চলতি বছরের শুরুর দিকে ঘোষিত তিন অঙ্কের শুল্ক আরোপ আরো ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ফলে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ বাড়ল। শুল্ক কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগেই নতুন এই সময়সীমার ঘোষণা দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, এ বছরের শুরুর দিকে ঘোষিত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আরো তিন মাসের জন্য স্থগিত থাকবে।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে সুপারশপে বন্দুকধারীর হামলায় শিশুসহ নিহত ৩

বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র

এর আগে গত মাসে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উভয় পক্ষই বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেছিল। তখন চীনের প্রধান আলোচক বলেছিলেন, বিরতি বজায় রাখতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন তারা।

সোমবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে শুল্কবিরতির মেয়াদ বাড়ান। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখবে এবং চীনও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিরতি বজায় রাখবে। 

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে বর্তমান ৩০ শতাংশ শুল্ক এবং চীন মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই বাড়তি সময় বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, ‘অন্যায্য বাণিজ্যনীতি’ মোকাবিলা এবং মার্কিন রপ্তানিকারকদের জন্য চীনা বাজারে প্রবেশাধিকারের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।

বিবিসি বলছে, ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের যেকোনও বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে সর্বোচ্চ। আলোচনায় জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বিষয়, চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি, রাশিয়ান তেল ক্রয় এবং উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষত চিপ বিক্রিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা হবে।

ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জয়-জয় সহযোগিতাই সঠিক পথ; দমন ও নিয়ন্ত্রণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

নারীকে টোকেন হিসেবে রাখার মানসিকতা গ্রহণ করা হবে না: নাজিফা জান্নাত

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণের জায়গাগুলোতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনের সংগঠক নাজিফা জান্নাত। তিনি বলেন, সংসদীয় আসনে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার প্রশ্ন এলে তাঁরা পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরতে চান। এই যে নারীকে টোকেন হিসেবে রাখার মেকানিজম বা মানসিকতা, আমরা গ্রহণ করব না।

নাজিফা বলেছেন, ‘অভ্যুত্থানের সময় আমরা নারীরা সামনে ছিলাম। তখন আমাদের মিছিলের সামনে রাখলে আন্দোলন ঠিকমতো হচ্ছিল। নারীদের থেকে সাপোর্ট সিস্টেম পাওয়া যাচ্ছিল। তখন কোথাও নারীদের “না” করা হয়নি। কিন্তু এত বড় এই রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পরে যখন নারীবিষয়ক সংস্কারের আলাপ হচ্ছে, যখন নারীবিষয়ক সংস্কারের প্রধানকে খুবই বাজে ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে, যেটা অশ্রাব্য, যেটা আসলে মুখে উচ্চারণও করা যায় না। এ রকমভাবে কটাক্ষ করার পরও আমরা কোনো প্রতিরোধ দেখতে পাই না।’

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথাগুলো বলেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র তুলে ধরেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।

বৈঠকে নাজিফা বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে সংসদে নারীর আসন নিশ্চিতকরণ নিয়ে যে সংস্কার করার কথা ছিল, সেটি না করে তারা আগের জায়গায় ফেরত গিয়েছে। এই প্রস্তাব আমরা নিশ্চয়ই প্রত্যাখ্যান করব। কারণ, এতে আমাদের রীতিমতো অপমান করা হয়েছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটা প্রধান এজেন্ডা (আলোচ্য বিষয়) হচ্ছে ‘সংস্কার’। সংস্কার শব্দটি শুনতে শুনতে আমাদের কান পচে গেছে।’

শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে না উল্লেখ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এই সমন্বয়ক এর কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি যে গত ১২টি সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের বেশি নারী সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। অথচ এখানে আমরা কথা বলছি ৫০ শতাংশ আসনের। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি জরিপে ৪৬ হাজারের বেশি মানুষের মতামত তুলে আনা হয়েছে। সেখানে ৭৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ মানুষ মতামত দিয়েছেন যে তাঁরা নারী আসনে সরাসরি ভোট দিয়ে তাঁদের নারী প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে চান। এখানে জনমতের বিষয়টি স্পষ্ট।’

নাজিফা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার শুরুতে দেখছি যে বিএনপি, এনসিপিসহ অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলই ১০০টি নারী সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা একমত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ঝামেলা লাগার কারণ হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার আসলে প্রচণ্ড পক্ষপাতপূর্ণ (বায়াসড)। যে রাজনৈতিক দলের সমর্থক বেশি, যাদের পেশিশক্তি বেশি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, এ সরকার তাদের পক্ষ নেয়। প্রথম দিকে সরাসরি ভোটে নারী আসন নিয়ে সব দল একমত হলেও, এখন বিএনপি বলেছে তারা আসলে এমনটি চায় না। অথচ ২০০১ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে নির্বাচিত হয়ে এলে তারা সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করবে। এখন হয়তো তাদের মনে হচ্ছে সরাসরি নির্বাচনে আসা নারীরা তাদের আনুগত্য করবে না। এ ক্ষেত্রে ঐকমত্য গঠনের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে নাগরিক সমাজসহ অন্যান্য যত ধরনের নারী সংস্থা রয়েছে, তাদের সরাসরি সরকারকে চিঠি দেওয়া উচিত। জানানো উচিত, এত দিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেও সবার চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়নি সরকার।’

আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নারীকে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম২ ঘণ্টা আগে

বিএনপিকে এ ধরনের পশ্চাদ্‌গামী (রিগ্রেসিভ) চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নাজিফা বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব জানিয়েছে, সেখানে তাদের একমত হওয়া উচিত। তারা যে প্রস্তাবটি দিয়েছে, সেটি খুবই প্রগতিশীল। এটি গ্রহণ করলে আমরা নারীর ইকুয়ালিটির পাশাপাশি ইকুইটিও নিশ্চিত করতে পারব; অর্থাৎ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নারীর অংশগ্রহণের জায়গাটি আমরা নিশ্চিত করতে পারব।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নিয়েছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীকে টোকেন হিসেবে রাখার মানসিকতা গ্রহণ করা হবে না: নাজিফা জান্নাত