৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন দুই উপদেষ্টা
Published: 23rd, July 2025 GMT
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সি আর আবরার। তখন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের আরও তিন সদস্য। ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসন।
এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই উপদেষ্টাসহ অন্যরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। স্কুলের যে ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা প্রথমে সেই জায়গা পরিদর্শন করেন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় ভুয়া–ভুয়াসহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
তখন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা স্লোগান অব্যাহত রাখলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অন্যরা স্কুলের একটি ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
এর কিছুক্ষণ পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকেরা আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধিকে আলোচনার জন্য ভেতরে (স্কুলের সভাকক্ষে) ডাকেন। সেখানে দুই উপদেষ্টাসহ অন্যরাও ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে ৬–৭ জন শিক্ষার্থীকে সভাকক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তবে যে ভবনে (৫ নম্বর) সভাকক্ষ এর বাইরে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে স্কুল থেকে ৫০ গজ দূরে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বিক্ষোভ করছিল। একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মাইকে স্লোগান দিতে দিতে কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন এবং ৫ নম্বর ভবনের সামনে যান। তাঁরা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবারারের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ ছাড়া বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ; আহতদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ; শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের হাত তোলার ঘটনায় জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা, নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান; বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো বিমান বাতিল করে আধুনিক বিমান চালু এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণপদ্ধতি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিবর্তন করে নিরাপদ ব্যবস্থা চালু—এই ছয় দাবি তোলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সভাকক্ষের বাইরে এসে এই ছয় দাবিই মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। অভিভাবক হিসেবে ভালোবাসা জানাতে এখানে আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা প্রতিটি দাবি পূরণ করব। বিশ্বাস রাখেন।’
আসিফ নজরুল বলেন, কোমলমতি শিশুরা যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের অবস্থা জানানো হবে। হতাহতদের তথ্য হালনাগাদ করে জানানো হবে। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা নিতে বিমানবাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘যে বাহিনী খারাপ ব্যবহার করেছে, সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাই। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। আপনাদের সব দাবি মেনে নিচ্ছি।’
কিন্তু উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। তখন আইন উপদেষ্টাসহ অন্যরা আবার সভাকক্ষে ফিরে যান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তখন সভাকক্ষ লক্ষ্য করে পানির বোতল ও ইট–পথর ছুড়ে মারেন। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ স্কুলমাঠে স্লোগান দিতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তখনো বিক্ষোভ চলছিল। এর মধ্যে কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন শিক্ষকেরা।
বেলা তিনটার দিকে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেন। এরপর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন ও র্যাব সদস্যরা স্কুলে ঢোকেন। বেলা সাড়ে তিনটার কিছু আগে স্কুল থেকে পুলিশি পাহারায় বের হন দুই উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু স্কুলের প্রধান ফটক থেকে একটু সামনে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে যাওয়ামাত্রই সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা আবার স্কুলে ফিরে আসেন এবং একাডেমিক ভবন–৭–এ অবস্থান নেন। তখন স্কুলের বাইরে হাজারখানেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছিলেন।
বিক্ষোভ যখন চলছিল, তখন দুই উপদেষ্টা, প্রেস সচিবসহ প্রেস উইংয়ের অন্য সদস্যরা একাডেমিক ভবন-৭–এর দ্বিতীয় তলায় ছিলেন বলে স্কুলের শিক্ষকেরা জানান। প্রায় চার ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে স্কুলের বাইরে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোলচত্বর এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসার পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা গাড়িতে করে স্কুল ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পুলিশের পাহারায় তাঁদের গাড়িবহর স্কুলের মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে ঢুকতে দেখা যায়।
আইএসপিআরের বক্তব্য
গতকাল সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন (গত সোমবার) বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধারকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট দ ই উপদ ষ ট উপদ ষ ট সহ ন উপদ ষ ট উপদ ষ ট স পর স থ ত ব যবস থ সদস য র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মাত্র দেড় মাসে কীভাবে ১৭ কেজি ওজন কমালেন ক্রিকেটার সরফরাজ খান?
শুরুটা যেভাবে করেছিলেন
সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে। এর পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় তৃপ্তির জন্য রেখেছিলেন বেশি আঁশসমৃদ্ধ ফল ও সবজির সালাদ, ব্রকলি, শসা। প্রোটিনের জন্য রেখেছিলেন গ্রিল করা মাছ ও মুরগি, সেদ্ধ ডিম আর গুড ফ্যাটের জন্য রেখেছিলেন অ্যাভোকাডো। চা ও কফির পরিবর্তে খেয়েছেন গ্রিন টি ও গ্রিন কফি।
৮০ শতাংশ ওজন কমে সঠিক ডায়েটেভারতের হলিস্টিক হেলথ এক্সপার্ট ড. মিকি মেহতা বলেন, ‘আপনি যত কঠোর ব্যায়ামই করুন না কেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমিকা রাখে খাদ্যনিয়ন্ত্রণ, আর বাকি ২০ শতাংশ ব্যায়াম। প্রতিদিন কী খাবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে শরীর কত দ্রুত বদলাবে।’
সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে