গাফিলতি আর অসাবধানতায় প্রাণ হারাচ্ছে শিশু, জানে না সাঁতার
Published: 1st, July 2025 GMT
পারিবারিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন মা। এ সুযোগে কাউকে কিছু না বলে ১০ বছরের আফিয়া ও ৮ বছরের মিম বাড়ির পাশে নতুন খনন করা পুকুরে গোসল করতে নামে। ঘণ্টাখানেক পর পরিবারের লোকজন তাদের হদিস না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় পুকুরে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের বেদভিটা গ্রামে।
ঈদুল আজহা তখন বাকি তিন দিন। ২২ মাস বয়সী রাহাদ ও রিহান বাড়ির উঠানে খেলছিল। পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ছিলেন পারিবারিক কাজে। এরইমধ্যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ির সামনে পুকুরে নেমে পড়ে তারা। যখন তাদের খোঁজ পড়ল, তখন তারা আর বেঁচে নেই। গত ৪ জুন কালিয়ার আটলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
শুধু এ দুই ঘটনাই নয়, গত জুন মাসে জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয় শিশু। গত ১৫ মাসে মারা গেছে ১৫ জন। এর মধ্যে আট শিশু ও সাত কিশোর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের অসাবধানতা বা গাফিলতি দায়ী ছিল। সাঁতার না জানাও বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অপমৃত্যু এড়াতে সাবধানতার পাশাপাশি সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজ থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক মো.
গত ১১ জুন লোহাগড়ার ঝিকড়া গ্রামের আবির তাজ ইমামের ২ বছরের মেয়ে আয়েশা পুকুরে ডুবে মারা যায়। ১০ জুন কালিয়ার ঘোষপাড়া এলাকার তারক ঘোষের সন্তান পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শ্রেষ্ঠ ঘোষসহ তিন বন্ধু নবগঙ্গা নদীতে ডুবে প্রাণ হারায়। সে সাঁতার জানত। ১ এপ্রিল লোহাগড়ার চাচই গ্রামে নানাবাড়িতে পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা যায় ফাতেমা সিদ্দিকা (৭)।
২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর লোহাগড়ার পার-শানগর গ্রামের ফজলু রহমানের মেয়ে ফাতেমা খানম (২) ডুবে মারা যায়। পুকুরে ডুবে যাওয়ার আগে উঠানে খেলছিল সে। ৫ সেপ্টেম্বর লোহাগড়ার ছত্রহাজারি গ্রামে নানাবাড়ি বেড়াতে এসে আয়েশা (৩) পুকুরে ডুবে মারা যায়। সেও বাড়ির উঠানে খেলছিল। ১ আগস্ট সদরের শিমুলিয়া গ্রামের শফিকুল বিশ্বাসের ছেলে ১৫ মাস বয়সী আকিব বালতির পানিতে ডুবে মারা যায়। বালতি ধরে দাঁড়াতে গিয়ে তার মাথা নিচের দিকে চলে গেলে তার মৃত্যু হয়।
২৬ জুন নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে গিয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র আসমাউল মীরের মৃত্যু হয়। সে নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর এলাকার বিল্লাল মীরের ছেলে। ১৪ মে শহরের বরাশোলা এলাকার সাইফুর রহমানের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাজ শেখ চিত্রা নদীতে ডুবে মারা যায়। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলে নদীতে গোসল করতে নেমেছিল সে। ১১ মে সদরের নাকশি এলাকার সাইফুল শিকদারের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র রায়হান শিকদার নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ভালো সাঁতার না জানায় কলাগাছের অংশ ধরে ছিল। একপর্যায়ে সে নদীতে তলিয়ে গেলেও বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।
২০ এপ্রিল সদরের বাহির গ্রামের নূর জালাল মোল্যার দুই সন্তান তিন্নি (৫) ও তানহা (৩) ঘেরের পানিতে পড়ে মারা যায়। কালিয়ার আটলিয়া গ্রামে ডুবে মারা যাওয়া রিহানের বাবা রিয়াজ শেখের ভাষ্য, বাড়িতে সবাই কাজে ব্যস্ত থাকায় রিহান ও চাচাতো ভাই রাহাদের বিষয়ে কারও খেয়াল ছিল না। তারা বাড়ির উঠানেই খেলছিল। পরে বাড়ির পাশের ডোবায় তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নড়াইল শহরের বরাশোলা এলাকায় চিত্রা নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিহত রাজ শেখের কাকা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাড়ির পাশে হলেও রাজ কখনও নদীতে নামেনি, সে সাঁতারও জানত না।
অনেক অভিভাবক সন্তানের সাঁতার শেখাতে আগ্রহী নন এবং তাদের গাফিলতিও রয়েছে বলে মনে করেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে বার্ষিক সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য মাসব্যাপী ব্যবস্থা থাকে। গত মে মাসে ৮০ জনের বেশি শিশু-কিশোরকে সাঁতার শেখানো হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জুলাই থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার নড়াইল পৌরসভার পেছনে কালিদাস ট্যাঙ্ক পুকুরে পানি জীবাণুমুক্ত করে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা চলছে। স্থায়ীভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। কারণ প্রশিক্ষককে সম্মানী দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সাঁতার শেখা প্রত্যেক শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারিভাবে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে শেখানোর ধারণাটি সময়োপযোগী। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে জেলা পর্যায়ে এসে সাঁতার শিখতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামীণ পর্যায়ে শিশুদের সাঁতার না শিখিয়ে পুকুরে ছেড়ে না দিতে অভিভাবকদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র ল হ গড় র ব যবস থ পর য য় এল ক র সদর র
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।