‘জিএইউ গম-১’ নামে নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। দুই বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম ময়নুল হক ও ড. মো. মসিউল ইসলাম এটি উদ্ভাবন করেছেন। নতুন এ জাতের গম উচ্চ লবণ সহনশীলতার দিক থেকে দেশের প্রথম উদ্ভাবন বলে গবেষকদ্বয় দাবি করেছেন। এ নিয়ে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত গমের জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯১-এ। গত ১৭ জুন উদ্ভাবিত নতুন গমের ছাড়পত্র দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লবণসহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশের ৬টি স্থানে মাঠ মূল্যায়নে প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড ছাড়পত্র দেয়। এ গমে বিদ্যমান অধিক প্রোটিন শরীর গঠন ও মেরামত, শক্তি সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত  গ্লুটেনিন থাকায় এতে উচ্চ প্রোটিন ও কম ফ্যাট। এতে সহজে শরীরে শোষিত হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, জিএইউ গম-১-এর দানা তামাটে, চকচকে এবং তুলনামূলক কম সময়ে পুষ্ট হয়। আমন মৌসুমে ধান কাটার পর বীজ বপন করলে ৯৫ থেকে ১০০ দিনে উৎপাদন পাওয়া যায়। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। এ গমের গাছ বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি। অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে সাড়ে ৪ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.

৭৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। এই গুণ অন্যান্য জাতের গম থেকে একে বিশেষ স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

উদ্ভাবক মো. মসিউল ইসলাম বলেন, জিএইউ গম ১ উদ্ভাবন আমাদের দীর্ঘদিনের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ফল। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদনের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমরা এ জাত উদ্ভাবন করি। এই জাতটি লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। তুলনামূলকভাবে অধিক ফলন দেয়। এটা কৃষকের জন্য যেমন লাভজনক, তেমনি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় কৃষি উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষকদ্বয় নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ উদ্ভাবন শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য বড় অর্জন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লবণ ক ত র জন য পর ক ষ ফলন প

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ