কুয়াকাটায় জেলের জালে ধরা পড়ল বিরল প্রজাতির অ্যাঞ্জেল ফিশ
Published: 10th, August 2025 GMT
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলে আনোয়ার মাঝির জালে ধরা পড়েছে এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ নামের একটি বিরল প্রজাতির মাছ। কুয়াকাটা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে তাঁর জালে মাছটি ধরা পড়ে। আজ রোববার সকালে মহিপুর বন্দরে মাছটি আনা হয়।
এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ দেখতে আজ সকালে মহিপুর বন্দরে মানুষের ভিড় জমে যায়। মাছটি অনেকের কাছে অ্যাকুয়ারিয়াম ফিশ নামেও পরিচিত। এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ রঙিন ও দৃষ্টিনন্দন একটি সামুদ্রিক মাছ, যা মূলত উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরের পরিবেশে বাস করে। মাছটির আকার ১৬ ইঞ্চির মতো। গায়ে গাঢ় নীলের ওপর হলুদ অনুভূমিক দাগ, মুখে নীল-কালো মাস্কের মতো প্যাটার্ন।
জেলে আনোয়ার মাঝি বলেন, এক সপ্তাহ আগে এফবি জারিফ তারিফ নামের একটি ট্রলার নিয়ে মাছ ধরার জন্য তিনি সমুদ্রে যান। জাল ফেলে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। পরে জাল টেনে তোলার পর দেখা যায়, ট্রলারে অন্যান্য মাছের সঙ্গে এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ ধরা পড়েছে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান শিকদার বলেন, ‘এমন মাছ আমার জীবনে দেখিনি। মাছটি দেখতে অবিকল অ্যাকুয়ারিয়ামে থাকা মাছের মতো। তবে আমি বাসার সবাইকে দেখানোর জন্য মাছটির কয়েকটি ছবি তুলে নিয়েছি।’
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ছগির আকন বলেন, ‘প্রথম দেখার পর মাছটি আমি বাসায় নিয়ে এসেছি। তবে এ–জাতীয় মাছ এই প্রথম দেখলাম। মাছটি খাওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
পরিবেশ, প্রতিবেশ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের গবেষণা সহকারী বখতিয়ার রহমান জানান, মাছটির ইংরেজি নাম অ্যাঞ্জেল ফিশ। বৈজ্ঞানিক নাম pomacanthus imperator। এটি উজ্জ্বল রঙিন একটি সামুদ্রিক মাছ। এর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবালপ্রধান অঞ্চল। সর্বোচ্চ প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হতে পারে। মাছটি সাধারণত প্রবালপ্রধান, লবণাক্ত, উষ্ণ সমুদ্রাঞ্চলে থাকে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন মাছ সচরাচর ধরা পড়ে না। কারণ, এই উপকূলীয় অংশ মূলত কাদামাটি, বালুময়। প্রবালপ্রাচীর তেমন নেই। তবে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আন্দামান সাগরসংলগ্ন ও মিয়ানমার উপকূলের কাছাকাছি কিছু প্রবালপ্রাচীর থাকায় সেখানে এ মাছ বিচরণ করে।
বখতিয়ার রহমান আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্রোতের ধরন বদলের কারণে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতি তাদের আবাসক্ষেত্র প্রসারিত করছে। এর কারণে হয়তো এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে।
এই মাছ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও সামুদ্রিক প্রাণিবিশেষজ্ঞ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাঞ্জেল ফিশ অ্যাকুয়ারিয়ামের একটি জনপ্রিয় মাছ। আকর্ষণীয় চেহারা ও শান্ত স্বভাবের জন্য এরা পরিচিত। এ মাছের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এদের শরীর চ্যাপটা এবং পাখনাগুলো লম্বা ও ডানা আকারে বিস্তৃত, যা ‘অ্যাঞ্জেল’ নামের সার্থকতা প্রমাণ করে। এরা রুপালি, কালো, হলুদ ও বিভিন্ন নকশার সঙ্গে মিশ্রিত রঙে পাওয়া যায়। এরা মাংসাশী এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের খাবারসহ রক্ত কৃমি ও ছোট ছোট চিংড়ি খেয়ে থাকে। সঠিকভাবে যত্ন করলে একটি অ্যাঞ্জেল ফিশ ৮-১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় দুদকের গণশুনানি চলাকালে মঞ্চে জুতা নিক্ষেপ
বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি চলাকালে মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছেন এক ব্যক্তি। তবে, জুতাটি মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। রবিবার (১০ আগস্ট) বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলার টিটু মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। ওই ব্যক্তির নাম ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডল।
কী কারণে জুতা মেরেছেন? জানতে চাইলে ছাকোয়াত হোসেন বলেন, ‘‘আজকের গণশুনানিতে আমার অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, কোনোভাবে অভিযোগ জানাতে পারছিলাম না। তাই জুতা মেরেছি, যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলার সুযোগ পাই। এতে আমার যে শাস্তি হয় হবে। কথা বলার সুযোগ না পেলেও জুতা মারতে পেরেছি এটা ভেবে তৃপ্তি পাব। এমন চিন্তা থেকে জুতা মেরেছি।’’
আরো পড়ুন:
মাদারীপুরে ২ কলেজে দুদকের অভিযান
সাবেক মন্ত্রী জাবেদ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা
ছাকোয়াত হোসেন
কী অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি পেশায় একজন মৎস্যচাষি। বিভিন্ন জায়গায় পুকুর এবং বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। ২০১২ সালে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গারামারা গ্রামের তিনটি বিল ও তিনটি পুকুর বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লিজ নিয়ে এবং ২১ লাখ টাকা খরচ করে মাছ চাষ শুরু করি। এরই মধ্যে, বগুড়া-১ আসনের তৎকালীন এমপি আব্দুল মান্নান স্থানীয় শালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির ভোটপ্রথা তুলে দিয়ে তার শ্যালক লিটনকে সভাপতি বানাতে চান। আমি এর প্রতিবাদ করে বলেছিলাম, শালিকা গ্রাম থেকে কেউ স্কুলের সভাপতি হবেন, আপনার বা আপনার শ্যালকের সভাপতি হতে চাওয়াটা আমাদের কাছে ভালো লাগছে না। এটাই ছিল আমার অপরাধ। পরে এমপির শ্যালক ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের দিয়ে ২০১৫ সালের মে মাসের ১৭ তারিখে আমার মাছের খামার দখল করে নেয়। এরপর থানা, জেলা, এসপি, ডিসি, ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, কোনো কাজ হয়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, কোথাও বিচার পাইনি। সব জায়গায় থেকে অসহযোগিতা পেয়েছি। চেয়েছিলাম, আজকের গণশুনানিতে অভিযোগ জানাব। সেই সুযোগও পাচ্ছিলাম না। তাই, আমার ভেতরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জুতা নিক্ষেপের পরে দুদকের লোকজন আমাকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেয়। পরে আবার অনুষ্ঠানে বসতে দেওয়া হয় এবং বলা হয়, মঞ্চে ডেকে অভিযোগ শোনা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আমাকে মঞ্চে ডাকেনি।’’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একুশে টেলিভিশনের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘ছাকোয়াত হোসেন নামের ওই ব্যক্তি আমার পাশেই বসে ছিলেন। হঠাৎ তিনি মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘জুতা নিক্ষেপের ঘটনার বিষয়ে কিছু শুনিনি। ওই ব্যক্তি হয়তো সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন করেননি, তাই তার অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত নই।’’
ঢাকা/এনাম/রাজীব