চার দিন পর চন্দ্রঘোনায় ফেরি চলাচল শুরু, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলছে
Published: 11th, August 2025 GMT
কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়ার পর পানির তীব্র স্রোতের কারণে বন্ধ হয়ে যায় কর্ণফুলী নদীর চন্দ্রঘোনা ঘাটে ফেরি চলাচল। চার দিন পর আজ ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। এতে স্বাভাবিক হয়েছে রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাঙামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার পরিমাণ কমায় কর্ণফুলী নদীতে স্রোত কমেছে। এতে ফেরি চলাচলে ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আজ সকাল সাতটা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ার কারণে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। তবে জরুরি প্রয়োজনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা-শীলঘাটা হয়ে যান চলাচলের সুযোগ ছিল।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কর্ণফুলী নদীর পানির স্রোত কমেছে। তাই ফেরি চলাচলে ঝুঁকি নেই বলা যায়। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়েছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে রাঙামাটিতে বৃষ্টি নেই। উজান থেকে পাহাড়ি ঢলও থেমে গেছে। এর মধ্যে কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হ্রদেও পানির চাপ কমেছে। আজ বেলা দেড়টায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি ফটক আড়াই ফুট করে খোলা ছিল।
পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, আজ বেলা একটায় কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ১০৭ দশমিক ৫৪ ফুট এমএসএল। এর আগে গত কয়েক দিনে হ্রদে ১০৮ দশমিক ৮৪ ফুট এমএসএল পর্যন্ত পানি ছিল। হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে পানিবন্দি মানুষ ২৩ হাজার
ধীরে ধীরে কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর। তবে, এখনো তা বিপৎসীমায় রয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) পানি কমতে থাকায় কৃত্রিম এই হ্রদে থাকা জলকপাটগুলো সাড়ে তিন ফুট থেকে কমিয়ে তিন ফুট খোলা রাখা হয়। ফলে প্রতি সেকেন্ড ৫৮ হাজার কিউসেক পানি কর্নফুলী নদীতে পড়ছে। বর্তমানে রাঙামাটি জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ২৩ হাজার ১২০ জন মানুষ।
এদিকে, কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে তৃতীয় দিনের মতো শনিবার বন্ধ ছিল চন্দ্রঘোণা-রাইখালী ফেরি চলাচল। এ কারণে রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে রাজস্থলী উপজেলা ও বান্দরবান জেলা সদরের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। দুর্ভোগে পড়েন এই রুটে চলাচলকারীরা।
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পানির স্তর বাড়তে থাকে কাপ্তাই হ্রদে। এই বছর সর্বোচ্চ পানির স্তর ১০৮.৮৪ এমএসএল রেকর্ড করা হয়। এ কারণে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট সাড়ে তিন ফুট খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত হ্রদে পানির স্তর ছিল ১০৮.৪০ এমএসএল। ছয় ইঞ্চি কমিয়ে বর্তমানে জলকপাটগুলো তিন ফুট খোলা রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাঙামাটিতে ২০ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৮ হাজার মানুষ
কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি, বাঁধের গেট খুলল সাড়ে ৩ ফুট
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) পর্যন্ত জেলায় ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। শনিবার সেই সংখ্যা বেড়ে ২৩ হাজার ১২০ জন হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, হ্রদে পানি কমতে শুরু করলেও কাচালং এবং চেঙ্গী নদীর পানি উপচে কিছু এলাকায় প্রবেশ করায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
পানি কমতে থাকায় সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘাইছড়িতে মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এখনো পুরোপুরি পানি কমেনি লংগদু, বরকল ও রাঙামাটি সদরের আসামবস্তি, পুরানপাড়া, শান্তি নগরের নিম্নাঞ্চলে। বৃষ্টি না হলে দ্রুত পানি কমার আশা
স্থানীয়দের।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বন্যার্তদের জন্য ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ২ হাজার ৮৯৪ জন মানুষ অবস্থান করছেন। জেলায় বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ৮৩৭টি, ২৩৯ হেক্টর ফসলি জমি, ২০০টি গবাদি পশু, ৫৯টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানান, বৃষ্টি কমে আসায় কমছে হ্রদের পানি। শনিবার সকালে হ্রদে পানি ছিলো ১০৮.৪০ এমএসএল। পানিবন্দি মানুষের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৩৩৬ প্যাকেট শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৯ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
ঢাকা/শংকর/মাসুদ