যুক্তরাষ্ট্রে এখনই যে রাজনীতি দরকার
Published: 8th, August 2025 GMT
ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান। বর্তমানে দেশটির দুই দলের রাজনৈতিক কাঠামো (রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্র্যাট) নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরক্তি কতটা বেড়েছে, তা তাঁর এই পরিকল্পনা থেকে বোঝা যাচ্ছে। সিএনএনের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৬৩ শতাংশ মার্কিন তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে রয়েছেন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও একই ধরনের ফল পাওয়া গিয়েছিল। তবে জরিপে যখন বলা হয়, ইলন মাস্ক যদি সেই তৃতীয় দল চালান, তাহলে সমর্থন অনেক কমে যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক লি ড্রুটম্যান যেটিকে ‘দুই দলীয় মৃত্যুকূপ’ বলেছেন, সে অচলাবস্থার প্রতি অসন্তোষ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখনো প্রবল।
এদিকে রিপাবলিকান পার্টি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বা মাগা আন্দোলনের মাধ্যমে আমূল বদলে গেছে। অন্যদিকে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা, নতুন করে গড়ে তোলা এবং প্রসারিত করার জন্য বড় পরিসরে কাজ চলছে।
‘ডেমোক্রেসি ফান্ডারস নেটওয়ার্ক’ নামের একটি সংগঠন ৪ হাজার ১০০টি অলাভজনক সংস্থা ও ২৭ হাজার অনুদানদাতার তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘৭০টি সংগঠিত ক্ষেত্র’ চিহ্নিত করেছে। এ ক্ষেত্রগুলো ভোটাধিকার, সংলাপ গঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মতো গণতান্ত্রিক কাজ করছে। স্থানীয় পর্যায়ে ‘ন্যাশনাল সিভিক লিগ’ দেশজুড়ে ১১ হাজারের বেশি সংগঠন চিহ্নিত করেছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক কথাবার্তা ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে।
আরও পড়ুনট্রাম্প যেভাবে মিয়ানমারকে চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন০১ আগস্ট ২০২৫এ ছাড়া বিভাজন কমাতে এবং ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয়েই একসঙ্গে কাজ করতে পারে, এমন একটি কেন্দ্র গড়ে তুলতে অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে। আরও কিছু সংগঠন আছে, যারা চায় নির্বাচনী সংস্কার ঘটিয়ে যেন ভোটাররা আরও বেশি প্রার্থী ও দলের মধ্যে বেছে নিতে পারেন। কিছু সংগঠন রাজনৈতিক অবস্থান নয়; বরং নীতিমূল্য ও আদর্শের ভিত্তিতে নিজেদের পরিচয় দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রপন্থী সংগঠনগুলোও যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক নতুন শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ কল্পনা উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে তারা এমন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারবে, যারা নৈতিক আদর্শকে গুরুত্ব দেয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে চায়।
এ ভাবনা নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রবন্ধ সংকলন, আউট অব মেনি, ওয়ান: রাইটিংস অন আমেরিকান ইউনিভার্সালিজম। ‘ক্যাটালিস্ট ফর আমেরিকান ফিউচার’ নামের একটি সংগঠন সংকলনটি প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি উদার গণতন্ত্রের পক্ষে একটি দেশপ্রেমভিত্তিক, বহুত্ববাদী রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি করতে চায়। বইয়ের সম্পাদকেরা ‘আমেরিকান ইউনিভার্সালিজম’ বা সর্বজনীনতাবাদের ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছেন। এ ভাবনার শিকড় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময়কাল থেকে। তাঁরা এই ধারাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘এটি সেই আন্দোলন, যা সর্বজনীন স্বাধীনতা, অধিকার ও সুযোগকে ধারণ করে।’
আরও পড়ুন‘ট্রাম্প ডকট্রিন’ নয় ইরানের ৩টি কৌশলই সফল তাহলে১৮ জুলাই ২০২৫আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির দুটি প্রান্তেই এ ধারণার খুব একটা সমর্থন নেই। ডানপন্থী মাগা রিপাবলিকানরা একে ‘গ্লোবালিজম’-এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। এটি তাঁদের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ চিন্তার বিরুদ্ধে যায়। আবার বামপন্থীরা মনে করেন, দেশটির প্রতিষ্ঠাতাদের নথি থেকে নেওয়া এসব ধারণা ব্যবহার করলে সংখ্যালঘুদের বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলোকে মুছে ফেলা হয়।
কিন্তু আউট অব মেনি বইয়ের লেখকেরা মনে করেন, এ সর্বজনীনতা যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু।’ তাঁদের ভাবনাকে সহজ করে বুঝিয়ে বলা যায় এভাবে, ‘এই নতুন ধরনের দেশপ্রেম মানে এমন এক অনুভূতি, যেখানে কেউ নিজের দেশের জন্য গর্ববোধ করতে পারেন, আবার একই সঙ্গে দেশের ভুল ও অবিচারের কারণে লজ্জাও বোধ করেন। এর অর্থ, দেশ ভালো কাজ করলে গর্ব আবার অন্যায় করলে সেটাও স্বীকার করার সাহস।’
থিওডর রুজভেল্ট জনসন নামের একজন সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য লিখেছেন, তিনি এমন একটি দেশের জন্য শপথ নিয়েছিলেন, যে দেশ একদিকে বলে সবার জন্য সমান অধিকার (ইউনিভার্সালিজম), কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় তা মানে না। তিনি উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউইয়র্কের হারলেম এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ সেনাদের যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁদের ফরাসি সেনাবাহিনীর অধীন পাঠানো হয়েছিল, অর্থাৎ নিজের দেশের পতাকার নিচে যুদ্ধ করার সম্মান তাঁরা পাননি।
আরও পড়ুনট্রাম্প কি বিশ্বের সব ডানপন্থী নিয়ে জোট গড়তে চান১৭ জুলাই ২০২৫জনসনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের আদর্শ টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষকে শেখাতে হবে, কীভাবে দেশ নিয়ে গর্ব করা আর দেশের ভুল দেখে সেটাও স্বীকার করা—এই দুটি অনুভূতি একসঙ্গে রাখতে হয়। তবেই দেশ সত্যিকারের অর্থে উন্নত হতে পারে।
এই বইয়ের অনেক লেখাই তরুণ প্রজন্মের (মিলেনিয়াল ও জেনারেশন জি) কাছ থেকে এসেছে। যেমন হান্না কোইজুমি ও হিউ জোন্সের কথা বলা যেতে পারে। তাঁরা ‘সিভিক অ্যাটেনশন’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থার সহপরিচালক। তাঁরা তাঁদের প্রজন্মের (যাঁরা ইন্টারনেটের যুগে বড় হয়েছেন, যেখানে রাগ, হতাশা আর গোষ্ঠীগত বিদ্বেষ বাড়ছে) উদ্দেশে বলেছেন, তরুণদের উচিত হবে কেবল অভিযোগে না ভেসে গিয়ে নতুন করে গড়ার দায়িত্ব নেওয়া।
পুরো বইয়ে একটা বিষয় বারবার বলা হয়েছে। সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রে বিভক্তির চেয়ে ঐক্য অনেক বেশি জরুরি। তবে এই ঐক্য মানে সবাইকে এক রকম করে ফেলা নয়; বরং এটি এমন একটা একতা, যেখানে মানুষ আলাদা হলেও তারা একসঙ্গে মিলে দেশের জন্য কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ হতে চায়, যেখানে একটি সত্যিকারের সাংবিধানিক গণতন্ত্র হিসেবে সবাই সমান অধিকার, স্বাধীনতা আর ন্যায়ের সুযোগ পায়।
যাঁরা এখনো এই সর্বজনীন মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, তাঁদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন এখনো বেঁচে আছে। সেটি হারিয়ে যায়নি। সেটি লড়াইয়ের উপায় খুঁজছে।
অ্যান-মেরি স্লটার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক নীতিনির্ধারণ বিভাগের পরিচালক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প বল ক ন গণতন ত র এমন একট র জন ত ক এমন এক আম র ক র র জন ক জ কর র জন য স গঠন আদর শ ন একট
এছাড়াও পড়ুন:
ঐক্যবদ্ধ থাকুন, মুখ দেখাদেখি যেন বন্ধ না হয়: তারেক
মতভেদ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে এক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজাধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে বিএনপির বিজয় র্যালির আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, “রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বলতে চাই- বিভিন্ন ইস্যুতে মতভেদ থাকবে।এসব মতভেদ দূর করতে আমাদের আলোচনা চলবে। জাতীয় কোনো ইস্যুতে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়, সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। কারণ আমি বিশ্বাস করি ধর্ম, দর্শন, মত যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার।”
আরো পড়ুন:
জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের দোদুল্যমানতা কেটে গেছে: সালাহউদ্দিন
কাপাসিয়ায় আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে পারলেন না মোস্তাক
এ সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে সবার সহযোগিতা ও সমর্থন চান তিনি।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের আরো সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “নাগরিকদের কাছে আহ্বান রাখছি, নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদের সময় আমরা নিরাপদ ছিলাম না। আমাদের সন্তানরা নিরাপদ ছিল না। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। পুরো বাংলাদেশকে বর্বর বন্দিশালা বানানো হয়েছিল। গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকায় এমন হয়েছিল।”
গণতন্ত্র এবং দেশের জনগণের সামনে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ এসেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “চব্বিশের আন্দোলনের কারণে আসা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করা গেলে; জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারলে, ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে না। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না। আর কোনো রক্তাক্ত চব্বিশ আমাদের দেখতে হবে না।”
বিজয় মিছিল আয়োজন নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “পতিত ও পলাতক ফ্যাসিস্টের আমলে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। আজকের বিজয় মিছিল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা।”
ঢাকা/রায়হান/সাইফ