হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি পালন করছে জাপান। আজ ৬ আগস্ট হিরোশিমা দিবসে, হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে একটি শোক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে পারমাণবিক বোমা হামলায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। 

এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা অনুষ্ঠানে দেন। এছাড়াও এবারের অনুষ্ঠানে ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছেন। খবর বিবিসির।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মার্কিন বিমান ‘এনোলা গে’ হিরোশিমা শহরের ওপর ‘লিটল বয়’ নামের একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। সেই ভয়াল দিনের স্মরণে করে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আরো পড়ুন:

জাপানে ম্যানহোলে পড়ে চার শ্রমিকের মৃত্যু

আগস্টে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা

হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই তার ভাষণে বলেন, “বিশ্বে জাপানই একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “জাপান সরকার এমন একটি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে, যারা প্রকৃত এবং স্থায়ী শান্তির আকাঙ্ক্ষা করে।”

১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় বোমা হামলায় অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হন। তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ, আগুনের গোলা ও পরে বিকিরণের প্রভাবে তাদের মৃত্যু হয়। এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট, নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপে ৭৪ হাজার নিহত হন। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে, যার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

পারমাণবিক বোমার সেই ভয়াবহতা আজও বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের তাড়া করে বেড়ায়।

হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া শিঙ্গো নাইতো বিবিসিকে বলেন, “বিস্ফোরণে আমার বাবা মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার শরীর থেকে চামড়া ঝুলছিল- তিনি আমার হাতও ধরতে পারছিলেন না।” হিরোশিমায় যখন বোমা হামলা হয়, তখন নাইতোর বয়স ছিল ছয় বছর, এতে তার বাবা ও দুই ছোট ভাইবোন নিহত হন।

২০২৪ সালে, জাপানি পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিডানকিও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কার জিতেছিল। 

বুধবার (৬ আগস্ট) হিরোশিয়ার মেয়র মাতসুই তার ভাষণে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা আবারো বেড়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা তার উদাহরণ।”

‘জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র অপরিহার্য’ এই ধারণা সম্পর্কে তিনি সতর্ক করেন।

হিরোশিমার মেয়রের মতে, “এই প্রবণতা ইতিহাসের ট্র্যাজেডি থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল, তা স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করছে। এগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার কাঠামো ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়, যা এত মানুষ এত কঠোর পরিশ্রম করে তৈরি করেছে।”

মাতসুই বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ ও পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি ‘অকার্যকরতার দ্বারপ্রান্তে’। তিনি জাপান সরকারকে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি- ২০২১ সালে কার্যকর হওয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি- অনুমোদন করার আহ্বান জানান।

৭০টিরও বেশি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো এর বিরোধিতা করেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিরোধমূলক কার্যকারিতার দিকে ইঙ্গিত করে।

এমনকি জাপানও এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেছে। জাপান সরকারের যুক্তি, মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

জাপানে পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুটি একটি বিতর্কিত বিষয়। আজ হিরোশিমা দিবসে পিস মেমোরিয়াল পার্কের রাস্তায় পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধের দাবিতে ছোট ছোট বিক্ষোভ হয়েছে।

হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে বিকিরণের প্রভাবে একাধিক ক্যানসারে আক্রান্ত সাইতোশি তানাকা বিবিসিকে বলেন, গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ দেখে এখন তার নিজের কষ্টের কথা মনে পড়ে।

তিনি বলেন, “ধ্বংসস্তূপের পাহাড়, ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর, আতঙ্কে পালিয়ে আসা শিশু ও নারীরা- সবকিছুই আমার জীবনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আমরা এমন পারমাণবিক অস্ত্রের পাশে বাস করছি, যা মানবতাকে বহুবার নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকার হলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বের মানুষকে আরো বেশি ক্ষুব্ধ হতে হবে, তাদের আওয়াজ আরো জোরে তুলতে হবে এবং ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি

হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি পালন করছে জাপান। আজ ৬ আগস্ট হিরোশিমা দিবসে, হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে একটি শোক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে পারমাণবিক বোমা হামলায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। 

এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা অনুষ্ঠানে দেন। এছাড়াও এবারের অনুষ্ঠানে ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছেন। খবর বিবিসির।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মার্কিন বিমান ‘এনোলা গে’ হিরোশিমা শহরের ওপর ‘লিটল বয়’ নামের একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। সেই ভয়াল দিনের স্মরণে করে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আরো পড়ুন:

জাপানে ম্যানহোলে পড়ে চার শ্রমিকের মৃত্যু

আগস্টে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা

হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই তার ভাষণে বলেন, “বিশ্বে জাপানই একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “জাপান সরকার এমন একটি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে, যারা প্রকৃত এবং স্থায়ী শান্তির আকাঙ্ক্ষা করে।”

১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় বোমা হামলায় অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হন। তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ, আগুনের গোলা ও পরে বিকিরণের প্রভাবে তাদের মৃত্যু হয়। এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট, নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপে ৭৪ হাজার নিহত হন। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে, যার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

পারমাণবিক বোমার সেই ভয়াবহতা আজও বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের তাড়া করে বেড়ায়।

হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া শিঙ্গো নাইতো বিবিসিকে বলেন, “বিস্ফোরণে আমার বাবা মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার শরীর থেকে চামড়া ঝুলছিল- তিনি আমার হাতও ধরতে পারছিলেন না।” হিরোশিমায় যখন বোমা হামলা হয়, তখন নাইতোর বয়স ছিল ছয় বছর, এতে তার বাবা ও দুই ছোট ভাইবোন নিহত হন।

২০২৪ সালে, জাপানি পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিডানকিও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কার জিতেছিল। 

বুধবার (৬ আগস্ট) হিরোশিয়ার মেয়র মাতসুই তার ভাষণে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা আবারো বেড়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা তার উদাহরণ।”

‘জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র অপরিহার্য’ এই ধারণা সম্পর্কে তিনি সতর্ক করেন।

হিরোশিমার মেয়রের মতে, “এই প্রবণতা ইতিহাসের ট্র্যাজেডি থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল, তা স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করছে। এগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার কাঠামো ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়, যা এত মানুষ এত কঠোর পরিশ্রম করে তৈরি করেছে।”

মাতসুই বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ ও পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি ‘অকার্যকরতার দ্বারপ্রান্তে’। তিনি জাপান সরকারকে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি- ২০২১ সালে কার্যকর হওয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি- অনুমোদন করার আহ্বান জানান।

৭০টিরও বেশি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো এর বিরোধিতা করেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিরোধমূলক কার্যকারিতার দিকে ইঙ্গিত করে।

এমনকি জাপানও এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেছে। জাপান সরকারের যুক্তি, মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

জাপানে পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুটি একটি বিতর্কিত বিষয়। আজ হিরোশিমা দিবসে পিস মেমোরিয়াল পার্কের রাস্তায় পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধের দাবিতে ছোট ছোট বিক্ষোভ হয়েছে।

হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে বিকিরণের প্রভাবে একাধিক ক্যানসারে আক্রান্ত সাইতোশি তানাকা বিবিসিকে বলেন, গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ দেখে এখন তার নিজের কষ্টের কথা মনে পড়ে।

তিনি বলেন, “ধ্বংসস্তূপের পাহাড়, ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর, আতঙ্কে পালিয়ে আসা শিশু ও নারীরা- সবকিছুই আমার জীবনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আমরা এমন পারমাণবিক অস্ত্রের পাশে বাস করছি, যা মানবতাকে বহুবার নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকার হলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বের মানুষকে আরো বেশি ক্ষুব্ধ হতে হবে, তাদের আওয়াজ আরো জোরে তুলতে হবে এবং ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ