সাইকেলের পেছনে বসিয়ে রোজ আমাকে স্কুলে দিয়ে আসতেন বাবা। স্কুল শেষে নিয়েও আসতেন নিয়ম করে। বাবার সাইকেলের পেছনে বসে স্কুলে যাওয়া-আসা করেই মাধ্যমিক পাস করেছি। সাইকেলে যেতে যেতে ভাবতাম, একদিন বড় হয়ে বাবাকে একটা মোটরসাইকেল কিনে দেব। আমার সেই প্রতিজ্ঞা আমি রেখেছি।

অবশ্য বাবা যে নিজে মোটরসাইকেল কিনতে পারতেন না, তা নয়। কিন্তু ওই যে নিজের জন্য কিছু না করে সন্তানের জন্য সর্বস্বদানের অন্য নাম যে বাবা। নিজের জন্য আসলে তেমন কিছুই করতেন না। আমার আর আমার ভাইয়ের জন্য তাঁর সর্বোচ্চটুকুই করতেন। সব বাবা তাঁর সন্তানের জন্য এমন করেন। তবে আমার বাবার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি ভিন্ন ছিল, তা হলো তাঁর চিন্তা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। তিনি তাঁর ছেলে ও মেয়েকে কখনো আলাদা চোখে দেখেননি। আমাদের দুই ভাই–বোনকে সমান সুযোগ-সুবিধা, সমান অধিকার দিয়ে বড় করেছেন। তাঁর সমসাময়িক অনেকেই যখন মেয়েসন্তানকে অধিক লেখাপড়া করানো বা মেয়ের জন্য অর্থ খরচ করাকে অপচয় মনে করতেন, বাবা সেখানে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য না করে আমার জন্য সর্বোচ্চটুকু করেছেন। আমাদের দুই ভাই-বোনকে সমান চোখে দেখেছেন। কেবল আর্থিক সহযোগিতা নয়, সন্তানের প্রতি একজন বাবার মানসিক সমর্থন না থাকলে কোনো সন্তানই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বিশেষ করে, আমাদের সমাজের মেয়েরা।

আজ আমি যা বা যতটুকু, তার পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই আমার বাবার। স্কুলজীবনের একটা ঘটনার কথা মনে আছে। নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন। সে বছর অপ্রত্যাশিতভাবে আমার পরীক্ষার ফল খারাপ হলো। বাবা আমাকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলেন; কিন্তু বললেন না তেমন কিছু। বাবার এই নিশ্চুপ থাকাই আমার ভেতর অন্য রকম শক্তি তৈরি করল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, ভালোভাবে পড়াশোনা করব যেন আমার জন্য বাবার মন আর কখনোই বিষণ্ন না হয়। সেই থেকে চেষ্টা শুরু।

স্কুলে পড়ার সময় একজন আমার বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, মেয়েকে আর্টসে পড়াও, খরচ কম হবে। তারপর কোনো রকমে মাধ্যমিক পাস করলে বিয়ে দিয়ে দাও। মেয়ে মানুষকে এত পড়িয়ে কী লাভ! কিন্তু বাবার চোখে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। ছোটবেলা থেকেই সেটা বুঝতে পারতাম। তবে বাবা কিন্তু কোনো দিন তাঁর স্বপ্নের ভার আমার ওপর চাপিয়ে দেননি। আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাইলাম। বাবা আমাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করালেন। মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলাম, তিনি বিনা বাক্যে সমর্থন দিলেন। বিভিন্নজন বাবাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ানোর জন্য পরামর্শ দিতেন। কিন্তু আমি পড়তে চাইলাম লোকপ্রশাসন। বাবা আমার ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিলেন। লোকপ্রশাসন বিষয়ে ভালো ফল করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। আমার জীবনে আমার বাবার প্রভাবই সবচেয়ে বেশি

তানিয়া আফরিন : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

আরও পড়ুনআমার পড়াশোনার জন্য বাবা জমি বিক্রি করেছেন, হালের গরু বিক্রি করেছেন, ঋণ নিয়েছেন, তবু আমাকে হারতে দেননি১৪ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ব ব ন র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় মা–ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

কুমিল্লায় মাদক কারবার বন্ধের চেষ্টা করায় মা ও ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। আজ সোমবার সকালে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বসন্তপুর গ্রামে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।  

নিহত ব্যক্তিরা হলেন বসন্তপুর গ্রামের প্রয়াত আজগর আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৬৫) এবং তাঁর ছোট ছেলে কামাল হোসেন (৩৫)। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন (৪০) পলাতক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, বিল্লাল হোসেন একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আজ সকালে বিল্লাল হোসেন তাঁর বাড়িতে মাদক নিয়ে প্রবেশ করেন। তখন ছোট ভাই কামাল তাঁকে মাদক নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে বিল্লাল তাঁর ঘরে ঢুকে ছুরি নিয়ে ছোট ভাই কামালকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এ সময় মা রাহেলা বেগম বাধা দিতে গেলে তাঁকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলেই কামাল নিহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা রাহেলা বেগমও মারা যান।

আজ বেলা একটার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুজনের মরদেহ উদ্ধার করার কার্যক্রম চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ছোট ভাই মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁদের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়েও দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিল্লালের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি বিল্লাল হোসেনকে আটক করার চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ