আদালতে জবানবন্দি দিলেন মেজর সাদিকুলের স্ত্রী জাফরিন
Published: 12th, August 2025 GMT
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ‘গোপন বৈঠকের’ সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার সুমাইয়া জাফরিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ মঙ্গলবার তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এই গোপন বৈঠকের ঘটনায় সেনা হেফাজতে থাকা মেজর সাদিকুল হকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন। ৭ আগস্ট তাঁকে আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আজ তাঁকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করে পুলিশ।
সুমাইয়া জাফরিনের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জেহাদ আদালতকে লিখিতভাবে জানান, মেজর সাদিকুলের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন একটি বহুজাতিক কোম্পানির আঞ্চলিক কর্মকর্তা। তিনি গত ৮ জুলাই বসুন্ধরার কনভেনশন হলে গোপন সভায় সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। সেই মিটিংয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী অংশ নেন। গোপন সভা চলাকালে কনভেনশন হলের সিসিটিভির ডিভিআরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, এ ছাড়া সুমাইয়ার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএস, কাঁটাবনের রেস্তোরাঁ, পূর্বাচলের রেস্তোরাঁয় আওয়ামী লীগ ও ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নিয়ে গোপন সভা করেছেন। তিনি অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের ডাটা এন্ট্রি, বিভিন্ন গোপন কোড তৈরি করা, অনলাইনে সিগন্যাল অ্যাপ ও হোয়াটসঅ্যাপে সংগঠনকে একত্র করে আসছিলেন।
অবশ্য মেজর সাদিকুলের স্ত্রী জাফরিনের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল নিরপরাধ।
গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। তাতে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
গত ৩১ জুলাই সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, মেজরকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরদিন ১ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা ওই সেনা কর্মকর্তাকে ১৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্যাপন
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।
আরো পড়ুন:
কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি
চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি
ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।
তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্যাপিত হবে জন্মদিন।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়।
যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে।
দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত