কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি আজও চলছে। দ্বিতীয় দিনের মত চলা কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের বেশিরভাগ কক্ষেই তালা ঝুলছে। ফলে ৩ হাজার ৬৮০ একক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করা যায়নি। তিনটি জাহাজে এসব পণ্য রপ্তানি করার কথা ছিল।

রপ্তানি করতে না পারা এসব পণ্যের বেশিরভাগই পোশাকশিল্প মালিকদের। এক দিনে এত বেশিসংখ্যক কনটেইনার রপ্তানি না হওয়া রেকর্ড। এটি আগে কখনোই হয়নি। রপ্তানি না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে এসব পণ্য এখন আর সময়মতো পৌঁছানো যাবে না। কবে নাগাদ এসব কনটেইনার জাহাজে তোলা যাবে; বলা যাচ্ছে না সেটিও। কারণ, কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। 

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তারা না আসায় ডিপোতে শুল্কায়ন কার্যক্রম হচ্ছে না। এজন্য কোনো কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। আজ রোববার বন্দর জেটিতে থাকা তিনটি জাহাজ রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে গতকাল শনিবার ও আজ কোনো কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠাতে পারিনি আমরা। তিনটি জাহাজ এখন অলস বসে আছে বন্দরে। 

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। সেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে রাখা হয় সব পণ্য। পরে বুকিং অনুযায়ী বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয় রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার।’

রুহুল আমিন সিকদার আরও জানান, এই তিন জাহাজের মধ্যে ‘এএস সিসিলিয়া’তে ৫৬৪ একক কনটেইনার ছিল। জাহাজটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে এসব কনটেইনার ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা। একইভাবে ‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ নামে আরেকটি জাহাজে ১ হাজার ৪৬০ একক কনটেইনার এবং ‘হং ডা জিন-৬৮’ নামের অন্য জাহাজটিতে ১ হাজার ৬৬৬ একক কনটেইনার রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল।

‘এএস সিসিলিয়া’ জাহাজটি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাহাজ কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির। এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার আসতে না পারায় জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি। একইভাবে বন্দর ছাড়তে পারেনি আরও দুইটি জাহাজ।’

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এনবিআর বিলুপ্তি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন। গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশটি সংশোধন করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এর পর ২২ জুন থেকে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সারাদেশে এনবিআরের কর, মূসক ও শুল্ক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করেন। আজ সোমবারও চলছে কর্মসূচি।

আন্দোলনের ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কারণ, বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নকারী চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশের সবচেয়ে বড় স্টেশন। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ এই বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০০ কোটি টাকা শুল্ককর আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত ক স টমস র কর ম জ হ জট

এছাড়াও পড়ুন:

সুরা নাস: বাংলা অর্থসহ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সুরা নাস কুরআনের ১১৪তম এবং শেষ সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ বলে মাক্কী সুরা নামে পরিচিত। এতে মোট ৬টি আয়াত রয়েছে। এই সুরাটি মানুষকে শয়তানের প্রতারণা ও মন্দ প্রভাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শেখায়। এটি ‘মু’আওয়িযাতাইন’ (দুটি আশ্রয়প্রার্থী সুরা: সুরা ফালাক ও সুরা নাস)–এর একটি।

সুরা নাসের বাংলা উচ্চারণ, অর্থ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো।

বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

উচ্চারণ: কুল আউজু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন নাস। ইলাহিন নাস। মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস। আল্লাজি ইউওয়াসউইসু ফি সুদুরিন নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

অর্থ: বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি মানুষের রবের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের উপাস্যের কাছে। মন্দ প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা থেকে, যে পিছনে লুকায়। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।

আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সুরা নাসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সুরা নাস মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেয়। এই সুরায় আল্লাহকে তিনটি গুণে সম্বোধন করা হয়েছে:

রব্বিন নাস (মানুষের রব): আল্লাহ মানুষের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।

মালিকিন নাস (মানুষের অধিপতি): তিনি মানুষের উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

ইলাহিন নাস (মানুষের উপাস্য): তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য।

সুরাটি শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রার্থনায় জোর দেয়। কেননা, শয়তান ‘ওয়াসওয়াস’ (কুমন্ত্রণা) দেয় এবং ‘খান্নাস’ (পিছনে লুকিয়ে থাকে)। এই কুমন্ত্রণা জিন ও মানুষ উভয়ের থেকে আসতে পারে, যা মানুষের অন্তরে মন্দ চিন্তা ও পাপের প্রতি প্ররোচিত করে।

হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়তেন, হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে মুছে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)

বোঝা যায়, সুরা নাস পড়া শয়তানের প্রভাব ও অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।

আরও পড়ুনসুরা কাহাফের ৪ কাহিনিতে সফলতার ৪ শিক্ষা২০ জুলাই ২০২৫সুরা নাসের ফজিলত

সুরা নাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.)–কে যখন জাদু করা হয়, তখন সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয় এবং তিনি এই দুই সুরা পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং আরোগ্য লাভ করেন। (সুনান নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৩৭)

এই সুরা পড়া শয়তানের কুমন্ত্রণা, জাদু, হিংসা এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, “সুরা নাস মানুষকে শয়তানের মানসিক ও আধ্যাত্মিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।” (তাফসির ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ৮/৫৩৬, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০০)।

সুরা নাস একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সুরা, যা মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আধুনিক জীবনে, যখন আমরা প্রতিনিয়ত নানা প্রলোভন ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হই, তখন এই সুরা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করতে পারে। এই সুরা নিয়মিত পাঠ, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর আগে, মুমিনের জীবনে শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসে।

আরও পড়ুনসুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত০৮ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ