পাবনার ঈশ্বরদীতে বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতির পথে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান ও সহায়ক ট্রান্সফর্মারগুলোর কমিশনিং সম্পন্ন করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে চলেছে। রূপপুর প্রকল্পে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রসাটম শনিবার বিকেলে এক প্রেস নোটের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

প্রকল্পের এতমস্ত্রয় এক্সপোর্টের বাংলাদেশ প্রকল্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি ডেইরি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি সংশ্লিষ্ট সব সমন্বিত প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার ফল। কঠিন লজিস্টিক্স ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সবাই চমৎকারভাবে কাজটি সম্পন্ন করেছে। ইউনিটির নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্যভাবে চালুর ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। 

প্রেসনোটে বলা হয়েছে, প্রধান সেটআপ ট্রান্সফর্মারগুলোর কাজ হলো টার্বাইন জেনারেটরে উৎপাদিত ২৪ কেভি বিদ্যুৎকে ৪০০ কেভিতে রূপান্তর করা, যা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি ট্রান্সফর্মারের ক্যাপাসিটি ১ হাজার ৫৯৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত, যা প্রথম ইউনিটে উৎপাদিত ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চেয়েও বেশি। এর ফলে নিরবিচ্ছিন্ন ও প্রয়োজনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা সম্ভব হবে। প্রতিটি ট্রান্সফর্মার ফেজের ওজন প্রায় ৪০০টন এবং এগুলোর সংযোগ সম্পন্ন করতে ব্যবহৃত হয়েছে ১৫০ কিলোমিটারের অধিক ক্যাবল। 

এছাড়াও ইউনিটটির অভ্যন্তরীণ সব সিস্টেমে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক ট্রান্সফর্মারগুলোর কমিশনিংও সম্পন্ন হয়েছে। দ্বৈত মোডে কাজ করতে সক্ষম এই ট্রান্সফর্মারগুলো জাতীয় গ্রিড এবং জেনারেটর উভয় উৎস থেকেই বিদ্যুৎ নিতে পারবে। ইতোপূর্বে অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলোর জন্য ব্যবহৃত হতো স্ট্যান্ডবাই ট্রান্সফর্মার। 

রসাটম জানায়, অচিরেই রূপপুর প্রকল্পে ‘হট মিডিয়া টেস্ট’সহ বেশকিছু নিরাপত্তাজনিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। কোনো কোনো পরীক্ষার সময় বাষ্প নির্গমনের ফলে জনগনের কাছে অপ্রত্যাশিত শব্দ শোনা যাবে। তবে, এটি পরীক্ষারই অংশ এবং পূর্বপরিকল্পিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এতে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। পুরো প্রক্রিয়াটি নিরাপদ। রসাটম নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে, তাই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরাপত্তা চাহিদা পূরন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা। 

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দু’টি ৩ প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রসাটমের প্রকৌশল বিভাগ মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জেনারেল কন্ট্রাকটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন ট র ন সফর ম র প রকল প র জন য উৎপ দ ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

১০ লাখ টাকা সরকারি ফান্ডিং পেল রাবি শিক্ষার্থীদের স্টার্টআপ

আইসিটি বিভাগের অধীন আইডিইএ প্রকল্প থেকে ১০ লাখ টাকার প্রি-সিড ফান্ডিং পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উদ্যমী তরুণদের গড়া উদ্ভাবনী স্টার্টআপ ‘বিকো অল ইন ওয়ান’।

রবিবার (২৯ জুন) ঢাকা আইসিটি টাওয়ারে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঢাকার বাইরে থেকে এমন একটি অর্জন শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং প্রমাণ করে, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের আলো এখন সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে।

‘বিকো অল ইন ওয়ান’ একটি অনলাইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একত্র হয়েছে দক্ষতা-ভিত্তিক অনলাইন শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গাইড, লোকজ পণ্য ও ই-কমার্স সেবা। এছাড়া বাংলাদেশের ঐতিহ্যভিত্তিক কনটেন্ট, ইন্টার্নশিপ ও চাকরির সুযোগসহ সব এক ছাতার নিচে। এর মূল স্লোগান ‘স্বপ্নকে উদ্ভাবন কর’।

আরো পড়ুন:

‘ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ প্রতিরোধ হলে প্রাণিজ আমিষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা সম্ভব’

প্রথমবারের মতো ডিনস ও মেরিট অ্যাওয়ার্ড দিল বেরোবি

‘বিকো অল ইন ওয়ান’ এর প্রতিষ্ঠাতা রাবির ফোকলোর বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. আবু রাকেশ জয় বলেন, “এই ফান্ড আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। আমরা প্রমাণ করতে চাই—ঢাকার বাইরেও আন্তর্জাতিক মানের কিছু গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও প্রতিভাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা।”

এ বিষয়ে ‘বিকো অল ইন ওয়ান’ এর টেকনোলজি শাখার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “বিকো অল ইন ওয়ান শুধুমাত্র একটি স্টার্টআপ নয়, এটি আমাদের স্বপ্ন, পরিশ্রম আর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিছু করার সাহস। আমরা চাই এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যেখানে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একসাথে এগিয়ে যায়।”

তিনি বলেন, “এই অর্থায়ন আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে আরো শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। আশা করি, রাজশাহীর মতো শহর থেকেও উদ্ভাবনের নতুন গল্প লেখা যাবে—যা গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করবে।”

তিনি আরো জানান, এই অর্জন শুধু একটি স্টার্টআপের সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা। সাহস, চিন্তা আর দলগত প্রচেষ্টা থাকলে, রাজশাহীর মতো শহর থেকেও শুরু হতে পারে বিশ্বজয়ের যাত্রা।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ