জুলাই সনদের ক্ষেত্রে সরকারকে এক বিন্দুও ছাড় দেবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ছাড় দিয়েছি। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি। জুলাই সনদে কোনো ছাড় হবে না। এক পার্সেন্ট ছাড়ও জুলাই সনদে দেওয়া হবে না।’

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুব শক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা জনগণের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। যে নতুন বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি। সেটিতে গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে, স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে পারবে না। রাষ্ট্র কাঠামোকে গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তুলব। সে জুলাই সনদ আমরা এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিব না।’

২০২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রজন্মকে প্রতারিত করতে সকল ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ’৭২ পরবর্তী বাংলাদেশে কীভাবে লুটপাট হয়েছে। কীভাবে রক্ষী বাহিনী তৈরি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি ’৯০–এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে যে প্রতিশ্রুতি ছাত্র সমাজকে দেওয়া হয়েছিল, সেটা রক্ষা করা হয়নি। ২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে, গণ-অভ্যুত্থানের প্রজন্মকে প্রতারিত করতে সকল ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কিন্তু আমরা বলতে চাই সমীকরণ এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। ফলে যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছে, তারা ভুল পথে হাঁটছে। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে আছে।’

নাহিদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন, ভোটাধিকারের জন্য আমাদের লড়াই ছিল। কিন্তু আমরা এও বলেছি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হবে। বাংলাদেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে না পারে। দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে নিজেদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি না হয়। তাহলে আরেকটি ১/১১ আসবে। কারণ আমরা ইতিহাসে এটাই দেখেছি।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন,তাঁরা মনে করেন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বসে করতে হবে এবং সেই সংস্কৃতি বাংলাদেশের কায়েম করতে হবে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয় তাহলে লাভবান হবে অরাজনৈতিক শক্তি। লাভবান হবে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে স্থিতিশীলতার স্বার্থে গত এক বছরে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি, বৈষম্যবিরোধী শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি বারবার ছাড় দিয়ে গেছে। কিন্তু ছাড় দিতে দিতে আমরা শেষ প্রান্তে এসেছি, এবার আর ছাড় দিব না। আমরা এবার আদায় করে নেব।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহীদদের রক্তের ওপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে প্রতিশ্রুতি আদায় না করে এই সরকার যেতে পারবে না। সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম জ ল ই সনদ র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে

সম্প্রতি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গণতন্ত্র শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন।

যেকোনো রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্র ও নীতি-কর্মসূচির ভিত্তিতে। কিন্তু আমাদের নেতা-নেত্রীরা দেশবাসীকে গণতন্ত্রের সবক দিতে যতটা উদ্‌গ্রীব, দলের গণতন্ত্রায়ণ নিয়ে ততটাই উদাসীন। তারেক রহমানের এ বক্তব্যে যদি সেই উদাসীনতা কাটানোর সদিচ্ছা প্রকাশ পায়, আমরা স্বাগত জানাই।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর বাইরে অনেক অনিবন্ধিত দল আছে, যারা নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকুক আর না-ই থাকুক, তাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। তারা যে জনগোষ্ঠীর সমর্থন চায়, তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়। মানুষ দলটির নীতি-আদর্শের পাশাপাশি নেতৃত্ব গঠনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও দেখতে চাইবে। বিশেষ করে দলটি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি কতটা মেনে চলছে, সেসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি কম থাকায় এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন প্রতিটি দলের সব স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়, যা ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো দলই সেই শর্ত পূরণ করেনি। বাংলাদেশে কিছু দল আছে, তারা নারী নেতৃত্বের ঘোর বিরোধী। তারা কমিটিতে নারীর উপস্থিতি দেখতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব দল দশকের পর দশক নারী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে, সেসব দলও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। এ কারণে কোনো দলের কোনো স্তরে ১০ শতাংশ নারী নেতৃত্বের দেখা পাওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়।

যে রাজনৈতিক দল জনগণকে নেতৃত্ব দেবে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের কর্মকাণ্ডে কেন জবাবদিহি থাকবে না। একনায়ক পদ্ধতিতে দল পরিচালিত হওয়ার পরিণাম কতটা বিপজ্জনক হয়, তার প্রমাণ আমরা নিকট অতীতে কিংবা তারও আগে বহুবার পেয়েছি। তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানসিকতার দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে দলে গণতন্ত্রায়ণের কথা বলেছেন, সেটি সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য। প্রতিটি দল পরিচালিত হতে হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। সেই সঙ্গে যেসব দলের গঠনতন্ত্রে দলীয় প্রধানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা পরিবর্তন করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও দলে গণতন্ত্রায়ণের বিষয়টি সামনে আসে। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক দলের গণতন্ত্রায়ণের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ মুহূর্তে সেই সুযোগ না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব গঠনের কাজটি এগিয়ে নেওয়া।

বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা যখন দলে গণতন্ত্র সংহত করার কথা বলেছেন, তখন সেই দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কতটা মজবুত, দলটির নেতৃত্বের উচিত সেটা খতিয়ে দেখা। বিএনপির তৃণমূল স্তরে যে নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তার জন্য নেতৃত্ব গঠনের দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। যে দলটি ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে চাইছে, সেই দলটির নেতৃত্ব দলের গণতন্ত্রায়ণের বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে
  • ইসি অভিযান থেকে রাহুলদের আটক, পরে ছেড়ে দিল পুলিশ