জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রুবেল মিয়া হৃদয়।
গত রবিবার (১০ আগস্ট) রাতে তিনি ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
রুবেল মিয়া হৃদয় তার পদত্যাগপত্রে জানান, এনসিপির ফরিদপুর জেলার কার্যক্রমে অনিয়ম, জুলাই বিপ্লবের নীতি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত এবং দলের বর্তমান পথচলা তার ব্যক্তিগত আদর্শের সঙ্গে মেলেনি। এ কারণে গভীর হতাশা ও বিচলিত মনে তিনি দলের সব ধরনের কার্যক্রম ও পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
মাদারীপুরে এনসিপির ৪ নেতার পদত্যাগ
টিটিসির অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করলেন শিক্ষার্থীরা
সোমবার (১১ আগস্ট) ফরিদপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলা সাংবাদিকদের জানান, তারা রুবেলকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। ফলে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।
গত ৫ জুন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটি অনুমোদিত হয়। এতে সৈয়দা নীলিমা দোলাকে প্রধান সমন্বয়কারী, ৫ জনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং বাকি ১৭ জনকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ঢাকা/তামিম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদত য গ জ ত য় ন গর ক প র ট ত র পদত য গ সমন বয়ক র এনস প র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দাম্পত্য–জীবনে মতভেদ হলে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, দাম্পত্য জীবন মানে একজন আরেকজনের মধ্যে শান্তি খোঁজা, একে অপরকে ভালোবাসা ও দয়া দেখানো। সম্মান, বোঝাপড়া, সহানুভূতি—এই গুণগুলো ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকে না।
নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪এক দম্পতির স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী প্রতিটি বিষয়কে ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’ বলে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো শুধু আল্লাহর সামনে দায়িত্ব পালন করছি, তুমি মানো বা না মানো, সেটা তোমার ব্যাপার।’
কিন্তু স্ত্রী এতে আহত হন, কারণ এতে তিনি বোঝেন—স্বামী আসলে তাঁর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ইসলাম শিক্ষা দেয়—পরামর্শ যেন হয় কোমল ভাষায়, স্নেহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪)
অন্য হাদিসে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫)
আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫পরামর্শ ও সমাধান কী হতে পারে?এমন পরিস্থিতি প্রায় দম্পতির মধ্যেই হয়। তাই একে জটিল করে দেখা উচিত নয়। পারস্পরিক কল্যাণ ভাবনার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার:
আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’১. আলোচনার পথ খোলা রাখা
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতভেদ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হয় যখন একপক্ষ সবসময় আদেশ করে আর অন্য পক্ষ কথা বলার সুযোগই পায় না। ভালোবাসার সম্পর্কে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’ আর যদি স্বামী হন, তাহলে বুঝুন—আপনার স্ত্রীর মন খুলে কথা বলার প্রয়োজন আছে। আপনি তাঁর মালিক নন, বরং তাঁর সঙ্গী।
২. ‘পরামর্শ’ আর ‘নিয়ন্ত্রণ’ এক নয়
অনেকে পরামর্শের নামে স্ত্রীকে চাপে ফেলেন। সেটা ঠিক না। পরামর্শ তখনই কাজে আসে, যখন তা ভালোবাসা আর সম্মানের সঙ্গে দেওয়া হয়। কাউকে সম্মান করা মানে এই নয় যে তাঁর সব কথা মানতেই হবে। ইসলাম আমাদের চিন্তা ও বিচারবোধ দিয়েই সম্মানিত করেছে।
৩. বড় সিদ্ধান্তগুলো একসঙ্গে নিন
বিয়ের আগে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না—যেমন: পোশাক, হিজাব বা নিকাব নিয়ে মতভেদ, সন্তান পালনের পদ্ধতি, সামাজিক আচার ইত্যাদি। এসব নিয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। একসাথে বসে ঠিক করুন—কোন বিষয়গুলো তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলোতে একে অপরকে ছাড় দেওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন২৫ জুন ২০২৫৪. সমঝোতা ও সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করুন
আপনার স্বামী যদি বলে, ‘আমি তো দায়িত্ব পালন করে দিচ্ছি, তুমি মানো বা না মানো সেটা তোমার ব্যাপার’, তখন আপনি বলতে পারেন: ‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। আমিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই চিন্তা করি। আসুন আমরা একসাথে বুঝে নেই কী করলে আল্লাহ বেশি খুশি হবেন, আর আমাদের সম্পর্কটাও সুন্দর থাকবে।’
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫৫. একান্ত প্রয়োজনে পারিবারিক পরামর্শ নিন
দাম্পত্যে কিছু সমস্যা এমন হয় যা বাইরের একজন বোঝাতে পারলে দুজনেই স্বস্তি পায়। একজন বিশ্বস্ত ইসলামিক কাউন্সেলর বা বুঝদার অভিভাবকের সহায়তা নিতে পারেন। বিয়ে মানে শুধু দায়িত্ব নয়, বরং একে অপরের অন্তরকে জানার, বোঝার এবং নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার সম্পর্ক।
মতভেদ থাকবেই। কিন্তু সেটা যেন ভালোবাসা ও সম্মানের ভিতরে থেকে সমাধান হয়। কারও মুখ বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে নিচু দেখিয়ে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একসাথে বসে কথা বলুন, ভুল বুঝলে ক্ষমা চান, একজন আরেকজনের হৃদয় খোলার সুযোগ তৈরি করুন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শান্তিপূর্ণ, ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবন গঠনের তাওফিক দিন।
আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪