কবিতার সেই আসমানীদের হয়তো রসুলপুরে গিয়ে বাস্তবে দেখা সম্ভব হবে না। তবে ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা সরিনা খাতুনকে (৫০) দেখলে মনে হবে যেন আসমানীরই আরেক প্রতিচ্ছবি।

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের গুদাম মাঠে পরিত্যক্ত রেলের জমিতে বসবাস করেন সরিনা খাতুন। তার ঘরের সামনে স্তুপ করে রাখা লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ)। এই লাকড়ি বিক্রির টাকাতেই জীবন চলে তার।

রাস্তার পাশে খাল লাগোয়া একটি স্থানে কয়েকটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পুরনো টিন ও পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে থাকার ঘর। পলিথিনের নিচে মাটিতে প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে তৈরি হয়েছে ঘুমানোর জায়গা। তারই অদূরে রান্নার চুলা। একেবারে বসবাসের অযোগ্য। তারপরও এরই মধ্যে কোনোমতে টেনেটুনে জীবন পার করছেন তিনি।

সরিনা খাতুন জানান, তার বাবা শেখ আব্দুল হালিম শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে এখানে তাদের বসাবস। বাবা হারান ছোট বেলায়, মাও নেই। স্বামী নোয়াজ আলী মেকারও প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছেন। সেই সময় থেকে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুই সন্তানকে বড় করেছেন। এক ছেলে-এক মেয়ে, দুজনেরই সংসার হয়েছে। এখন আর মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারেন না। তাই জীবিকা নির্বাহে বেছে নিয়েছেন লাকড়ি বিক্রির পেশা।

রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকা থেকে পরিত্যক্ত লাকড়ি সংগ্রহ করেন সরিনা। নিজ ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে সামান্য লাভে সেই লাকড়ি বিক্রি করে দৈনিক একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা আয় হয়। তাতেই চলে সংসার। লাকড়ি বিক্রি না হলে বাজার হয় না, চুলায় জ্বলে না আগুন। অনাহারেই থাকতে হয়। কোনো সরকারি সহায়তাও পান না তিনি। পুরনো টিনের জোড়াতালি আর পলিথিনে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করতে হয় প্রতিনিয়ত।

ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে সে ব্যাপারে কথা বলতে চাননি তিনি। বিয়ের পর নিজের সংসার নিয়েই চলা কঠিন হয়ে পড়েছে ছেলের। তাকে কীভাবে দেখবে? এটুকু বলেই থেমে যান তিনি। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার ভোটার হলেও বিধবা ভাতার কার্ড তার ভাগ্যে জোটেনি।

বর্তমান সরকারের কাছে তার চাওয়া- বসবাসের জন্য একটি ছোট ঘর আর ব্যবসার জন্য কিছু পুঁজি। এছাড়া বিধবা ভাতার একটি কার্ডও চান তিনি। এসব পেলে বাকি জীবনটা হয়তো কিছুটা ভালোভাবে কাটাতে পারবেন এই সংগ্রামী নারী।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো.

মাসুক মিয়া বলেন, “আবেদন করলে তাকে একটি বিধবা ভাতার কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।”

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আফজল আলী বলেন, “আমি নিঃস্বার্থভাবে তৃণমূল মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি। এজন্য লোকজন ভোট দিয়ে আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল। বর্তমানে দায়িত্বে না থাকলেও ঘরে বসে নেই। তৃণমূল মানুষের পাশে আছি। এখানে অসহায় সরিনা খাতুনের কষ্টের কথা জেনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তার জন্য কিছু একটা করতে চাই।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পল থ ন বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতালে নেই এন্টিভেনম, ২ সপ্তাহে সাপের কামড়ে মৃত ৫

ঠাকুরগাঁওয়ে সাপের কামড়ে গত দুই সপ্তাহে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে এন্টিভেনম না থাকায় সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন রোগীরা।

সর্বশেষ শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত এলাকার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের স্কুলছাত্র সাকিবুল ইসলাম (পঞ্চম শ্রেণি) বিষধর সাপের কামড়ে মারা যায়।

জানা যায়, সাপে কামড়ানোর পর তাকে প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী, পরে হরিপুর, এরপর ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল এবং সবশেষে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এসব হাসপাতালের কোথাও এন্টিভেনম মজুত ছিল না। পরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় সাকিবুলের।

সাকিবুলের বাবা ইসরাইল উদ্দীন বলেন, “চারটা হাসপাতালে নিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। কোলের উপরেই ছেলেকে হারালাম। আর যেন কোনো বাবার বুক খালি না হয়, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক।”

অন্যদিকে, সাকিবুলের মতো পীরগঞ্জের স্কুলছাত্র তারেক, রাণীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী এবং হরিপুরের গৃহবধূ সম্পা রানীসহ গত দুই সপ্তাহে জেলায় সাপের কামড়ে মারা গেছে অন্তত পাঁচ জন।

সম্পা রানীর স্বামী জিতেন বলেন, “হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওঝার কাছে যেতে হয়েছে। তবুও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। দেড় বছরের সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি।”

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আজমুল হক বলেন, “বর্ষার সময়ে সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি হয়। প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন পাঠানো হয় বর্ষা শেষের দিকে। অথচ আগে থেকেই মজুত রাখা উচিত।”

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, “চাহিদা পাঠানোর পরও কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে এন্টিভেনম পাওয়া যায়নি। সেখানেও সংকট রয়েছে। চেষ্টা করছি দ্রুত আনার।”

সাপের কামড়ে মৃত্যুর এই ধারাবাহিক ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলে। চিকিৎসক ও সচেতন মহল বলছে, বর্ষার শুরুতেই প্রতিটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম সরবরাহ করতে হবে।

ঢাকা/হিমেল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ