জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের কথা শুনতে জুলাইজুড়ে দেশের সব জেলায় পদযাত্রা করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে আগামী ১ থেকে ৩০ জুলাই দেশের সব জেলায় জুলাই পদযাত্রা হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা”। ১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শুরু হবে। এই সময়ে আমরা শহীদ পরিবারদের কাছে যাব। তাঁদের কবর জিয়ারত করব। আহত যোদ্ধা ও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র–জনতার সঙ্গে কথা বলব। জুলাই নিয়ে তাঁদের আকাঙ্ক্ষার কথা শুনব। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা একসঙ্গে এই পদযাত্রা করবে।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা জুলাই পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি পুরো পদযাত্রা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম কমিটির আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়কে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কোন রুটে, কোন জেলায় পদযাত্রা হবে, তার বিস্তারিত আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়ে দেব।’

এ ছাড়া ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র–জনতার পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ এবং ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার মুক্তি দিবস উদ্‌যাপনেরও ঘোষণা দিয়েছে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী ১৬ জুলাই যেদিন আবু সাঈদ শহীদ হন, সেদিনকে বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এদিন সারা দেশে শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ করার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এক দফা ঘোষণা হয়েছিল। চলতি বছর ওই দিনটিতে শহীদ মিনারে ছাত্র–জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র সরকারের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা করতে পারেনি। ইতিমধ্যে সরকারের দেওয়া ৩০ কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। তাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি করা হবে। জুলাই পদযাত্রায় সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার কথা শুনে আমরা আগস্টে জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ করব।’

ছাত্র–জনতার মুক্তি দিবস উদ্‌যাপনের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার মুক্তি দিবস উদ্‌যাপন করব। এদিন শেখ হাসিনা পালানোর মাধ্যমে গণ–অভ্যুত্থান প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতা ও মুক্তি লাভ করেছিল। ফলে সে মুক্তি উদ্‌যাপনে আমরা মুক্তি দিবস উদ্‌যাপন করব।’
দলের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র দিলে সরকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম  বলেন, ‘সরকার আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ দেওয়ার কথা বলেছে। ঐকমত্য কমিশনে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সে প্রক্রিয়ায় আমরা অংশ নিচ্ছি। আমরা আশা করব, সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জুলাই সনদ রচনা করবে। যেখানে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখাটি উল্লেখ থাকবে।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, সরকার বারবার জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলেও দিতে পারেনি। সরকার যেহেতু ব্যর্থ হয়েছে, তাই আর কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ছাত্র–জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। এটা ছাত্র–জনতার পক্ষ থেকেই হবে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, কথা বলে তাঁদেরও আহ্বান জানানো হবে। এতে কেউ যদি সম্মত না হয়, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।

জুলাই পদযাত্রায় কোনো বাধা বা হামলার আশঙ্কা করছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এ ধরনের কিছু হলে তাঁদের প্রস্তুতি আছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, অভিযোগ নিয়ে বর্তমানে যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন বা আগের যে এক্সিকিউটিভ কমিটি ছিল, তাঁরা বিষয়গুলো দেখছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম আহবায়ক অনিক রায় উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই পদয ত র ছ ত র জনত র আগস ট এনস প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ