দেশের জাতীয় কৃষি মজুরির (দৈনিক ৬০০ টাকা) চেয়ে কম মজুরি পান প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষক। আর বাকি ৬০ শতাংশ কৃষক জাতীয় কৃষি মজুরি হারের সমান বা এর চেয়ে বেশি মজুরি পান। দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে মজুরির দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন সিলেট ও খুলনা বিভাগের কৃষকেরা। আর মজুরির দিক থেকে এগিয়ে আছেন ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের কৃষকেরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস মিলনায়তনে আজ সোমবার বিকেলে কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়ন পরিমাপে পরিচালিত ‘উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষি জরিপ ২০২৫’ শীর্ষক জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়। দেশে প্রথমবারের মতো এই জরিপ করা হয়েছে। ১১টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশের কৃষি খাত কতটা টেকসই, সেটি বের করাই ছিল এ জরিপের অন্যতম উদ্দেশ্য। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, দেশের কৃষিজমির ৫৭ শতাংশ এখনো টেকসই ব্যবস্থাপনার বাইরে রয়েছে।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.
জরিপে দেখা যায়, শহরের তুলনায় গ্রামে কৃষকেরা কম মজুরি পান। শহরাঞ্চলে যেখানে ৭৬ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান, গ্রামে সেই হার ৫৯ শতাংশ। বিভাগের হিসাবে, সিলেটের ৬৩ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান না। খুলনায় এ হার প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে ময়মনসিংহ বিভাগে মজুরি পাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এ বিভাগে যথাযথ মজুরি পান ৭৫ শতাংশ কৃষক। আর চট্টগ্রামে এ হার ৭৩ শতাংশ। ঢাকার প্রায় ৬৭ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান।
কৃষি খাতে লাভের বিষয়ে জরিপের তথ্যে উঠে এসেছে, দেশের ৭৯ শতাংশ জমি গত তিন বছরের মধ্যে অন্তত এক বছর লাভজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ২১ শতাংশ কৃষিজমি তিন বছরের কোনো বছরেই লাভের মুখ দেখেনি। শহরাঞ্চলে এ হার ২৫ শতাংশ।
জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলে জমির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বলা হয়, দেশের প্রায় ৩১ শতাংশ কৃষিজমি কৃষিঋণ, ইনস্যুরেন্স ও একাধিক ফসলের আওতায় নেই। ফলে যেকোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এসব কৃষিজমি। শহরাঞ্চলে এ ধরনের জমির পরিমাণ ৪৪ শতাংশ।
কৃষি চাষে সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের অবস্থাও উঠে এসেছে জরিপে। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ জমিতে সার ব্যবহারের আটটি পদ্ধতির কোনোটিই অনুসরণ করা হয় না। আর দেশের ৪৯ শতাংশ কৃষিজমিতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এ ক্ষেত্রে ১১টি পদ্ধতির একটিও অনুসরণ করা হয় না, যা পরিবেশ ভারসাম্য ও কৃষকের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সেচ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলে বলা হয়, দেশের ১৮ শতাংশ জমিতে যথাযথ সেচের পানি পাওয়া যায় না। জরিপের তথ্যমতে, সার্বিকভাবে দেশের ৫৭ শতাংশ কৃষিজমিই টেকসই ব্যবস্থাপনার বাইরে রয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলেয়া আক্তার বলেন, ‘এত দিন আমরা সার–কীটনাশকের ব্যবহার বাড়িয়ে শুধু উৎপাদন বৃদ্ধির কথা ভাবতাম। তবে টেকসই দৃষ্টিতে শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, পরিবেশের প্রতিও নজর দিতে হবে। নগদ লাভ দেখলেই হবে না, উৎপাদন উপকরণের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে জমির উর্বরতা যেন ঠিক থাকে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, ‘কৃষিতে এখন কোন দিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তা এ জরিপের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেভাবেই হয়তো আমরা ভবিষ্যৎ প্রকল্প পরিকল্পনা সাজাব। জরিপে উঠে আসা সার ব্যবহারের বিষয়টি উদ্বেগজনক। আমাদের ইউরিয়াসহ অন্য সারগুলো আমদানি করতে হয়। ৮০–৯০ টাকায় সার কিনে তা কৃষক পর্যায়ে ৩০–৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সারের ব্যবহার কমছে না। মুন্সিগঞ্জে আলু চাষে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা সম্প্রতি একটি খামারি অ্যাপস চালু করেছি। যার মাধ্যমে কোন জমিতে কোন ফসল ভালো হবে এবং কেমন সার ব্যবহার করতে হবে সেটার তথ্য পাওয়া যায়। তবে এখনো এটা কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় করা যায়নি। আমরা কৃষকের মধ্যে জৈব সার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যৎ কৃষি নীতি গ্রহণে এই জরিপের তথ্য সহায়ক হবে। এত দিন কৃষিকে সাদাচোখে দেখলেও এখন টেকসই দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দীপংকর রায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র ব যবহ র পর স খ য ন ব যবহ র ক ব ব এস ট কসই ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
সকালে এক গ্লাস নাকি চার গ্লাস পানি পান করা ভালো
সকালে খালি পেটে পানি পান করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কত গ্লাস পানি পান করা ভালো সে কথা জানেন? সেই প্রসঙ্গে আসছি, তার আগে বলে নেই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে পানি পান করলে ঠিক কোন কোন উপকার পাওয়া যায়। অল্প কিছু বিষয় মেনে চললে সকালে খালি পেটে পানি পান করে সুস্থ-সবল থাকার পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। জেনে নিনি বিস্তারিত—
এক. সকালে পানি পান করলে পাকস্থলী পরিষ্কার হয়। এই অভ্যাস অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়। পরিপাকক্রিয়া থেকে সঠিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে শরীরকে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে পানি পান করলে হজমশক্তি বাড়ে। আর এটা তো জানা কথা, হজমশক্তি ভালো হলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাই দূর হয়।
আরো পড়ুন:
যেসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস জীবন বদলে দিতে পারে
লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য সাপ্লিমেন্ট খাওয়া কী জরুরি?
দুই. সকালে খালি পেটে পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর থাকে। রক্ত থেকে ‘টক্সিন’ বা বিষাক্ত নানা উপাদান দূর করে পানি।নতুন রক্ত কোষ এবং পেশি কোষ জন্মানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
তিন. খালি পেটে পানি পান করলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
যেভাবে পুরোপুরি সুফল পাবেন
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে পানি পান করার পারেই খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।
মনে রাখবেন, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানি পান করেই অনেক উপকার পেতে পারেন। আরও ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন সকালে গড়ে চার গ্লাস পানি (প্রায় এক লিটার) পানি পান করতে পারেন।
প্রথম দিকে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবে চেষ্টা করলে এটা অনেক কিছুদিনের মধ্যে এই অভ্যাস আয়ত্বে চলে আসবে। এবং এর নানা উপকারিতাও বুঝতে পারবেন।
সূত্র: ওয়েবএমডি
ঢাকা/লিপি