জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১৭৯ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১০২তম (বিশেষ) সিন্ডিকেট সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভায় বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
বাকৃবিতে গবেষণায় বাজেট বেড়েছে
ঢাকা দক্ষিণের ৩৮৪১ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
নতুন অর্থবছরের বাজেটে গবেষণাখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ২৫ লাখ, যন্ত্রপাতি খাতে ৪ কোটি ৯২ লাখ, যানবাহন ক্রয়ে ৩ কোটি, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ১ কোটি ৭০ লাখ এবং অন্যান্য মূলধন খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৮০ লাখ টাকা।
পণ্য ও সেবা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বেতন-ভাতা খাতে রয়েছে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূরক বৃত্তি খাতে ৫৬ কোটি এবং অস্থায়ী হল নির্মাণে ২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাজেটে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৮৪ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮৯ কোটি ৬০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং বাজেট অনুমোদনে যারা সহায়তা করেছেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “সবাই মিলেই চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর দ দ র খ প রকল প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%
দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান আসে নানা ধরনের মাছ থেকে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ৬৩ গ্রাম মাছ খেয়ে থাকে। তবে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামের মাছই আমিষের বড় উৎস। সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামি মাছে মধ্যে পছন্দের শীর্ষে তেলাপিয়া মাছ। বছর বছর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক দশকে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টন।
এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পুরুষ তেলাপিয়া চাষের উৎপাদনই বেশি বাড়ছে। তবে মাছ চাষের খরচের প্রায় ৭০ শতাংশই খাবারের পেছনে। তাই উৎপাদন বাড়লেও তেলাপিয়া মাছের দামও এখনো নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৮ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ১৯১ টন। ১০ বছর আগেও ২০১৩–১৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল মাত্র ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬২ টন। সেই হিসাবে এক দশকের ব্যবধানে তেলাপিয়ার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১৬ টন।
বড় বাজারের দরদামরাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা মডেল টাউন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ২২০ টাকা দরে ৫০ কেজি মাছ বিক্রি করেছেন মাছ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি মাছ তিনি ১৮০ টাকায় কিনেছেন। কামাল হোসেন জানান, এক বছরের ব্যবধানে পাইকারিতে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে প্রায় ৮০ টাকা। মাছের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, মাছ উৎপাদনে ৭০ শতাংশ খরচই হয় খাবারের পেছনে। গত কয়েক বছরে খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়লেও দাম কমেনি। তবে তিনি বলেন, খাবারের দাম যতটা বেড়েছে, মাছের দাম ততটা বাড়েনি।
এদিকে মাছচাষিরা বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি। এ কারণে অনেক মাছচাষি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাষির মুনাফা বৃদ্ধি না পাওয়ার জন্য ব্যাংকের উচ্চ সুদকে দায়ী করছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, অনেক চাষি উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষে বিনিয়োগ করেন। ভালো মুনাফা না পেলে তাঁদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। এ বিষয়ে ময়মনিসংহের ত্রিশালের মাছচাষি নাহিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মাছচাষিরা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। মাছের খাবার, বিদ্যুৎ বিল, ওষুধ, শ্রমিকের খরচ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ মিলিয়ে মাছ চাষ করে লোকসান গুনছেন বেশির ভাগ চাষি।
নাদিম মাহমুদ জানান, বর্তমানে মাছের এক টন খাবারের দাম ৭২ হাজার টাকা। তাঁর তিন একরের পুকুরে দিনে প্রায় আধা টন খাবার লাগে। একজন শ্রমিকের বেতন মাসে ১৮ হাজার টাকা। তাই মাছ চাষে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা না গেলে অনেকেই আগ্রহ হারাবেন।
মাছ চাষের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক মাস আগে নিয়োগ পাওয়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি খাতের মতো মৎস্য খাতেও বিদ্যুৎ বিল কমাতে আমরা কাজ করছি।’
মাছ চাষে শীর্ষ ১০ জেলা২০২৩ সালের মৎস্য অধিদপ্তরের উৎপাদন হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর তেলাপিয়ার মোট উৎপাদনের মধ্যে পুকুরে চাষ হয়েছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৪২ টন। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ জেলার পুকুরে চাষ হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। পুকুরে তেলাপিয়া চাষে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা। এ জেলায় ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার টন তেলাপিয়া পাওয়া যায়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ময়মনসিংহ জেলায় উৎপাদিত হয় প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার টন। যশোর থেকে আসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ১৯৭ টন। চট্টগ্রাম ও বরিশালে উৎপাদিত হয় যথাক্রমে প্রায় ২০ হাজার ও ১১ হাজার ৭১৪ টন। এরপরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাজীপুর, বগুড়া ও নোয়াখালী।
আফ্রিকা থেকে দেশেমৎস্য কর্মকর্তারা জানান, ১৯৬৯ সালে আফ্রিকা থেকে প্রথম দেশে আনা হয় তেলাপিয়া। তবে ২০১০ সালের পর তেলাপিয়ার ব্যাপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) মো. মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন মোনোসেক্স জাতের পুরুষ তেলাপিয়ার বেশি চাষ হচ্ছে। কারণ, এসব মাছ আকারে বড় হয়। আগে মিশ্র জাতের তেলাপিয়ার বেশি চাষ হতো।
একদিকে বেড়েছে চাহিদা, অন্যদিকে কম সময়ে এ মাছ দ্রুত বড় হয়। তাই দেশে তেলাপিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এ মাছ বিক্রি উপযোগী হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মো. মোতালেব হোসেন বলেন, গরম বা ঠান্ডা যেকোনো আবহাওয়ায় তেলাপিয়া চাষ করা যায়। এ ছাড়া খাবার না দিলেও এ মাছ বড় হয়। কই, শিং ও পাবদা মাছের মতো তেলাপিয়া আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয় না। খেতেও সুস্বাদু। তাই তেলাপিয়ার চাষ এক দশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
তেলাপিয়া বিতর্কশেওলা ও বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে বলে এটিকে গারবেজ/ট্র্যাশ ফিশ বা আবর্জনা মাছ বলেও ডাকা হয়। এক সময় এ মাছে নানা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির অভিযোগ উঠেছিল। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত খাবারের জন্য মূলত এটি হয়ে থাকতে পারে। তাই মানসম্পন্ন খাবার দেওয়া হলে এ মাছে ক্ষতির কিছু নেই।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক
মো. মোতালেব হোসেন বলেন, এখন পুকুরে গোবর, হাঁস–মুরগির উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করাও আইনিভাবে নিষিদ্ধ।
অধ্যাপক ও গবেষক রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, বর্তমানে দেশে মাছ চাষে যে ধরনের খাবার ব্যবহার করা হয়, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির সুযোগ নেই।