কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আবার বিক্ষোভ
Published: 28th, June 2025 GMT
কমিশনারের অপসারণের দাবিতে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। একই দাবিতে তিন কিলোমিটার দূরে খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শনে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারকে সরাতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা, খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি২৬ জুন ২০২৫কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আজ শনিবার তৃতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে আন্দোলনকারীরা কেএমপির সদর দপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীদেরও অংশ নিতে দেখা গেছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। এতে খানজাহান আলী সড়কের সুন্দরবন কলেজ থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুনসেই এসআই গ্রেপ্তার, কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজও বিক্ষোভ২৬ জুন ২০২৫প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাসকে আটকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে পুলিশ পরে তাঁকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুই দিন কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্তকে ছাড়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা সদর থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ আরও দুটি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসআই সুকান্তকে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনারের অপসারণে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শনিবার দুপুর ১২টায় সেই সময়সীমা শেষ হয়। এরপর বিকেলে আবার কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘পুলিশ কমিশনার জুলফিকার, আস্ত একটা স্বৈরাচার’, ‘লড়তে হবে, লড়তে হবে, এই লড়াই জিততে হবে’ এমন নানা স্লোগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরের অন্যতম মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, ‘খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। মানুষ নিজেদের অনিরাপদ মনে করছে। পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’
এদিকে বেলা পৌনে ছয়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শন করতে আসেন। সোয়া ছয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক আটকে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শন করতে আসেন। এ খবর পেয়ে কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে কর্মসূচিতে থাকা দেড় থেকে দুই শ আন্দোলনকারী প্রেসক্লাবের সামনের স্যার ইকবাল রোডে এসে প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক আটকে অবস্থান নেন।
শফিকুল আলমের উদ্দেশে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের কোনো খোঁজ নেন নাই। কথা যদি বলতে হয় আমাদের ২০০ জনের সঙ্গে বলেন, দুই–পাঁচজন প্রেসক্লাবের ওপরে গিয়ে কথা বলব না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আপনি প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টা জানান। তা না হলে আপনাকে আমরা এখান থেকে বের হতে দেব না।’
পরে প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সন্ধ্যা পৌনে আটটার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রেস সচিব। রাত আটটা পাঁচ মিনিটে বৈঠক শেষে সেনা ও নৌ–বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে যান শফিকুল আলম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে আরো দুই মামলায় আসামি ৫৫২
আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দুটি মামলায় ১৫২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় জেলায় মোট চারটি মামলা দায়ের হলো।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিক ও কাশিয়ানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এ দুটি মামলা দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, গত ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ ২৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, কাশিয়ানী থানার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কাশিয়ানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ জনসহ মোট ২৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ দুটি মামলায় ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ২৮৫ জনসহ মোট ৩৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ দুই মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহরের গণপূর্ত অফিসের গাড়িতে ও সদর উপজেলার উলপুরে গ্রামীণ ব্যাংক অফিসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া জেলার কয়েকটি স্থানে সড়কে গাছ ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।
ঢাকা/বাদল/এস