জাহাজে উঠার অপেক্ষায় ১৪ হাজার কনটেইনার
Published: 30th, June 2025 GMT
কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে মাত্র দুইদিনে ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে জমেছে ১৪ হাজার ৩৭১টি রপ্তানি কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব রপ্তানি কনটেইনার যাওয়ার কথা ইউরোপ কিংবা আমেরিকাতে। শনিবার ও রোববার শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ৩ হাজার ৬০০ ট্রাক ও কার্ভাডভ্যানের জট তৈরি হয়েছে ডিপো ও বন্দরের আশপাশে। এরই মধ্যে ৩ হাজার ৬৮০ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার গতকাল রোববার জাহাজে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন রপ্তানিকারকরা। পণ্যবোঝাই এসব কনটেইনার নিয়ে তিনটি জাহাজ গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করার কথা ছিল।
পুরো একদিন বন্দরে অলস বসিয়ে রেখে আজ সোমবার ফের এই কনটেইনারগুলো জাহাজে উঠানোর চেষ্টা করছেন রপ্তানিকারকরা। আজ দুপুর ১২টায় সেই তিনটি জাহাজসহ মোট পাঁচটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার সিডিউল রয়েছে।
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে গতকাল রাত থেকে রপ্তানি কনটেইনার শুল্কায়নের কাজ শুরু করেছেন কাস্টম কর্মকর্তারা। আজ স্বাভাবিক হচ্ছে আমদানি কার্যক্রমও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মসূচি স্থগিত হলেও যে জট তৈরি হয়েছে সেটি স্বাভাবিক হতে অন্তত এক সপ্তাহ বাড়তি সময় লাগবে। এখন জাহাজ কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা না করলে এসব রপ্তানি পণ্য পাঠাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে তাদের।
এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে বিঘ্ন ঘটেছে সেবায়। ভোগান্তিও বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। এমন অবস্থায় শীর্ষ ১৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতারা গত দুদিন সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ করে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারে বাধ্য করে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘এনবিআর হলো দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা। বাজেটের ৮৮ শতাংশের বেশি রাজস্বের জোগান দেয় এনবিআর। আগামী অর্থবছরে বাজেটের ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের টানা কর্মসূচিতে এটা হোঁচট খেয়েছে। আবার বন্দরে রপ্তানি পণ্যের যে জট তৈরি হয়েছে তাতে করে নির্ধারিত সময়ে পণ্য পাঠাতে হিমিশিম খেতে হবে আমাদেরও।’
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘কাস্টম কর্মকর্তারা না আসায় ডিপোতে শুল্কায়ন কার্যক্রম টানা দুইদিন বন্ধ ছিল। রোববার রাত থেকে রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন আবার শুরু হলেও এরই মধ্যে ১৪ হাজার ৩৭১ একক রপ্তানি কনটেইনার জমে গেছে ডিপোতে। বাইরে রপ্তানি পণ্য নিয়ে অপেক্ষমান আছে আরও প্রায় ৩ হাজার ৬০০ ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান। গতকাল রোববার বন্দর জেটিতে থাকা তিনটি জাহাজ ৩ হাজার ৬৮০ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে শনিবার ও রোববার কোনো কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠাতে পারিনি আমরা। সেই তিনটি জাহাজ রোবার দুপুরে বন্দর ত্যাগ করবে। আমরা এই সময়ের মধ্যে কনটেইনারগুলো উঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল সমকালকে বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। সেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে রাখা হয় সব পণ্য। পরে বুকিং অনুযায়ী বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয় রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার। যে ১৪ হাজার কনটেইনার জমেছে সেগুলো জাহাজে তুলতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। কারণ, প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ রপ্তানি কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আসবে নতুন কনটেইনারও। এখনই ডিপোর চারপাশে অপেক্ষমান গাড়ি আছে ৩ হাজার ৬০০।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ১৪ হ জ র র বব র য গ কর গতক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েতের ৬ দিনারের ভিসা সর্বোচ্চ ২,২০০ দিনারে বিক্রির অভিযোগ
কিছুদিন ধরে কুয়েতে শ্রমিক ভিসা পেতে প্রক্রিয়া সহজিকরণ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশি নাগরিকরাও শ্রমিক ভিসায় কুয়েতের শ্রমবাজারে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বেশি আসছেন।
কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, ২০০৭ সাল থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। সেক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভিসা পেতে হতো বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য। ফলে ভিসা বিক্রেতারা এই অজুহাতে ভিসার মূল্য অনেক গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করেন।
প্রবাসী এ নেতা বলেন, ২০০৭ সালের আগে কয়েক বছর বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কুয়েতের ভিসা পুরোপুরিভাবে বন্ধ ছিল। ২০০৭ সাল থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ অনুমোদন নিয়েই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল। যদিও এটি ছিল সীমিত ক্যাটাগরির ভিসা, সেসময় আহলি শোন নামের ভিসা একেবারেই পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের মে মাস থেকে বিশেষ অনুমোদনবিহীন, অর্থাৎ সহজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই বাংলাদেশিদের জন্য সব ক্যাটাগরির ভিসা অনায়াসে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ বিলাল হোসেন বলেন, মূলত কুয়েতের শ্রমিক ভিসার নির্দিষ্ট কোনো মূল্য নেই। যদি কোনো কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ভিসা প্রদান করে থাকে; সেক্ষেত্রে ওই কোম্পানিই ভিসা-টিকেট সহ অন্যান্য সব খরচ বহন করার নিয়ম রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের দেয়া তথ্যমতে, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো যেমন: সৌদি আরব, কাতার,ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত- এই ছয় দেশে শ্রমিক ভিসায় যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ পনেরো হাজার থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা।
জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর খরচ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, এটি রিক্রুটিং এজেন্সির ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি, মেডিকেল টেস্ট এবং বিমান ভাড়ার মতো বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে। বোয়েসেল একটি সরকারি সংস্থা, যা কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা করে থাকে।
কুয়েত প্রবাসী সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস সালেহ বলেন, কুয়েতের ভিসা পেতে প্রসেস খরচ হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রায় তিন দিনার এবং দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়নে খরচ হচ্ছে তিন দিনার। অর্থাৎ কুয়েতের শ্রমিক ভিসা হাতে আসা পর্যন্ত মোট খরচ হচ্ছে ছয় ‘কুয়েতি দিনার’, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার চার শ’ টাকার চেয়েও কম। তবে শ্রমিক ভিসায় বিদেশে আসার পর নিয়োগকর্তা আড়াই শ’ দিনারের মতো আরো খরচ করে থাকেন ওয়ার্ক পার্মিট এর জন্য।
তিনি বলেন, এই ৬ দিনারের ভিসা দালালদের হাত বদলের মাধ্যমে ২,০০০ থেকে ২,২০০ কুয়েতি দিনার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
অবশ্য ভিসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশি ভিসা দালালরা স্থানীয় নাগরিকদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে থাকেন বলে মন্তব্য করেন প্রবাসী এই সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হবজু মিয়া বলেন, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত প্রবাসীদের কল্যাণে বেশ কিছু কাজ করেছেন। এর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা পাওয়ার ইস্যুতেও কাজ করেছেন রাষ্ট্রদূত।
প্রবাসী এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশিদের অভিবাসন খরচ অনেক গুণ বেশি। এর জন্য দায়ী কুয়েতে বাংলাদেশি ভিসা দালালদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র, এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে কুয়েতে ভিসা ব্যবসা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন একাধিকবার ভিসা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন।
মোহাম্মদ হবজু বলেন, সম্প্রতি কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শ্রমিক ভিসার মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে পরামর্শ দেন। এমনকি ওই সভায় ভিসার দাম চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করে দেন রাষ্ট্রদূত।
অথচ, রাষ্ট্রদূত দাম কমানোর বিষয়ে ভিসা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বারবার কথা বললেও বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে এর চিত্র ভিন্ন। স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি ভিসা দালালরা তাদের ইচ্ছা-খুশি মতো ভিসা মূল্য নির্ধারণ করেছেন। স্থানীয় মুদ্রায় ২,০০০ হাজার থেকে ২,২০০ কুয়েতি দিনার দামে কুয়েতের শ্রমিক ভিসা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকা হচ্ছে ভিসা দালালদের নির্ধারিত ভিসা মূল্য।
কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০টি ভিসা সত্যায়িত করার আবেদন পাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত।
প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজিকরণ করার কারণেই অধিকসংখ্যক ভিসা বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন।
জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে এক তৃতীয়াংশ দক্ষ কর্মীর ভিসা সত্যায়ন করে দিচ্ছেন তারা; যদিও এর আগে সাধারণ শ্রমিক ভিসায় সত্যায়নের জন্য আবেদন পাওয়া যেতো।
আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে ভিসা সত্যায়নের জন্য নিয়োগকর্তাকে দূতাবাসে আসতে হচ্ছে নতুবা তার নিবন্ধিত প্রতিনিধিকে আসতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভিসা সত্যায়ন করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ মনে করছি না। ভবিষ্যতে যেন কোনো বাংলাদেশি কুয়েতের ভিসায় এ দেশটিতে এসে সমস্যাগ্রস্ত না হন; সে বিষয়টিও আমরা দেখছি।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ