পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে ২০ কেজি ওজনের বিরল প্রজাতির ‘বাদুড় মাছ’ ধরা পড়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাছটি মহিপুরের একটি মৎস্য আড়তে বিক্রির জন্য আনা হয়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সরোয়ার হোসেন মাছটি কিনে নেন।

জেলে মো. আবু হানিফ জানান, পাঁচ দিন আগে তিনি ইলিশ শিকারের জন্য সাগরে গিয়েছিলেন। চরবিজয়–সংলগ্ন এলাকায় জাল ফেললে মাছটি ধরা পড়ে। এ সময় প্রচুর ইলিশও জালে ওঠে। মাছটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রায় এক ফুট করে, তবে লেজ প্রায় দুই ফুট লম্বা। পুরুত্বও বেশি। এলাকায় এ মাছের তেমন চাহিদা না থাকায় তিনি ২৫০ টাকা কেজি দরে মোট পাঁচ হাজার টাকায় সরোয়ার হোসেনের কাছে বিক্রি করেন।

ক্রেতা সরোয়ার হোসেন বলেন, মাছটি ঢাকার বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হবে। বিরল আকৃতির মাছটি দেখতে আড়তে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ।

মহিপুরের জেলেরা জানান, এ ধরনের মাছ সচরাচর আড়তে দেখা যায় না, তাই চাহিদাও কম। স্থানীয় জেলেদের কাছে মাছটি ‘বাদুড় মাছ’ নামে পরিচিত।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞ মো.

কামরুল ইসলাম বলেন, এই মাছ সাধারণত ইন্দো-প্যাসিফিক ও ফিলিপাইন সাগরে বিচরণ করে। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরেও এদের পাওয়া যায়। সাদা পেট, কালো বা বাদামি পিঠ, লম্বা পাতলা লেজ, প্রসারিত মাথা এবং বাদুড়ের ডানার মতো দুটি পাখনা এদের বৈশিষ্ট্য। স্ত্রী প্রজাতি ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা ও ৯০ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে, পুরুষ তুলনামূলক ছোট।

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, এ মাছ একসঙ্গে ২ থেকে ১০টি বাচ্চা জন্ম দেয়। গর্ভকাল ৯ থেকে ১২ মাস। তারা ১৮০ মিটার গভীরতা থেকে অগভীর উপসাগর ও বালুময় তটরেখায় বাস করে। খাদ্য হিসেবে সমুদ্রের তলদেশে থাকা মলাস্ক, ক্রাস্টেসিয়ান ও ছোট মাছ শিকার করে। হাঙর গোত্রীয় হওয়ায় এবং পিঠের চামড়া মোটা থাকায় এ মাছ খাদ্য হিসেবে ততটা জনপ্রিয় নয়।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জগন্নাথের শিক্ষার্থী নূরনবী ক্যানসারে আক্রান্ত, ফুল বিক্রি করে সহায়তার উদ্যোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মীর নূরনবী কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। তবে অর্থসংকটে বন্ধ রয়েছে তাঁর চিকিৎসা। এ সংকট সমাধানে নূরনবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। এ জন্য ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। সেই অর্থ তুলে দেওয়া হবে নূরনবীর চিকিৎসায়।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করে নূরনবীর চিকিৎসা বাবদ অর্থ সংগ্রহ করতে দেখা যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের চত্বরে টেবিল–চেয়ার পেতে ফুল বিক্রি করেন তাঁরা। এরপর শহীদ মিনার, কলা অনুষদ, সামাজিক অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রাঙ্গণে হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করে নূরনবীর জন্য অর্থ সহায়তা নেওয়া হয়।

নূরনবী বর্তমানে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। পরে বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু পড়াশোনায় হাল ছাড়েননি নূরনবী। অদম্য সাহস ও স্বপ্ন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন। প্রতিদিন সাভার থেকে বাসে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন তিনি। এরই মধ্যে সাতটি সেমিস্টার শেষ করেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্যানসার এখন নূরনবীর ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়েছে।

ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আল শাহরিয়ার বলেন, ‘সবার সহায়তা নূরনবীর জন্য নতুন জীবনের আলো নিয়ে আসতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণার কাজ করছি। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালিকা লাগানো হয়েছে। সামনে আরও নতুন কিছু অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আসুন, মানবতার বন্ধনে আমরা সবাই এক হয়ে নূরনবীর পাশে দাঁড়াই।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকারের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘অনেকেই অনেকভাবে নূরনবীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। আমরা ভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহের চিন্তা করলাম। ফুলের বিনিময়ে অর্থ সাহায্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নূরনবীকে সহায়তা করা হবে কি না—জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কে এ এম রিফাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রকল্যাণ দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। এখানে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা শুধু দাপ্তরিক কাজে খরচ হয়। এখন নূরনবীর চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসার্ট আয়োজন করতে চেয়েছে তার সহপাঠীরা। সে ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ