Prothomalo:
2025-11-17@07:37:58 GMT

৪০০ বছরের শাহেনশাহ গুহা

Published: 11th, August 2025 GMT

জনবিরল সৈকতে সাগর থেকে রোজ উঠে আসে এক পরি। অপূর্ব সুন্দরী এই পরির নাম হিমপরি। সাগরের পাশেই খাড়া পাহাড়ের ঝরনায় সখীদের নিয়ে জলকেলিতে মেতে ওঠে হিমপরি। আর তার নামেই ঝরনার নামকরণ ‘হিমপরির ঝরনা’। সেই হিমপরির ঝরনাকেই লোকে বলে হিমছড়ি। হিমছড়ির খুব কাছেই ঘন জঙ্গল।

একদিন সেখানে এসেই উপস্থিত হয় আরব বণিক শাহেনশাহ। তার বাণিজ্যতরিটি এই উপকূলেই ডুবে গেছে। ক্লান্ত–শ্রান্ত শাহেনশাহ হিমপরিকে দেখেই প্রেমে পড়ে যায়। হিমপরির রূপে মুগ্ধ আর বশীভূত হয়ে জঙ্গলে হারিয়ে যায় সে। শিকার হয় হিংস্র বন্য প্রাণীর আক্রমণের। আর আক্রমণ থেকে বাঁচতে সে আশ্রয় নেয় একটা গুহায়। সেই গুহাই আজকের শাহেনশাহ গুহা।

৪০০ বছর ধরে কক্সবাজারে এই লোককথা মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে ছয় কিলোমিটার গেলে ‘দরিয়ানগর ট্যুরিজম ইকোপার্ক’। তবে সবাই চেনে ‘দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি’ নামে। সেখানেই এক পাশে হিমছড়ি পাহাড়, আরেক পাশে ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রাকৃতিক গুহা। এই গুহাই লোককথার শাহেনশাহ গুহা। পাহাড়ের নিচে সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে যেতে হয় গুহায়। ভেতরে ঢুকলেই একটা ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যায়। গুহার ভেতরের পাথরের ভাঁজের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় পাহাড়ের ওপরের জঙ্গল। কানে আসে সাগরের গর্জন আর গাছের পাতার মর্মর। হিমপরি আর শাহেনশাহের গল্প হঠাৎই যেন অনেক জীবন্ত মনে হয়। আনমনা হয়ে গুহার বাইরে তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, কেউ পেছনে এসে হাত রেখেছে কাঁধে।

এমন অপার্থিব অভিজ্ঞতার লোভে গুহাটি দেখতে কয়েক বছর আগেও প্রতিদিন শত শত পর্যটকের সমাগম ঘটত। এখন হাতে গোনা কয়েকজন দর্শনার্থী আসেন। গুহাটি সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতা এর অন্যতম কারণ।

কক্সবাজারের কবি কামরুল হাসানের কাছে শাহেনশাহ গুহা একটা বিশেষ স্থান। তাঁর মতে, এখানে ঐতিহ্য, প্রকৃতি আর লোককথা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, একটা সময় এই শাহেনশাহ গুহাকে ঘিরে দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিকদের মেলা বসত। কবিরা পাহাড়চূড়ার টংঘরে বসে লেখালেখি করতেন। দেশ-বিদেশের শতাধিক কবি-সাহিত্যিককে নিয়ে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লিতে বার্ষিক সম্মেলন হতো। এখন সেই পরিবেশ নেই।

দরিয়ানগর গুহার ফটকে স্থাপন করা হয়েছে ইটপাথরের বিশাল একটি হাঙর ভাস্কর্য। মুখ হাঁ করে থাকা হাঙর দেখে দর্শনার্থীরা থমকে দাঁড়ান। ভাস্কর্যটির সঙ্গে ছবি তোলেন। এরপর পাহাড়ের দিকে কিছু দূর গেলেই সামনে পড়ে একটি সিঁড়ি। ওপরে টাঙানো একটি সাইনবোর্ড, তাতে লেখা, ‘আমরা এখন দরিয়ানগরে’। এর কিছু দূরে পাহাড়চূড়ায় নির্মিত একটি ভবন, যেখানে শৌচাগার-বিশ্রামাগার রয়েছে। ভবন থেকে দক্ষিণ দিকে গুহায় যেতে হয় পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে। সব মিলিয়ে এক অন্য রকম যাত্রা। তবে গুহাটির বর্তমান অবস্থা হতাশ করছে পর্যটকদের।

দিন কয়েক আগে গিয়ে দেখা গেল, গুহার মুখ থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পুরো পথটি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। গুহার দুই পাশ ও ওপর থেকে মাটি খসে পড়ছে। গাছপালা ভেঙে পড়ে আছে গুহার মুখে। এসব মাড়িয়েই সুড়ঙ্গটি অতিক্রম করতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। গুহার ভেতরে পলিথিন, ক্যান, সিগারেট ফিল্টার, প্লাস্টিকের বোতল—কী নেই? ময়লা-আবর্জনা এবং মশা-মাছির উৎপাত চারদিকে।

সুড়ঙ্গসহ পর্যটনকেন্দ্রটি দেখভাল করেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.

হাবিবুল হক। সুড়ঙ্গসহ পল্লির বেহালের কারণ জানতে চাইলে হাবিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বরাদ্দ নেই বলে সুড়ঙ্গ সংস্কার ও মেরামত করা যাচ্ছে না। গাছ ভেঙে সুড়ঙ্গে পড়লে কিংবা সুড়ঙ্গে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকলে সেসব পরিষ্কার করার দায়িত্ব ইজারাদারের। পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বও ইজারাদারের। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইজারার মেয়াদ শেষ হবে। তখন সুড়ঙ্গের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ সংস্কার, যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ মপর

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ