নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মহসিন মিয়াকে (৪৬) ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদীতে পিবিআইয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটি বলছে, আসামি মহসিন ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে হারুনুর রশিদ খানের শিবপুরের বাড়িতে ঢুকে গুলি করা হয়। ৯৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

হারুনুর রশিদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই দিন পর তাঁর ছেলে আমিনুর রশিদ খান ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন শিবপুরের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার, ইরান মোল্লা ও হুমায়ুন, পূর্ব সৈয়দনগরের মহসিন মিয়া, মুনসেফেরচরের মো.

শাকিল ও নরসিংদী শহরের ভেলানগরের গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে আসামি আরিফ সরকার একটি বিদেশি নম্বর থেকে হারুনুর রশিদকে কল করে বলেন, ‘বিদেশে চলে এসেছি। আগামীকাল মহসিন মিয়া মসজিদের জন্য অনুদান দিতে কিছু টাকা নিয়ে আপনার কাছে যাবে।’ হারুনুর রশিদ তাঁকে পরদিন সকালে পাঠাতে বলেন। পরদিন সকাল ৬টা ১৩ মিনিটে মহসিন একটি মোটরসাইকেলে দুটি পিস্তলসহ দুজন শুটার নিয়ে তাঁর বাসার নিচে গিয়ে কল দিয়ে বলেন, ‘আরিফ আমাকে মসজিদের অনুদানের জন্য কিছু টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে, আমি আপনার বাসার নিচে আছি।’ হারুনুর রশিদ নিজেই দরজা খুলে তিনজনকে তৃতীয় তলার ড্রয়িংরুমের সোফায় বসতে বলেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর ‘তোমাদের জন্য একটু ফল কেটে নিয়ে আসি’ বলে উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুজন হারুনুর রশিদের কোমরে গুলি করেন। পরে তিনজন মোটরসাইকেলে চেপে পালিয়ে যান। পথে মোটরসাইকেলটি ফেলে দিয়ে অপেক্ষায় থাকা একটি প্রাইভেট কারে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে দুবাইয়ে পালিয়ে যান।

ঘটনার পরপরই গাড়িচালক নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে শিবপুর থানা-পুলিশ। জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ফরহাদ হোসেন (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম (২৮) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পিবিআই মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় আসামি জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তিনিও দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জহিরুল জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইকে জানান, আসামি আরিফের পরিকল্পনায় মহসিন মিয়া, ইরান মোল্লা ও মোবারক উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ঘটনার পর পিবিআই পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। ইন্টারপোল চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করে, আরিফ, মহসিন ও হুমায়ুন আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে শুটার মোবারক দেশে ফিরলে গত ৯ মার্চ ঢাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এজাহারভুক্ত আসামি আরিফ ও মহসিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রেড নোটিশ জারির পর ২১ মে দুবাই পুলিশ মহসিনকে গ্রেপ্তার করে। গত ১৫ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল দুবাই গিয়ে তাঁকে নিয়ে ২০ জুলাই দেশে ফেরেন।

জানতে চাইলে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মহসিন মিয়ার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হই এবং তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির ব্যবস্থা করি। দুবাই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে আমাদের জানালে পুলিশের একটি দল তাঁকে দুবাই থেকে দেশে নিয়ে আসে। আদালতে তোলার পর তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ নিয়ে হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলায় ১৭ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর মহস ন ম য় প ব আই র একট

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী