহাকে দ্বিধাবিভক্তিকরণ লইয়া তেমন আপত্তি করিতেছেন না। তাহাদের মূল আপত্তি নূতন দুই বিভাগে পদায়ন-সংক্রান্ত। যেখানে তাহাদের দাবি এই পদায়নে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার, সেখানে সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলিয়া বস্তুত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত রাখিয়াছে। স্পষ্টত, অধ্যাদেশে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের মত উপেক্ষা করিয়া সরকার এক প্রকার পক্ষপাত প্রদর্শন করিয়াছে, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপক হিসাবে সরকারের নিকট যাহা আদৌ প্রত্যাশিত নহে। এই দিক হইতে বিচার করিলে এনবিআর কর্মীদের চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না।

আলোচ্য আন্দোলন ইতোমধ্যে এক মাস অতিক্রান্ত। সরকারও তাহাদের সহিত কয়েক দফা আলোচনায় বসিয়াছে। কিন্তু উভয় পক্ষ স্বীয় অবস্থানে অনড়। তদুপরি পরিস্থিতি যেন ক্রমশ জটিলতর রূপ পরিগ্রহ করিতেছে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে কলমবিরতি পালন শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। এই সময় সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে এনবিআর প্রশাসনের পক্ষ হইতে ভবনটির ফটকগুলিতে ভিতর হইতে তালা লাগাইয়া দেওয়া হয়। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা বাহির হইতে উক্ত ফটকগুলিতে আরেক দফা তালা লাগাইয়া দেন। শুধু উহাই নহে, অপরাহ্ণ ৪টার দিকে এনবিআরের সম্মুখের সড়কে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে, যেখানে সমগ্র দেশের শুল্ক-কর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকামুখী ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

দেশের রাজস্ব সংগ্রহের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই সম্পাদন করে এনবিআর। অর্থাৎ আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের সংগৃহীত রাজস্ব দিয়াই সরকার তাহার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে। তাই কোনো সংস্কার কর্মসূচি, তাহা যতই ভালো হউক, উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের উপর জোর করিয়া চাপাইয়া দিয়া কোনো কল্যাণকর ফল লাভ করা যাইতে পারে না।
উপরন্তু রাজস্ব সংগ্রহকার্য বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতা দাবি করে, যাহার খুঁটিনাটি স্বল্প সময়ে কাহারও পক্ষে আয়ত্ত করা সহজ হইতে পারে না। ফলে বিভাগসমূহ পরিচালনাকার্যে এই বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণের অগ্রাধিকার কোনো অন্যায় আবদার নহে। তবে সকল পক্ষকেই বুঝিতে হইবে, এই অচলাবস্থা দ্রুত দূর করিতে হইবে এবং আলোচনা ব্যতিরেকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ নাই। এই ক্ষেত্রে সরকার আরও আন্তরিক হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র কর মকর ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এনসিপির সঙ্গে আইএমএ এর মিশন টিমের সঙ্গে বৈঠক হয়।

আরো পড়ুন:

এনসিপিকে নিয়ে প্রথম বই ‘এনসিপির যাত্রা`

এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, যুবক আটক

বৈঠকে এনসিপি প্রতিনিধি দল দেশের সংকটময় সময়ে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান এবং জরুরি সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার প্রতি আইএমএফ-এর ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।

বৈঠকে উপস্থিত (আইএমএফ) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আহরণ, রাজস্ব–জিডিপি অনুপাত, ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট এবং যুব কর্মসংস্থান বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

এনসিপি প্রতিনিধিরা এসব চ্যালেঞ্জ স্বীকার করে বলেন, যে তারা রাজস্ব ডিজিটালাইজেশন, আর্থিক খাতের চলমান সংস্কারকে সমর্থন এবং সংস্কার বাস্তবায়নের ধীরগতির বিষয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সভায় আরো আলোচ্য ছিল পূর্ববর্তী সরকারের ‘ক্লেপ্টোক্রেসি’ কীভাবে শুরু হয়েছিল, জাতীয় অর্থনীতি ও প্রশাসনে এর প্রভাব কী ছিল এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতিকে রোধ করতে কী ধরনের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ছিল, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি কমানো, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তর। উভয়পক্ষই আশা প্রকাশ করে যে বাংলাদেশের কঠোর পরিশ্রমী জনগণই উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি এবং জনগণের সম্মিলিত মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে দেশ আরো সহনশীল ও স্থিতিশীল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবে।

বৈঠকে আইএমএফ-এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ক্রিস পাপাজর্জিউ, বাংলাদেশ মিশন চিফ, ম্যাক্সিম ক্রিশকো, ঢাকা রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং তৌহিদ এলাহি, ডেপুটি সেক্রেটারি ও ইকোনমিক এনালিস্ট ।

এনসিপি এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জাবেদ রাসিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রধান, শিল্প ও বাণিজ্য সেল, মো. সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রধান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সেল, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, যুগ্ম সদস্য সচিব ও কো-লিড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সেল, আব্দুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল, সংগঠক ও কো-লিড, শিল্প ও বাণিজ্য সেল এবং মো. আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য সেল।

ঢাকা/রায়হান/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্বল+দুর্বল=আরও দুর্বল, নাকি সবল ব্যাংক
  • এনসিপির সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক