মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে কুয়ালালামপুর গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুর ২টায় বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
মধ্যরাত থেকে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি, মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে মালয়েশিয়া
সফরসূচি অনুযায়ী, সফরের প্রথম দিন আজ প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার প্রদান ও আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে। পরদিন পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বলেন, “বৈঠকের পরপরই উভয় সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি পর্যায়ের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে পারস্পরিক দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে।”
তিনি বলেন, “এ সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি বিষয়ক সহযোগিতা, ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠন (এফবিসিসিআই ও এনসিসিআইএম), বিএমসিসিআই ও মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান এমআইএমওএসের মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (আইএসআইএস) মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত মোট পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।”
এছাড়া দু’দেশের মধ্যে হালাল ইকোসিস্টেম, উচ্চশিক্ষা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক মোট তিনটি ‘নোট বিনিময়ের’ সম্ভাবনার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, “দু’দেশের সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন থাকবে। একইদিন ১২ আগস্ট বিকালে প্রধান উপদেষ্টা একটি ব্যবসায় ফোরামে অংশ নেবেন। এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
শাহ আসিফ বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে নতুন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ, অধিক সংখ্যক পেশাধারীদের নিয়োগ, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
সফরের তৃতীয় দিনে ১৩ আগস্ট ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার (ইউকেএম) আচার্য এবং নেগেরি সেমবিলান রাজা তুয়াংকু মুহরিয ইবনি আলমারহুম তুয়াংকু মুনাওয়ির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি তুলে দেবে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে একটি স্মারক বক্তৃতাও দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সফরকালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, জ্বালানি সহযোগিতা, হালাল অর্থনীতি, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, কৃষি, শিক্ষা ও জন-যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকেরা।
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।
খাজা নাজিবুল্লাহর সমর্থকেরা বেলা ১১টার দিকে নজিপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায় নওগাঁ-নজিপুর সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা থেকে আসা নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেন। মানববন্ধনের আগে জিরো পয়েন্ট এলাকায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তি সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সময়ে হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলনে খাজা নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিলেন। তাঁরা নওগাঁ-২ আসনে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে খাজা নাজিবুল্লাহকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।
নজিপুরের সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, নাজিবুল্লাহ ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বারবার কারা নির্যাতিত নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই পত্নীতলা ও ধামইরহাট বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অথচ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। খাজা নাজিবুল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলে তৃণমূল বিএনপি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী সব আন্দোলনে যাঁরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা সবাই খাজা নাজিবুল্লাহর পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হোক—এটি শুধু বিএনপির নেতা–কর্মীদের চাওয়া নয়, দুই উপজেলার সব মানুষের চাওয়া। তাই এখানে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে আহ্বান জানাতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’
মনোনয়নবঞ্চিত খাজা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। আমরা কেউ দলের ঊর্ধ্বে নই। দলের জন্য কাজ করছি। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। দলই সবার আগে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য রেজাউল ইসলাম, ধামইরহাট মহিলা দলের সহসভাপতি নাহিদা সুলতানা, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ধামইরহাট শাখার আহ্বায়ক রকিবুল হাসান, পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু তাহের প্রমুখ।