কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ধর্ষণের শিকার’ ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।

ওই ঘটনা নিয়ে ‘দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা’ শিরোনামে আজ প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে অপর একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী আজ রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

পরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ভুক্তভোগী নারীর ভিডিও–ছবি কেন সরানোর নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সামাজিক মাধ্যম থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও–ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে ও আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে শুনেছেন। এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি আগামী ১৪ জুলাই আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী। ওই নারী বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহি ভেঙে পড়েছিল: হাইকোর্ট

এক দশকের বেশি সময় আগে পল্লবীতে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন ওরফে জনির মৃত্যু হয়। তাঁকে আটক, থানাহাজতের পরিবর্তে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে রাখা এবং আটকে রেখে নির্যাতন সম্পূর্ণ বেআইনি। নির্দিষ্ট এ ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান, তদারকি ও জবাবদিহি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। নিরপরাধ একজন যুবকের মূল্যবান জীবন ও অন্যদের নির্যাতন থেকে সুরক্ষায় পুলিশ বিভাগ নৈতিক দায় এড়াতে পারে না বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন। হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে জনির মৃত্যুতে করা মামলায় তিন আসামির আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ দ্বিতীয় দিনে রায় ঘোষণা শেষ করেন আদালত।

ঘটনা, পারিপার্শ্বিকতা ও সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, নিরপরাধ যুবকের মূল্যবান জীবন ও অন্যদের নির্যাতন থেকে সুরক্ষায় পুলিশ বিভাগ তাদের নৈতিক দায় এড়াতে পারে না। যেখানে জনিসহ চারজনকে হেফাজতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পুলিশ বিভাগ বা সরকার ভুক্তভোগীর (জনি) বিধবা মা, বিধবা স্ত্রী এবং দুই সন্তানের পুনর্বাসনের জন্য এগিয়ে আসতে পারে।

২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করা হয়। জনিকে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট মামলা করা হয়। এটা ওই আইনে করা প্রথম কোনো মামলা। এ মামলায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ।

বিচারিক আদালতের রায়ে পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান, এএসআই রাশেদুল হাসান ও কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর দুই আসামি পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) সুমন ও রাসেলের ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিন আসামি হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। তাঁরা হলেন জাহিদুর, রাশেদুল ও রাসেল। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, বিচারিক আদালতে দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামরুজ্জামান শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজা ভোগ করে বেরিয়েছেন।

তিন আসামির পৃথক আপিলের ওপর একসঙ্গে গত ৯ জুলাই হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ৭ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১০ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেন। ১০ আগস্ট রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত, যা আজ শেষ হয়।

এক আসামির যাবজ্জীবন বহাল, অন্যজনের ১০ বছর, খালাস এক

হাইকোর্ট রায়ে রাজধানীর পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন। বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পল্লবী থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসানের সাজা পরিবর্তন করে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জনির মায়ের অনুকূলে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাসেলকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

সবই বেআইনি: হাইকোর্ট

রায় ঘোষণার এক পর্যায়ে আদালত বলেন, এ রকম সাধারণত হয় না। পৃথিবীর সব দেশেই হেফাজতে দু–একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দুর্ধর্ষ অপরাধী পুলিশ ধরে, যেমন হাজার কোটি টাকার মাদকের কারবারি। তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়ায় মারা যেতে পারে। এটাও অপরাধ। এ ক্ষেত্রে মনোভাব থাকে যে অপরাধী। নিরপরাধ লোকদের ধরবেন, আইনগত কারণ ছাড়া তাদের হাজতখানায় না রেখে আরেক জায়গায় নিয়ে নির্যাতন করা সবই বেআইনি। একজন মানুষকে গ্রেপ্তারের পর হাজতখানায় রাখতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে (জনির) পুলিশ বিভাগ কিছু করল না, মিথ্যা মামলা দায়ের করে।

নথিপত্র, সাক্ষী ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করে রায়ে আদালত বলেন, ধারাবাহিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারণে জনির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান, তদারকি ও জবাবদিহি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল—নির্দিষ্ট এ ঘটনার ক্ষেত্রে। জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে অপ্রয়োজনীয় ও বেআইনিভাবে জনি ও তাঁর ভাই রকিসহ অন্যদের আটক করা হয়। যেখানে ভুক্তভোগীর (জনির) ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার অতীত কোনো রেকর্ড নেই। বেআইনিভাবে আটক করে তাঁদের হাজতখানার পরিবর্তে থানার প্রথম তলায় (দ্বিতীয়) রাখা হয়। এভাবে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার চোখের সামনে তাঁদের নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। দুই ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। কোড–বিধি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চালানো অমানবিক ও নিষ্ঠুর এ ঘটনার বিষয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো রিপোর্টও করেননি। গুরুত্বপূর্ণ এ ঘটনার পর সকালে পুলিশ মামলা করে। তাতে দুই পক্ষের মারামারির কারণে ভুক্তভোগী (জনি) আহত হয়ে মারা যান উল্লেখ করা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি অপরাধী পুলিশ সদস্যদের আড়াল করার চেষ্টা, যেখানে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদারকি ও জবাবদিহি প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল।

আদালতে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মো. সরওয়ার আহমেদ এবং আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও নাজমুল করিম শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার শুনানি করেন। বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম। রায় ঘোষণার দুই দিন পুরোটা সময় মামলার বাদী নিহত ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার প্রথম আলোকে বলেন, আসামি রাসেলকে খালাস দেওয়া হয়েছে, যা যুক্তিযুক্ত নয়। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়া সাপেক্ষে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুদকের নতুন আইনজীবী শাহদীন মালিক
  • কুমিল্লায় বিষাক্ত মদ পানে দুজনের মৃত্যু
  • রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান প্রশ্নে রুল শুনানিতে ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
  • প্রাণনাশের আশঙ্কায় রাহুল গান্ধী, আদালতে অভিযোগ
  • বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল
  • স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
  • কাঠগড়ায় কাঁদলেন এনবিআরের সেই মতিউর, আদালত বললেন, ‘দুদকের জালে এখন হাজার মতিউর’
  • শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে চাইলেন জেড আই খান পান্না, খারিজ করলেন ট্রাইব্যুনাল
  • জামিন চেয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত কক্ষে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কি
  • পুলিশের অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহি ভেঙে পড়েছিল: হাইকোর্ট