কমিশনারের অপসারণের দাবিতে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। একই দাবিতে তিন কিলোমিটার দূরে খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শনে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা।

আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারকে সরাতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা, খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি২৬ জুন ২০২৫

কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আজ শনিবার তৃতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে আন্দোলনকারীরা কেএমপির সদর দপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীদেরও অংশ নিতে দেখা গেছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। এতে খানজাহান আলী সড়কের সুন্দরবন কলেজ থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুনসেই এসআই গ্রেপ্তার, কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজও বিক্ষোভ২৬ জুন ২০২৫

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাসকে আটকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে পুলিশ পরে তাঁকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুই দিন কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্তকে ছাড়া হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা সদর থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ আরও দুটি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসআই সুকান্তকে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনারের অপসারণে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শনিবার দুপুর ১২টায় সেই সময়সীমা শেষ হয়। এরপর বিকেলে আবার কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘পুলিশ কমিশনার জুলফিকার, আস্ত একটা স্বৈরাচার’, ‘লড়তে হবে, লড়তে হবে, এই লড়াই জিততে হবে’ এমন নানা স্লোগান দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরের অন্যতম মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, ‘খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। মানুষ নিজেদের অনিরাপদ মনে করছে। পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’

এদিকে বেলা পৌনে ছয়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শন করতে আসেন। সোয়া ছয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক আটকে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শন করতে আসেন। এ খবর পেয়ে কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে কর্মসূচিতে থাকা দেড় থেকে দুই শ আন্দোলনকারী প্রেসক্লাবের সামনের স্যার ইকবাল রোডে এসে প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক আটকে অবস্থান নেন।

শফিকুল আলমের উদ্দেশে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের কোনো খোঁজ নেন নাই। কথা যদি বলতে হয় আমাদের ২০০ জনের সঙ্গে বলেন, দুই–পাঁচজন প্রেসক্লাবের ওপরে গিয়ে কথা বলব না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আপনি প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টা জানান। তা না হলে আপনাকে আমরা এখান থেকে বের হতে দেব না।’

পরে প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সন্ধ্যা পৌনে আটটার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রেস সচিব। রাত আটটা পাঁচ মিনিটে বৈঠক শেষে সেনা ও নৌ–বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে যান শফিকুল আলম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

এস আই সুকান্ত দাশ গ্রেপ্তার

পুলিশের এসআই সুকান্ত দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি যৌথ দল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকা থেকে এসআই সুকান্ত দাসকে মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় স্থানীয়রা। পরে রাতেই তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

সুশান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বুধবার দুপুর থেকে কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রাত সাড়ে ৯টায় ছাত্ররা চলে গেলে তালা ভেঙে কার্যালয় থেকে বের হন পুলিশ কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ফের কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্ররা।

খুলনা সদর থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসআই সুকান্তের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন ও গণগ্রেপ্তার চালানোর অভিযোগ ছিল। অভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। অভ্যুত্থানের পর সুকান্তকে প্রথমে ঢাকায়, পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলী করা হয়।

কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সদর থানায় দায়ের হওয়া একটি বাড়ি ভাঙচুর মামলায় সুকান্তকে গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে। একজন সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুসরণ করতে সময় লেগেছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার জানান, আমাদের প্রধান দাবি মানা হয়েছে। আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেএমপি কমিশনারকে না সরালে খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি
  • রাজধানীতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী নিহত
  • কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ
  • পুলিশের এসআই সুকান্ত দাসকে কারাগারে প্রেরণ  
  • সেই এসআই গ্রেপ্তার, এবার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে কেএমপি ঘেরাও
  • সেই এসআই গ্রেপ্তার, কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজও বিক্ষোভ
  • আলোচিত এসআই সুকান্ত অবশেষে গ্রেপ্তার
  • এসআই সুকান্ত দাশ গ্রেপ্তার
  • এস আই সুকান্ত দাশ গ্রেপ্তার