কিশোরগঞ্জের ইটনায় তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মনু মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর ভাতিজা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি (মনু মিয়া) দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়।

আরও পড়ুন৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া হাসপাতালের শয্যায়, ঘোড়াটি মেরে ফেলল দুর্বৃত্তরা১৭ মে ২০২৫

মনু মিয়ার স্বজনেরা বলেন, জীবনভর কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল হয়নি নিঃসন্তান মনু মিয়ার। ফলে শরীরে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে। রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হন তিনি। গত ১৪ মে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থতাবোধ করলে তাঁকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে যান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কারও মৃত্যুসংবাদ শুনেই ঝড়বৃষ্টি কিংবা রাত-বিরাত উপেক্ষা করে খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় খনন যন্ত্রপাতি নিয়ে মনু মিয়া ঘোড়ায় করে ছুটে যেতেন কবরস্থানে। মানুষের অন্তিম যাত্রায় কবর তৈরি করতেন পরম যত্নে। ৫০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করেছেন তিনি। এ জন্য কোনো সুবিধাও তিনি নেননি। মনু মিয়ার ডায়েরিতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এই দীর্ঘ সময়ে তিনি অন্তত ৩ হাজার ৫৭টি খুঁড়েছেন।

কবর খুঁড়তে দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানি জমি বিক্রি করে কয়েক বছর আগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। ঘোড়াটি সচল রেখেছিল তাঁকে। বাড়িতে মনু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগমের অনুপস্থিতিতে ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর দেশি-বিদেশ থেকে অনেকেই মনু মিয়াকে দামি ঘোড়াসহ নানা সহযোগিতা করতে চান। কিন্তু মনু মিয়া কারও সহায়তা নিতে রাজি হননি। তিনি শুধু সবার কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন, আবার যাতে অন্যের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।

একজন সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তে তাঁর কবর খোঁড়ার সুনাম আছে। শুধু কবর খনন করেই ক্ষান্ত হননি মনু মিয়া। এ পর্যন্ত যাঁদের কবর খুঁড়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর দিন-তারিখ সব লিখে রেখেছেন। মনু মিয়া সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আজ তাঁর লাশ দাফনের জন্য কবর খননের প্রস্তুতি চলছে। আজ বিকেলে নিজ এলাকায় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন য ক র জন য কবর খ

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুরে কবরস্থানে বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

মাদারীপুর সদর উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিসে এ অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান।

আরো পড়ুন:

পলাতক থাকলেও বিদেশে টাকা পাচার অব্যাহত জাবেদের: দুদক

দুদক নি‌জেই দুর্নীতিমুক্ত না হ‌লে অন‌্যকে বলার অধিকার রা‌খে না: চেয়ারম্যান

দুদকের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান জানান, শিরখাড়া ইউনিয়নে গণকবরস্থান নির্মাণের নামে প্রায় আড়াই লাখ টাকার অপব্যবহার করা হয়। এছাড়া সুনমন্দি এলাকায় থানার এক ওসিকে খুশি করতে তার বাড়ির সামনে এলজিইডির ৩২ লাখ টাকা অর্থায়নে কালর্ভাট করা হয়। যেখানে সরকারি অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পায় দুদক। এ সব অভিযোগের সত্যতা জানার জন্যে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে ও এলজিইডির কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।

তিনি আরো জানান, প্রতিটি দপ্তরের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের ফাইলপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/বেলাল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় বিচ্ছিন্ন মাদ্রাসা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
  • মাদারীপুরে কবরস্থানে বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান