জগতে মায়ের মতো আপন আর কেউ নেই। দিন শেষে মেয়ের আশ্রয়স্থল মা। মেয়ে যেমন স্কুলে সারা দিন কী ঘটল, তা মাকে না বলা পর্যন্ত শান্তি পায় না, তেমনি মা-ও অফিসে বা বাসায় কী হয়েছে, তা মেয়েকে না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পান না। এমনটাই বলছিলেন এক মা, যাঁর মেয়ের সঙ্গে এক দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক। তিনি বলেন, ‘স্কুলের গল্প আমাকে বলে শেষ না করা পর্যন্ত ওর স্কুল ড্রেসও খোলা হয় না।’

মা-মেয়ের গল্প নিয়ে গতকাল শনিবার বিকেলে এক বিশেষ আয়োজন করে কিশোর আলো। আয়োজনে সহযোগিতা করে এসিআই সুপার ড্রাই। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘মা-মেয়ের গল্প’ অনুষ্ঠানটি হয়। এখানে মা-মেয়ে নিজেদের না–বলা কথা শেয়ার করেন। পাশাপাশি পুষ্টিবিদ, মনোবিদ ও শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

ফারহানা রুমী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। নিজের শিক্ষক পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে ‘মা’ বলতে বেশি ভালো লাগে তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছি। ওদের সঙ্গে মিলেমিশে আমি দুষ্টুমিগুলো করি। এমনকি দুষ্টুমি করে আমার মায়ের কাছে ধরা পড়ে তিনজনই বকা খাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা খুব জরুরি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে মা-মেয়ে উভয়ের জন্যই তা লাভজনক হয়।’

মা-মেয়ের গল্প অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মা ও মেয়েরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র গল প

এছাড়াও পড়ুন:

‘শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, দেখা যায় খালি চোখেও’

শৈশবে আদিলবেক কোজিবাকভের মা ফ্রিজে সব সময় একটি কৌটায় ক্যাভিয়ার (স্টারজন মাছের ডিম) রাখতেন। প্রতিদিন রুটি আর মাখনের ওপর এক চামচ করে ক্যাভিয়ার দিয়ে কোজিবাকভ আর তাঁর ভাইবোনদের খাওয়াতেন। মা বিশ্বাস করতেন, ক্যাভিয়ার তাঁদের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।

কোজিবাকভের বয়স এখন ৫১ বছর। তিনি একজন বাস্তুতন্ত্রবিদ। বড় হয়েছেন পশ্চিম কাজাখস্তানের আকতাউ শহরে। কাস্পিয়ান সাগরের তীরে শহরটির অবস্থান।

কোজিবাকভ বলেন, ক্যাভিয়ারের স্বাদটা লবণাক্ত ছিল, আর তাতে সামুদ্রিক গন্ধ পাওয়া যেত।

তবে ৪০ বছর পর ওই পারিবারিক রীতি এখন তাঁর কাছে শুধুই স্মৃতি। আকতাউ শহরের দোকানে এখন আর প্রাকৃতিক ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত মাছ ধরা ও তাদের আবাসস্থল কমে যাওয়ার কারণে স্টারজন মাছ এখন বিপন্নপ্রায়। শিগগিরই হয়তো সাগরটাও হারিয়ে যাবে।

রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান ও আজারবাইজানের মাঝে কাস্পিয়ান সাগরের অবস্থান। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত জলাশয়। রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে চীন থেকে ইউরোপ যাওয়ার দ্রুততম পথ এবং তেল-গ্যাসের একটি বড় উৎসও এটি।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শতাব্দীর শেষ নাগাদ কাস্পিয়ান সাগরের পৃষ্ঠভাগের উচ্চতা ১৮ মিটার পর্যন্ত কমতে পারে ও সাগরের ৩৪ শতাংশ পৃষ্ঠতল হারিয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যদি ৫ থেকে ১০ মিটার পানিও কমে যায়, তাহলে কাস্পিয়ান সিল ও স্টারজন মাছের আবাসস্থলসহ সেখানকার বাস্তুব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কোজিবাকভ বাস্তুতন্ত্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক পরামর্শক কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘এই সাগর যে ছোট হয়ে যাচ্ছে, তা বোঝার জন্য গবেষণার দরকার নেই। খালি চোখেই এটা দেখা যায়।’

রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান ও আজারবাইজানের মধ্যে কাস্পিয়ান সাগরের অবস্থান। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত জলাশয়। রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে চীন থেকে ইউরোপ যাওয়ার দ্রুততম পথ এবং তেল-গ্যাসের একটি বড় উৎস এটি।

বছরের পর বছর রাশিয়া ভলগা নদীতে অনেক বাঁধ নির্মাণ ও পানি সংরক্ষণাগার তৈরি করেছে এবং কৃষি ও শিল্পকারখানার জন্য এর পানি ব্যবহার করেছে। এতে কাস্পিয়ান সাগরে এখন অনেক কম পানি পৌঁছাচ্ছে।আদিলবেক কোজিবাকভ, বাস্তুতন্ত্রবিদ

অনেকে আশঙ্কা করছেন, কাস্পিয়ান সাগরের পরিণতি হয়তো পার্শ্ববর্তী আরাল সাগরের মতো হবে। কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের মাঝে আরাল সাগর। ১৯৬০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তুলার খেত সেচ দিতে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার করায় আরাল সাগর শুকাতে শুরু করে। এসব নদী থেকে আরাল সাগরে পানি আসত। শুরুতে আরাল সাগরের আয়তন যা ছিল, সে তুলনায় এখন আছে মাত্র ১০ শতাংশ। আরালের পানি কমে যাওয়ার কারণে স্থানীয় বাস্তুব্যবস্থা ও মানুষের ওপর খারাপ প্রভাব পড়েছে।

কাস্পিয়ান সাগরের সমস্যা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়নি।

কাস্পিয়ান সাগরের পানির ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই আসে রাশিয়ায় অবস্থিত ভলগা নদী থেকে। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম নদী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার পানি ব্যবস্থাপনার কারণে সাগরের পানি কমে যাচ্ছে।

আদিলবেক কোজিবাকভ বলেন, ‘বছরের পর বছর রাশিয়া ভলগা নদীতে অনেক বাঁধ দিয়ে ও পানি সংরক্ষণাগার তৈরি করেছে। কৃষি ও শিল্পকারখানার জন্য এর পানি ব্যবহার করছে। এতে এখন কাস্পিয়ান সাগরে অনেক কম পানি পৌঁছাচ্ছে।’

আদিলবেক আরও বলেন, ‘এক শ বছর আগে স্টারজন মাছ অনেক বছর বেঁচে থাকত, কেউ সেগুলো ধরত না। তখন এগুলো এত বড় হতো যে এখন শুধু পুরোনো ছবিতেই সেগুলো দেখা যায়। শিকারিদের দাপট আর তেল কোম্পানির দূষণের কারণে স্টারজন মাছ বিপন্ন হয়ে গেছে।’

রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান ও আজারবাইজানের মধ্যে কাস্পিয়ান সাগরের অবস্থান

সম্পর্কিত নিবন্ধ