সপ্তাহের শেষে বড় পতনের মুখে পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজার। গতকাল শুক্রবার সেনসেক্স ও নিফটি ৫০—উভয় সূচকেরই বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে আরেকটি সূচক, ব্যাংক নিফটি। গতকাল তিনটি সূচকেই প্রায় ১ শতাংশ পতন হয়েছে।

গতকাল দিন শেষে সেনসেক্স সূচকের মান দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫৭ দশমিক ৭৯ (-৭৬৫.৪৭), নিফটি ৫০ সূচকের মান ২৪ হাজার ৩৬৩ দশমিক ৩০ (-২৩২.

৮৫) আর ব্যাংক নিফটির মান হয়েছে ৫৫ হাজার ০০৪ দশমিক ৯০ (-৫১৬.২৫)। খবর ইকোনমিক টাইমস

বিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট বাজারমূল্য₹৪৪৫ লাখ কোটি রুপি থেকে কমে গতকাল₹৪৪০ লাখ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে। সব খাতে ব্যাপক শেয়ার বিক্রির কারণে মাত্র এক অধিবেশনে বাজার মূলধন প্রায় পাঁচ লাখ কোটি রুপি কমে গেছে। সাপ্তাহিক হিসাবে দেখা গেছে, টানা ছয় সপ্তাহ সূচকগুলোর পতন অব্যাহত আছে। ৮ আগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে সেনসেক্স ও নিফটি ৫০—উভয় সূচকই প্রায় ১ শতাংশ করে পয়েন্ট হারিয়েছে।

গতকাল বড় ধাক্কা খেয়েছে এইচডিএফসি ও ভারতীয় এয়ারটেলের স্টক। ফলে আরও পতন হয়েছে সূচকের। সব খাতের সূচকেরই পতন হয়েছে গতকাল।

নিফটির অধিকাংশ খাতেই গত সপ্তাহে বড় পতন হয়েছে। নিফটি স্মল ক্যাপ ও মিড ক্যাপ যথাক্রমে ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও ১ দশমিক ১ শতাংশ পড়েছে। পুরো সপ্তাহের বিবেচনায় ব্যাংক খাত ভালো মুনাফার মুখ দেখেছে। এ ছাড়া ধাতুও কিছুটা লাভের মুখ দেখেছে। কিন্তু আইটি, ফাইন্যান্স, জ্বালানি, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস, এফএমসিজি ও ওষুধ খাতের বড় পতন হয়েছে।

গত সপ্তাহে একাধিক বড় কোম্পানির স্টকের দরপতন হয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের দরপতন হয়েছে ৭ শতাংশের মতো। বস্ত্র রপ্তানি কোম্পানি কেপিআর মিল, গোকলদাস এক্সপোর্ট, বর্ধমান টেক্সটাইল, ট্রিডেন্টের স্টকের দাম অনেকটাই কমেছে। উল্টো দিকে আশার ছবি দেখিয়েছে হিরো মোটোকর্প। গতকাল বেড়েছে এলআইসির দামও।

দ্য মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে ভারতের দুর্বল বাজার আগেই বড় ধাক্কা খেয়েছে। কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়া, অতিমূল্যায়ন ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি পুঁজি বেরিয়ে যাওয়া—এসব উদ্বেগ এখনো কাটেনি। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপ ও আক্রমণাত্মক অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারতের জিডিপি ১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

জিওজিত ইনভেস্টমেন্টসের গবেষণাপ্রধান বিনোদ নায়ার বলেন, মার্কিন শুল্ক ভারতের রপ্তানিতে কী প্রভাব ফেলবে—এ আশঙ্কায় ভারতীয় শেয়ারবাজার তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা টানা শেয়ার বিক্রি করায় দেশি সূচকের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।

নায়ার আরও বলেন, শুল্কসংক্রান্ত চলমান উদ্বেগের প্রভাব বিবেচনায় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিতে শুরু করেছে। ২০২৫ ও ২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। ফলে ভারতের বাণিজ্য ও সামষ্টিক অর্থনীতি ঘিরে যে অনিশ্চয়তা, তা কেবল বাড়ছেই।

এদিকে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও ধাক্কা খেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতের বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে। মার্চের পর থেকে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা ভালো হয়। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু জুলাই থেকে আবার বিদেশি বিনিয়োগ বেরিয়ে যাওয়ার ছবি সামনে এসেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জেরে আগস্ট মাসেও সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বড় পতন ন হয় ছ দশম ক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো শেয়ারের দরপতনে কমল সূচক ও লেনদেন

ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের মূল্য সংশোধনে আবারও বড় ধাক্কা খেয়েছে শেয়ারবাজারের সূচক ও লেনদেন। কয়েক দিনের ব্যবধানে লেনদেন প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমে গেছে। আর এই কয় দিনে সূচকও কমেছে ১০০ পয়েন্টের বেশি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ বৃহস্পতিবার ৬৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে গেছে। তাতে দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে। সূচকের এই পতনের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে কয়েকটি ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দরপতন। ঢাকার বাজারে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭০৬ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৮৪ কোটি টাকা কম।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের পতনে যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দরপতন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, পূবালী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ও প্রাইম ব্যাংক। এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে ডিএসইএক্স সূচকটি আজ প্রায় ২৯ পয়েন্ট কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনে। আজ ডিএসইতে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমেছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে সাড়ে ৬ পয়েন্টের বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এক মাসে শেয়ারবাজার উত্থানে ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এরপর কয়েক দিন ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে। তাতে সূচক ও লেনদেনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ জুন ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৩ টাকা। সেখান থেকে তা বেড়ে ৪ আগস্ট ৪৮ টাকায় উঠেছে। সেই হিসাবে এক মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ১৫ টাকা বা ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এরপর দুই দিন ধরে কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে এটির শেয়ারের। একই অবস্থা ব্র্যাক ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম, স্কয়ার ফার্মা, বিএসসি, পূবালী ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির বেশ কিছু শেয়ারের। এসব শেয়ারের দাম অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির পর এখন কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ২৮টিরই দরপতন হয়েছে। দাম বেড়েছে ৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫টির দাম। বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারের এই দরপতন সূচক ও লেনদেনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে কিছু শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির পর কিছুটা মূল্য সংশোধন হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেটিও এখন হচ্ছে শেয়ারবাজারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, কয়েকটি শেয়ারে ৩০-৪০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির পর বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ ওই শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। মূল্য সংশোধনে দাম কমার ফলে নতুন করে আবার ওই শেয়ারে বিনিয়োগ হবে। এভাবেই উত্থান-পতনে শেয়ারের দাম টেকসই হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো শেয়ারের দরপতনে কমল সূচক ও লেনদেন