স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাপ্রধানদের অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি তদন্ত পরিচালনা করতে হয়েছিল। তাঁদের সন্দেহ ছিল, গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রাশিয়ার জন্য ‘ডাবল এজেন্ট’ (এমন একজন গুপ্তচর, যিনি একসঙ্গে দুটি বিপরীত পক্ষের জন্য কাজ করেন) হিসেবে কাজ করছেন।

এমআই৬-এর সহযোগী সংস্থা এমআই৫ সম্ভাব্য গুপ্তচরকে ধরতে ‘অপারেশন ওয়েডলক’ নামে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল। এ অভিযানে নজরদারি, পরিকল্পনা ও ডেস্ক বিভাগের অন্তত ৩৫ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তৎপরতা চালিয়েছেন।

গার্ডিয়ানের সূত্রে জানা গেছে, নজরদারি দলের সদস্যরা একটি সফরে এক সপ্তাহের বেশি সময় মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। তাঁরা সেখানে সিআইএর নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছিলেন। অভিযানটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ, কর্মকর্তারা ওই দেশের সরকারকে অবগত না করেই সেখানে গিয়েছিলেন, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হতে পারত।

এই তদন্ত কোনো না কোনোভাবে প্রায় ২০ বছর চলেছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু আদৌ এমআই৬-এ কেউ রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছিল কি না, তা এমআই৫ প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে এখনো আশঙ্কা রয়ে গেছে, কেউ হয়তো রাশিয়ার পক্ষে কাজ করে পালিয়ে যেতে পেরেছেন।

কিম ফিলবির প্রসঙ্গ টেনে গার্ডিয়ানকে একটি সূত্র জানায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের হাতে আরেক ফিলবি ধরা পড়েছে।’ কিম ফিলবি কুখ্যাত ডাবল এজেন্ট ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে কাজ করা কেমব্রিজ স্পাই রিংয়ের সদস্য ছিলেন।

গোপন গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের কাজ বিদেশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা এবং গোয়েন্দাদের পরিচালনা করা। অন্যদিকে এমআই৫ যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা। তারা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর যেকোনো হুমকি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে।

এমআই৫ ১৯৯০-এর দশকে এ তদন্ত শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তা চালু রাখে বলে জানা যায়। তত দিনে যাঁকে ঘিরে ‘অপারেশন ওয়েডলক’ পরিচালিত হচ্ছিল, তিনি এমআই৬ থেকে বিদায় নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য আসে। তাদের ধারণা, লন্ডনে কর্মরত ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা রাশিয়ার কাছে নিয়মিত গোপন তথ্য পাচার করছিলেন।

তদন্ত চলার এক পর্যায়ে রাশিয়ার গোপন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির নেতৃত্বে ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।

তদন্তকারীরা ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ওই কর্মকর্তার গতিবিধি অনুসরণ করেন। এ অনুসন্ধান প্রায়ই এমআই৫-এর এখতিয়ারের বাইরে চলে যাচ্ছিল। এজেন্টদের ভুয়া নাম আর সত্যিকারের পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। ধরা পড়লে কেউ সাহায্য করতে পারবে না বলে তাঁদের জানানো হয়েছিল।

এমআই৬–এ ডাবল এজেন্ট ঢুকে পড়ার বিষয়টি এতটাই গুরুত্ব পেয়েছিল যে গোয়েন্দাপ্রধানেরা তদন্ত চালানো ছাড়া অন্য কোনো পথ দেখেননি। ধারণা করা হয়, ওই কর্মকর্তা একা ছিলেন না। লন্ডনে তাঁর আরও দুজন সহযোগী ছিলেন। একটি সূত্র জানায়, ‘অপারেশন ওয়েডলক’ ছিল এমআই৫-এর অন্যতম ব্যতিক্রমী, দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল অভিযান।

এক গোয়েন্দা সংস্থার আরেকটিকে নজরদারি করাটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। ফলে সন্দেহ থেকেই যায়, এমআই৬-এ এখনো হয়তো কেউ গুপ্তচর হিসেবে রয়ে গেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র কর মকর ত ক জ কর তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত

এমন এক সময়ে যখন বেশিরভাগ মানুষ লেখার জন্য কিবোর্ড ব্যবহার করে, তখন হাতের লেখা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ? ভারতীয় আদালতের মতে, অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, যদি সেই লেখক হন একজন চিকিৎসক।

ডাক্তারদের বাজে হাতের লেখা নিয়ে ভারতসহ সারাবিশ্বেই রসিকতা করা হয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এই লেখা কেবল ফার্মাসিস্টরাই বুঝতে পারেন, রোগী কিংবা অন্য কেউ নয়। কিন্তু স্পষ্ট হাতের লেখার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি আদেশ জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মেডিকেল প্রেসক্রিপশন পাঠ একটি মৌলিক অধিকার।’ কারণ এটি জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে।

আদালতের এই আদেশ এমন একটি মামলায় এসেছে, যেখানে লিখিত শব্দের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। মামলায় একজন নারীকে ধর্ষণ, প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ ছিল এবং বিচারপতি জসগুরপ্রীত সিং পুরি জামিনের জন্য পুরুষের আবেদনের শুনানি করছিলেন।

ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, লোকটি তাকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তার ভুয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং তাকে যৌন শোষণ করেছে।

অভিযুক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তাদের সম্মতিতে সম্পর্ক ছিল এবং অর্থ নিয়ে বিরোধের কারণে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।

বিচারপতি পুরি জানান, যখন ওই নারীকে পরীক্ষা করা এক সরকারি চিকিৎসকের মেডিকেল রিপোর্টটি দেখেন, তখন এর কিছুই তিনি বুঝতে পারেননি।

বিচারপতি তার আদেশে লিখেছেন, “এটি এই আদালতের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। কারণ একটি শব্দ বা একটি অক্ষরও স্পষ্টভাবে পড়া যায়নি।”

বিবিসি রায়ের একটি কপি দেখেছে যার মধ্যে প্রতিবেদন এবং দুই পৃষ্ঠার একটি প্রেসক্রিপশন রয়েছে। পুরো প্রেসিক্রিপশন ও রিপোর্ট অপাঠ্য।

বিচারপতি পুরি লিখেছেন, “যেহেতু প্রযুক্তি ও কম্পিউটার সহজলভ্য, তবুও এটা অবাক করার মতো যে সরকারি ডাক্তাররা এখনো হাতে প্রেসক্রিপশন লিখছেন যা সম্ভবত কিছু রসায়নবিদ ছাড়া অন্য কেউ পড়তে পারে না।”

আদালত সরকারকে মেডিকেল স্কুলের পাঠ্যক্রমের মধ্যে হাতের লেখার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করতে এবং ডিজিটালাইজড প্রেসক্রিপশন চালু করার জন্য দুই বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করতে বলেছে।

বিচারপতি পুরি জানিয়েছেন, যতদিন না এটি বাস্তবায়ন না হয়, ততদিন পর্যন্ত সব ডাক্তারকে বড় অক্ষরে স্পষ্টভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করা বাংলাদেশিরা নজরদারিতে: আইজিপি