আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল লন্ডন বৈঠকের পর সেটা কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছিল; কিন্তু দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই নতুন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংশয় তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। বিশেষ করে ভোটের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না দেওয়ায় এ নিয়ে জল্পনাকল্পনা বাড়ছে।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লন্ডন বৈঠকের কোনো প্রতিফলন নির্বাচনের কমিশনের কার্যক্রম তারা দেখছেন না। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এটাকে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছে বিএনপি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তাঁরা দীর্ঘ সময় একান্তে কথা বলেন। বিএনপির নীতি–নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ধারণা করেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার যমুনায় এই বৈঠকে সিইসিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর কথা বলবেন; কিন্তু সরকারের দিক থেকে এই বৈঠককে শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো বক্তব্য দেয়নি। ফলে বিএনপি মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সিইসিকে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি। যার ফলে প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির সাক্ষাতে কী আলাপ হয়েছে, তা পরিষ্কার করার আহ্বান জানায় বিএনপি। এ বিষয়ে গত শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি উভয় পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হই।’

আরও পড়ুননির্বাচন বিলম্বিত বা না হওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ৯ ঘণ্টা আগেযারা স্থানীয় নির্বাচন ও আনুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি তুলছে, তাদের একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে; হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা অথবা নির্বাচন না হওয়া।সালাহউদ্দিন আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারের ওই সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংস্কারপ্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সিইসির কাছে জানতে চেয়েছেন। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো আলোচনার কথা জানা যায়নি।

১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁদের কাছে এখন পর্যন্ত সরকারের দিক থেকে লন্ডন বৈঠকের ওই ঘোষণার কোনো প্রতিফলন নেই; বরং রাজনীতিতে নতুন নতুন কিছু ইস্যু তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছেন। এর মধ্যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা এবং আগামী নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি জোরদার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টা-সিইসির কী আলাপ হলো, পরিষ্কার করার আহ্বান সালাহউদ্দিনের২৭ জুন ২০২৫প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন সরক র র ব এনপ র নত ন ক

এছাড়াও পড়ুন:

দেশ গড়তে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’

সারা দেশে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। 

রবিবার (২৯ জুন) সকালে ঢাকার বাংলামোটরে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এ কর্মসূচি ঘোষণার পর জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। 

তারা লেখেন, দেশ গড়তে “জুলাই পদযাত্রা। আমরা আসছি ৬৪ জেলায়, আপনাদের দুয়ারে।

হাসনার পৃথক এক পোস্টে কর্মসূচির বিস্তারিত জানান। সেখানে তিনি লেখেন– ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই: দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা। ১৬ জুলাই: ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’ উপলক্ষে দোয়া-মাহফিল ও স্মরণসভা হবে। ৩ অগাস্ট: শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ ও ৫ অগাস্ট: ‘ছাত্র জনতার মুক্তি দিবস’ উদযাপন করা হবে। 

তিনি বলেন, “বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে জনতার দুয়ারে যাবে জুলাইয়ের বার্তা। বাংলাদেশ পুনর্গঠনের আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশ পদযাত্রা শেষে শহীদ মিনারে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ হবে। আমরা আসছি ৬৪ জেলায়। শহর থেকে গ্রামে। শহীদের কবরের কাছে। 
আবু সাঈদ মুগ্ধ 
শেষ হয়নি যুদ্ধ...”

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উদযাপন করবো। দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের অনেক প্রাপ্তি যেমন আছে, তেমনি অপ্রাপ্তিও রয়েছে। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক ৩৬ দিন স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে পদযাত্রার সূচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন,“কর্মসূচির নাম রাখা হয়েছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। 

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ