ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতির বাঁধে তীব্র ভাঙন, আতঙ্ক
Published: 10th, August 2025 GMT
গোপালগঞ্জে কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতি নদীর বাঁধে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে পাড়ের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। ভাটিয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট ও মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এরইমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাটিয়াপাড়া বাজারের মধুমতি নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে নেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। তবে বরাদ্দ পেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার অন্যতম বাজার ভাটিয়াপাড়া বাজার। বাজারটি গড়ে উঠেছে মধুমতি নদীর কোল ঘেঁষে। নদীবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপশি এ বাজারে রয়েছে রেল স্টেশন। হঠাৎ করে শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে মধুমতি নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা। পানির স্রোতে ভেসে গেছে নদী শাসনের জিও ব্যাগ ও ব্লক।
একসময় মধুমতি নদী ও ভাটিয়াপাড়া বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল উত্তর বঙ্গের সাথে রেল যোগাযোগ। এখান থেকে রাজবাড়ি-গোয়ালন্দ ঘাট এবং উত্তর বঙ্গের পার্বতিপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। নদীপথে খুলনা পর্যন্ত লঞ্চ ও নৌ যোগাযোগ চালু ছিল। সেই সময়কার উন্নত যোগাযোগের কারণে এখানে চারটি খাদ্য গুদাম গড়ে ওঠে। সেই সাথে ব্যাবসায়ীদের নিজস্ব শতাধিক গুদাম রয়েছে। পাশাপাশি গড়ে উঠেছে ছোট বড় এক হাজারেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, তহসিল অফিস ইত্যাদি।
দোকানপাট অন্য সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করলে মসজিদ, দোকান, সেতু ও রেলের আংশিক এলাকাসহ এসবই নদী গর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা এখানকার বাসিন্দাদের।
নদীপাড়ের চা দোকানদার মো.
স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মো. সজল সরদার বলেন, “এ বাজারে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করায় প্রতিনিয়ত ভাঙনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর আগেও কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছে এখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে জীবিকার একমাত্র উৎস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে বহু ব্যবসায়ীকে নিঃস্ব হতে হয়েছে। দ্রুত স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাই।”
রাইস মিল মালিক সিরাজ চৌধুরী বলেন, “গত দুই বছর আগে এই বাজারে সবার অজান্তে এক রাতে মাত্র তিন ঘণ্টার ভাঙনে ৩০টি দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ বছরে আবার হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, কখন কার দোকান চলে যায়। স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী মশিউর রহমান খান জানান, গত দশ বছর আগেই এখানে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করেছে। নদী শাসনের কাজ করার পর এই বাজারেই তিন দফা ভেঙেছে। নদীগর্ভে গেছে ব্লক ও জিও ব্যাগ। এ কারণেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।”
ব্যবসায়ী মো. জাকের মোল্যা বলেন, “শুনেছি তৎকালীন সময়ে মধুমতি নদীকে কেন্দ্র করেই গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভাটিয়াপাড়া বাজারটি গড়ে উঠেছিল। সেই সময়ে খুলনা, বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহাকুমা থেকে নৌ-পথে যোগাযোগ ও মালামাল আনা-নেওয়ার খরচ ছিল কম এবং সহজ। কিন্তু এ বাজারে নদী শাসনে তেমন কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছর ভাঙনের শিকার হতে হয় আমাদের।”
এরইমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ভাটিয়াপাড়া বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন শরীফ বলেন, “প্রতি বছর মধুমতি নদীর ভাঙনে ভাটিয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বাজার এলাকায় তিনবার বড় ধরনের ভাঙনের কারণে ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসী ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুনেছি পানি উন্নয়ন বোর্ড ছয় হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করবে। এভাবে জিও ব্যগ ফেলে ভাঙনরোধ করা সম্ভব নয়। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে আমাদের প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।”
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল জানান, ভাঙকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এরইমধ্যে ভাঙনরোধে ছয় হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “ভাটিয়াপাড়া বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এ বাজারটি রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস য় ব যবস য় র গ প লগঞ জ এরইমধ য উপজ ল র আম দ র ত এল ক আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় নিহত ৬৯ হাজার ছাড়াল
ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তিচুক্তির এক মাস পূর্ণ হয়েছে। তবে এ সময় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত শনিবারও উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত দুই বছরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় বুরেইজ শরণার্থীশিবিরে একজন ফিলিস্তিনি পুরুষ নিহত হয়েছেন। অপর দিকে ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় তথাকথিত ‘হলুদ লাইন’ অতিক্রম করার অভিযোগে দুজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ২৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হাজার ১৬৯ হয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা হাদার গোল্ডিন নামের একজন ইসরায়েলি সেনার মরদেহ উদ্ধার করেছে। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলার সময় আটক করা হয়েছিল। পরে তাঁর মৃত্যুর খবর জানা যায়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েলকে আরও পাঁচজন জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা হামাসের। গোল্ডিন তাঁদের একজন। হামাস জানিয়েছে, ওই স্থান থেকে ছয়জন ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করেছে তারা। গত শনিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস ও রেডক্রসের কর্মীদের রাফায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এলাকায় গোল্ডিনের মরদেহ খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।