বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক: মির্জা ফখরুল
Published: 30th, June 2025 GMT
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দেশটিকে অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। পাঁচ দিনব্যাপী সেই সফরে চীনের ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কার্যকর ভূমিকার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
বর্তমানে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব কেমন দেখা গেছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) দেখেছি। দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই সফরে দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও উন্নত ও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। চীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদী রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলেও জানান দলের মহাসচিব।
এই সফরে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের নেতৃত্বে চীনের বিস্ময়কর উন্নতি, আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধি এবং তার ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এর ইতিবাচকতার কথা মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই বৈঠকে লি-হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে আমরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও তাদের সহায়তা চেয়েছি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সঙ্গে সফরের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবেশ ও প্রযুক্তি উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমশক্তির সক্ষমতা, উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টিও উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও রপ্তানি সুযোগ বৃদ্ধির বাস্তব পদক্ষেপ, কুনমিংয়ে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সহজতর করা এবং চীন-বাংলাদেশের মাঝে স্থলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগও আলোচ্য সূচিতে ছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ গণতন ত র ব এনপ র আলমগ র মন ভ ব ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে একটি মহল: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আওয়ামী নোংরা কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। হাসিনার পতনের পরেও একটি মহল আমাদের চিরচেনা সেই সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে না এনে বরং বিনষ্ট করছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। মুরাদনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর শ্লীলতাহানি ও সহিংসতা মনুষ্যত্বহীন, অমানবিক, পাশবিক ও মহল বিশেষের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের অভিসন্ধি।
কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই এলাকার একজন উপদেষ্টা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুরাদনগরে ক্রমাগত ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন। দুস্কৃতিকারীরা আশকারা পেয়ে সমাজবিরোধী নানা অপকর্মে মেতে উঠেছে। আর এ ক্ষেত্রে তারা দেশ-বিদেশ থেকে অবিরাম মদদ পাচ্ছে। উপদেষ্টা যদি জনসেবার চেয়ে আত্মসেবাতেই ব্যস্ত থাকেন তাহলে এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত হবে। মুরাদনগরের বাসিন্দা উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী এমপিদের মতো এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত রয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা এক নির্মম কলঙ্কজনক ঘৃণ্য ঘটনা। এই বর্বরোচিত ঘটনা দেশের মানুষকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। অথচ একটি কুচক্রী মহল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আমলের মতো নিজেরাই সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি দখল ও নির্যাতন করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ধারাবাহিকতা এখনও চলছে।
তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা অর্থবিত্তে সজ্জিত। নারী নির্যাতনসহ সহিংস সন্ত্রাসের গোপন অভিযান চালিয়ে উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য তারা বিপজ্জনক গোপন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। শক্তিশালী পক্ষের আশির্বাদ আছে বলেই দুর্বৃত্তরা সহিংস কার্যাবলী চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে। তবে সত্যের জন্য, সম্মানের জন্য ও আত্মমর্যাদার জন্য ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলকে দুস্কৃতিকারীদের প্রতিহত করতে হবে সুস্থ সমাজ ও নিরাপদ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, নারী নির্যাতনকারী অপরাধীদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। তারা মানবসভ্যতার শত্রু। অবিলম্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনকারী দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানাচ্ছি।