উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান ও জনমুক্তির প্রশ্ন

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

মূল্য: ৮০০ টাকা; পৃষ্ঠা: ৩৮৪

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রথম থেকে চতুর্থ অধ্যায়জুড়ে রয়েছে উনসত্তরের পটভূমি, নানা দফার রাজনৈতিক দাবি, লাহোর প্রস্তাবসহ পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাস্তবতা বিশ্লেষণ। পঞ্চম থেকে অষ্টম অধ্যায় মূলত আইয়ুব শাসনের অন্তঃসারশূন্যতা, পতন ও অভ্যুত্থানের সূচনার অন্তর্বর্তী প্রবাহ নিয়ে বিস্তৃত। নবম থেকে ত্রয়োদশ অধ্যায় বিশ্লেষণ করেছে আন্দোলনের মুখ্য চরিত্রদের অবস্থান—ভাসানী, শেখ মুজিব, বামপন্থী ও কমিউনিস্টদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব, বিভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতা। আলোচিত হয়েছে রুশপন্থী ও চীনপন্থী ধারার মধ্যকার রাজনৈতিক দূরত্বও। চতুর্দশ অধ্যায় ও উপসংহার পাঠককে নিয়ে যায় সেই সারমর্মে—আন্দোলনটি থামেনি; বরং থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যার ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও একটি অভিজাতনিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয়েছে।

মূল প্রস্তাব ও লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি

এই গ্রন্থে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইতিহাসকে কেবল অতীত বর্ণনা হিসেবে দেখেননি; তিনি ইতিহাসকে দেখেছেন একটি রাজনৈতিক প্রকল্প ও সম্ভাবনার কাঠামো হিসেবে। তাঁর যুক্তি, উনসত্তরের অভ্যুত্থান একটি গণবিপ্লবের সম্ভাবনা বহন করলেও বামপন্থীদের নেতৃত্বদানে অক্ষমতা, বিভ্রান্তি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সেই বিপ্লবের বাস্তবায়ন ব্যাহত করে। ফলে শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

লেখক দ্বিজাতিতত্ত্বকে ভ্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতবর্ষকে একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এ ছাড়া তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের ৬ দফা, ন্যাপের ১৪ দফা, বাম ও কমিউনিস্টদের ৮ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ বিশ্লেষণ করেছেন। একই সঙ্গে আলোচনা করেছেন দুটি অর্থনীতির তত্ত্ব, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব এবং দল ও ব্যক্তির ভূমিকাও।

পাঠমূল্য

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এই গ্রন্থ কার্যত ইতিহাসের ভেতরে জাতির মুক্তির প্রশ্ন খোঁজার এক প্রচেষ্টা। এটি একটি রাজনৈতিক বিবেচনার দলিল, বিকল্প সম্ভাবনার ইশারা। এটি একদিকে ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের জন্য হতে পারে একটি তথ্যনির্ভর রেফারেন্স বই; অন্যদিকে সাধারণ পাঠকের জন্যও একধরনের বোধচর্চার অনুশীলন। বইটির পাঠ প্রতিটি চিন্তাশীল নাগরিকের জন্য আবশ্যক, বিশেষ করে যাঁরা বর্তমান বাংলাদেশে জন–অধিকার বাস্তবায়নে আগ্রহী। এখানে কেবল ইতিহাসের ধারাবিবরণ নেই; আছে তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক মূল্যায়ন, যা পাঠককে যুক্তিবাদী সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই বই শুধু পাঠ্য নয়, আলোচ্যও—জাতীয় পর্যায়ে এর অন্তর্নিহিত শিক্ষাকে অনুশীলনে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ