জিরো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল আইনত দণ্ডনীয়: এনবিআর
Published: 10th, August 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে সব কয়টি ঘর ‘শূন্য’ হিসেবে পূরণ করে রিটার্ন দাখিল করা যায় বলে ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল বিষয়ক কিছু ভ্রান্ত ধারণার পোস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে এসেছে।
এসব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কোনো কোনো করদাতা তাঁদের আয়কর রিটার্নে আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের বিষয়ে অসত্য ঘোষণা প্রদান করে আসছেন। এসব জিরো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল আইনত দণ্ডনীয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর।
রবিবার (১০ আগস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়, করদাতাদের জানানো যাচ্ছে যে, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুসারে ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো প্রকার রিটার্ন দাখিলের বিধান নেই। আয়কর আইন অনুসারে একজন করদাতাকে তাঁর প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় অবশ্যই সঠিকভাবে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে।
করদাতার প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় প্রদর্শন না করে এর কোন একটি শূন্য অথবা সবগুলো তথ্য শূন্য হিসেবে প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ বে-আইনি এবং এটি একটি ফৌজদারী অপরাধ। করদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে তাঁর আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য প্রদর্শন না করে মিথ্যা বা অসত্য তথ্য প্রদান করলে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩১২ ও ৩১৩ অনুসারে করদাতাকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।
একজন করদাতার আয়, ব্যয়, সম্পদ বা দায় সংক্রান্ত বিষয়ে রিটার্নে সঠিক ঘোষণা প্রদান করা একজন করদাতার পবিত্র নাগরিক ও আইনি দায়িত্ব। করদাতার প্রকৃত আয়ের পরিমাণ আইনানুযায়ী করযোগ্য না হলে তাঁকে কোনো কর পরিশোধ করতে হবে না। তবে কর প্রদেয় না হলেও সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন না করে শূন্য আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় দেখিয়ে শুন্য বা জিরো রিটার্ন দাখিল করার কোন সুযোগ আয়কর আইনে নেই।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করে যে, করদাতা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে আয়কর রিটার্নে প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় প্রদর্শন করে দেশের উন্নয়নে গর্বিত অংশীদার হবেন। একইসাথে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত প্রতারনামূলক জিরো রিটার্নের ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে সুরক্ষিত রাখবেন।
ঢাকা/নাজমুল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আয়কর র ট র ন আয়কর আইন কর র ট র ন করদ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সেই ‘সুপারম্যান’ এখন ট্রাম্পপন্থী অভিবাসন এজেন্ট
লাল–নীল পোশাকে আকাশে উড়ে আসছেন তিনি, দিনে শান্ত স্বভাবের একজন সাংবাদিক, রাতে তিনি নায়ক— দুর্বল মানুষের রক্ষক, অন্যায়ের শত্রু। নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের পর্দায় ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ এই সুপারহিরো হয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেতা ডিন কেইন। তিন দশক আগের সেই জনপ্রিয় সুপারম্যান এখন আর আকাশে ওড়েন না, হাতে নেই অপরাধ দমনের কাল্পনিক শক্তি। তবে নিজের ভাষায় তিনি এখনো ‘ন্যায়ের পক্ষে’। আর সেই ন্যায় রক্ষার নতুন মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। খবর ইউএনবি
৬ আগস্ট ফক্স নিউজের উপস্থাপক জেসি ওয়াটারসের টকশোতে হাজির হয়েই চমকে দেন ৫৯ বছর বয়সী ডিন কেইন।
তিনি জানান, শিগগিরই আইসিইতে একজন অনারারি এজেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। আগে থেকেই তিনি একজন রিজার্ভ পুলিশ অফিসার এবং ডেপুটি শেরিফ ছিলেন। ‘আমি আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা আমাকে দলে নিতে রাজি হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আইসিই সঠিক কাজ করছে’ বলেন কেইন।
এই ঘোষণা আসছে এমন একসময়, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করেছেন। আইসিইর বাজেট বেড়েছে ৭৫ বিলিয়ন ডলার, লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যে ১০ হাজার নতুন এজেন্ট নিয়োগ। ট্রাম্পের বিখ্যাত ‘বিগ বিউটিফুল ওয়াল’ প্রকল্প থেকেই এসেছে এই বরাদ্দ।
ডিন কেইন প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। তাঁর যুক্তি, ‘আমাদের দেশে নিয়মকানুন আছে। সবাইকে চাইলেই ঢুকতে দেওয়া যায় না। হ্যাঁ, সুপারম্যান অবশ্যই এক ‘এলিয়েন’ কিন্তু গল্পের ভেতরে তার আগমনও একপ্রকার শৃঙ্খলার মধ্যে।’
কেইনের এই মন্তব্য ঘিরে অনেকেই তর্ক তুলেছেন, কারণ সাম্প্রতিক সুপারম্যান চলচ্চিত্রে চরিত্রটিকে একজন অভিবাসী হিসেবে সহানুভূতিপূর্ণভাবে দেখানো হয়েছে। কেইন অবশ্য মনে করেন, রাজনৈতিক বার্তা নয়; বরং ‘আইনের শাসন’ই হওয়া উচিত মূল বার্তা।
সমালোচনার ঝড়
এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কৌতুক অভিনেত্রী মার্গারেট চো সরাসরি বলেন, ‘তোমার নিজের পরিবার–ইতিহাসে জাপানি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা আছে, তবু কেন এমন সংস্থায় যোগ দিচ্ছ?’ টকশো ‘দ্য ভিউ’র সহ–উপস্থাপক আনা নাভারো পর্যন্ত তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে বিদ্রূপ করেন—যা আবার অন্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, আইসিই প্রায়ই আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে অভিযান চালায়। অনিবন্ধিত অভিবাসী তো বটেই, কখনো কখনো বৈধ বাসিন্দা ও নাগরিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এসব অভিযানের ভিডিও ধারণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নজিরও রয়েছে।
সুপারম্যান থেকে এজেন্ট—যাত্রার প্রেক্ষাপট
ডিন কেইন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত টেরি হ্যাচারের বিপরীতে ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ সুপারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেন। তত দিনে তিনি আমেরিকান পপ কালচারের অংশ হয়ে যান। এরপর অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
আগে বলা হয়েছে, এখন তাঁর নতুন পরিচয়—আইসিইর ‘অনারারি এজেন্ট’। নিজের ভাষায়, ‘আশা করি, আমার মতো অনেকে এগিয়ে আসবেন এবং এই দেশকে রক্ষায় সাহায্য করবেন।’
বিতর্কের শেষ নেই
কেইনের এই সিদ্ধান্ত তাঁর ক্যারিয়ারের আরেকটি আলোচিত অধ্যায় হয়তো, তবে এর প্রভাব দুই মেরুতেই স্পষ্ট। সমর্থকেরা তাঁকে দেশপ্রেমী বলছেন, আর সমালোচকেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ তাঁর সুপারম্যান ইমেজের সঙ্গে বেমানান।
তবে ডিন কেইনের কাছে এই বিতর্কের মূল্য নেই বললেই চলে। তাঁর চোখে, আকাশে উড়তে না পারলেও ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠা’ই আসল শক্তি, যা তিনি এবার বাস্তবের মাটিতেই প্রয়োগ করতে চাইছেন।