বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর নতুন করে আবার সেই ফ্যাসিবাদী কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। তারা হাট, ঘাট, টেম্পোস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড দখলে নিচ্ছে। তারা আর এরা—একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই ফ্যাসিবাদ যেন মাথা তুলে না দাঁড়ায়, সে জন্য আসন্ন নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনার ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দিনব্যাপী গণসংযোগ শেষে সন্ধ্যায় আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে যদি রাষ্ট্র গঠন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পাবে। সব দলের শাসন মানুষ দেখেছে, বাকি আছে শুধু ইসলামপন্থীদের শাসন দেখা। তাই আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের জোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে বেশির ভাগ আসনে যদি আমরা সৎলোক পাঠাতে পারি, তাহলে মানুষের আশাআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে কেউ কেউ অগাধ অর্থ ও পেশিশক্তি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবে। তাই আসুন, অর্থ ও পেশিশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, বিবেক দিয়ে ভোট দিয়ে ভেদাভেদ ভুলে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সৎলোককে নির্বাচিত করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ি।’

এর আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিকিরহাট হাফ রাস্তা, দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স এলাকা, ভাটপাড়া খেয়াঘাট এলাকা, ভদ্রপুকুর এলাকা, বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশন ও বুড়িয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফুলতলা উপজেলা আমির আবদুল আলীম মোল্যা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি মোস্তফা আল মুজাহিদ। সঞ্চালনা করেন উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খান।

গত ১৬ বছরের শাসনামলকে ‘কালো যুগ’ আখ্যা দিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকাণ্ড, গুম, লুটপাট ও দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশকে কার্যত অকার্যকর করে ফেলেছিল। বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতা–কর্মীর ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। ২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই কালো যুগের অবসান হয়েছে। এই রক্ত ও ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১ থেকে ১২ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে একই দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দলটি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে জামায়াতের যুব বিভাগের নেতা নিহত

ক্ষমতায় গেলে কাউকে দাবি নি‌য়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না: জামায়াতের আমির

পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো-
৫ দফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা। গোলটেবিল বৈঠক। সেমিনার ইত্যাদি।

এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে  স্মারকলিপি পেশ।

যে পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি' হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছে।

প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ' জারি করা। দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সেটা না হলে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ছাড়া ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করতে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে জানিয়েছে জামায়াত।

জামায়াতের এর আগে ঘোষণা করা পাঁচ দফা জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। তাই জনগণের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
  • ১ থেকে ১২ অক্টোবর নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত