আট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে নাঙ্গলকোটে ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন
Published: 12th, August 2025 GMT
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে চার ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের জন্য মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। এ ঘটনার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বক্সগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি সম্মেলনের জন্য একই আঙিনায় থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠান বক্সগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, বক্সগঞ্জ আলিম মাদ্রাসা ও বক্সগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল। আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের সম্মেলনের জন্য ভোলাইন বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনের মাইকের আওয়াজের কারণে পাশের ভোলাইন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানও বন্ধ ছিল। বটতলী ইউনিয়নের সম্মেলনের জন্য বটতলী এম এ মতিন উচ্চবিদ্যালয় ও বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল। আর জোড্ডা ইউনিয়নের সম্মেলনের জন্য জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল।
জানতে চাইলে ভোলাইন বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপির সম্মেলনের জন্য আজকের এক দিন পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ, সম্মেলন হলে তো আর পাঠদান করা সম্ভব না। তাই প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে আমার হাতে থাকা তিন দিনের ছুটি থেকে এক দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।’
বক্সগঞ্জ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই আঙিনায়। দলীয় সম্মেলনের কারণে আজকে তিনটি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ছিল। তবে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়েছি। দলীয় সম্মেলনে অনেক মাইকের আওয়াজ থাকে, এমন পরিবেশে পাঠদান সম্ভব নয়।’
জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় অনুষ্ঠানে মাইকিংয়ের আওয়াজ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আজকে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুসের দাবি, কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানই তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেননি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আজই আমি জানতে পেরেছি বিএনপির সম্মেলনের কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সমস্যার কথা বলেছেন। এরপর তাঁদের বলেছি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের হাতে থাকা তিন দিনের বিশেষ ছুটি থেকে এক দিনের ছুটি আজকে দেখানোর জন্য। এ ছাড়া এ বিষয়ে আর কিছু জানি না আমি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলাইন বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিএনপির লোকজন চাইলে অন্য কোথাও তাঁদের সম্মেলন করতে পারত। এই সম্মেলনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজির আহম্মদ ভূঁইয়া সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলার সব ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনিয়নগুলোর দ্বিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রার্থী সঠিক ভোটার তালিকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এ–সংক্রান্ত ১৬টি ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের এমন ঘোষণার পরও মঙ্গলবার উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের (সুমন), সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও অংশগ্রহণ করেন।
স্থগিত করার পরও কীভাবে সম্মেলন হচ্ছে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজির আহম্মদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং উপজেলার আহ্বায়ক। কিন্তু কীভাবে সম্মেলন হচ্ছে, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গফুর ভূঁইয়া (কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও স্থানীয় সাবেক সাংসদ আব্দুল গফুর ভূঁইয়া) আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে বিএনপির সম্মেলন করছেন বলে জেনেছি। আমি সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর ঢাকায় চলে এসেছি।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বিএনপির সম্মেলন প্রসঙ্গে নজির আহম্মদ বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে দলীয় কার্যক্রম করা কোনোভাবেই উচিত নয়। তাঁরা কীভাবে করছেন বা জেলার নেতারা সেখানে কীভাবে গিয়েছে—তাঁরাই সেটা ভালো বলতে পারবেন।
এসব বিষয়ে জানতে বিএনপি দলীয় স্থানীয় সাবেক সাংসদ আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল করা হলে সজীব আহমদ নামে এক ছাত্রদল নেতা কল রিসিভ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আব্দুল গফুর ভূঁইয়া সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় নির্দেশনা হচ্ছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রেখে দলীয় সম্মেলন বা কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। আমরা নাঙ্গলকোটে আছি। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে কি না সম্মেলনের কারণে, এটা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের সম্মেলন ঘোষণা করার ও দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবার মতামতের ভিত্তিতে ইউনিয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি (নজির আহম্মদ ভূঁইয়া) কেন এমনটা করেছেন ও এমন কথা বলছেন, আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ল ইন ব জ র স প রথম আল ক ব এনপ র স কর মকর ত ন র জন য উপজ ল র ইউন য ন ন ব এনপ অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যালবামের নাম ‘প্রাণ-ত’, এনজেল বললেন...
প্রথম মৌলিক গান গেয়েই তারকাখ্যাতি পান এনজেল নূর। ‘যদি আবার’ শিরোনামের গানটি ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতায়ও আলোচিত হয়েছে। আরেক মৌলিক গান ‘তিল’ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। দুই গানেই নিজের জীবনকে গল্প বলার ঢঙে সামনে এনেছেন তিনি। এবার আর একক গান নয়, পুরো অ্যালবামে হাত দিয়েছেন এনজেল। তাঁর প্রথম অ্যালবামের নাম হবে ‘প্রাণ-ত’।
অ্যালবামের এই ব্যতিক্রমী নামকরণ বিষয়ে জানতে চাইলে এই তরুণ গায়ক বলেন, ‘গানগুলো আমার একদম প্রাণের কাছের, ফলে অ্যালবামের নাম ‘প্রাণ-ত’। এতে প্রাণজুড়ানো কিছু গান থাকবে, যেখানে কষ্ট বা সুখকে না এড়িয়ে অনুভব করার কথা বলা হয়।’
এনজেল নূর