জয়নাল হাজারী কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 13th, August 2025 GMT
ফেনীর জয়নাল হাজারী কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দফাগুলো দাবি বাস্তবায়ন না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে কলেজ মাঠে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরে স্মারকলিপি দেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ক্যাম্পাস রাজনীতি, চলবে না চলবে না’, ‘দলীয় রাজনীতির ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আরো পড়ুন:
বিসিএসে অযৌক্তিক অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
উত্তরবঙ্গের রেলপথ আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জয়নাল হাজারী কলেজে ছাত্র রাজনীতির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। যা কলেজের শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন কলেজের শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কমিটি গঠনের চেষ্টা করছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে কলেজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
তারা বলেন, আমরা কলেজের অফিসিয়াল পত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাম্পাসে সব ধরনের গোপন ও প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি করছি। পাশাপাশি গত ১১ আগস্টের ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্ট সংশয় দূর করতে কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল এলাকায় অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, “শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। কলেজটি যেহেতু দীর্ঘদিন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ছিল, সে হিসেবে গভর্নিং বডি থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও ক্যাম্পাস রাজনীতি মুক্ত রাখতে একমত। এই বিষয়ে আমরা গভর্নিং বডির সঙ্গে একটি সভা করব। আগামী রবিবারের (১৭ আগস্ট) মধ্যে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।”
জয়নাল হাজারী কলেজে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত সোমবার (১১ আগস্ট) প্রার্থিতা ফরম বিতরণের মধ্য দিয়ে কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তারপর থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল জয়ন ল হ জ র র জন ত ক কল জ র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
ব্র্যাক ব্যাংক যেভাবে মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে
ব্যাংক শব্দটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে ব্যস্ত ক্যাশ কাউন্টার, নানা ধরনের অ্যাকাউন্ট বা হিসাব, টাকার ভল্ট, ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ; আর সুদের যত জটিল হিসাবনিকাশ। তবে ব্র্যাক ব্যাংক এদিক থেকে কিছুটা ভিন্ন। শুধু আর্থিক লেনদেন নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নত করতেও নীরবে কাজ করে যাচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক।
‘ব্র্যাক ব্যাংক অপরাজেয় তারা’ তেমনই একটি উদ্যোগ। উচ্চশিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্য দূর করার লক্ষ্য সামনে রেখে শুধু নারী শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষাবৃত্তি দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের মতো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ব্র্যাক ব্যাংক মোট ৬৬৮ নারী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের অনেকেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধার মুখেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এই বৃত্তির মাধ্যমে।
প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই সমাধান তৈরি করাও ব্র্যাক ব্যাংকের মানবিক দায়িত্ববোধের অংশ। এই বিশ্বাস থেকে স্বাস্থ্য খাতেও একাধিক অর্থবহ উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিবন্ধিতা ও প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম। ব্র্যাক ব্যাংক ‘অপরাজেয় আমি’ নামে একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তার আওতায় ঠাকুরগাঁও ও বগুড়া জেলায় গ্রামীণ হেলথকেয়ার সার্ভিসেসের সঙ্গে অংশীদারত্বে বিনা মূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের মাধ্যমে ১২ হাজার ৮০০ জনের বেশি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। এতে করে এই প্রান্তিক মানুষগুলো তাঁদের দৃষ্টির সঙ্গে ফিরে পেয়েছেন সামাজিক মর্যাদাও।
আমাদের বৃহৎ রপ্তানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক খাত। পোশাকশিল্পের কারখানায় অনেক শ্রমিক দীর্ঘ সময় ধরে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করে যান। এটি তাঁদের উৎপাদনক্ষমতা ও জীবনমান কমিয়ে দেয়। এ বাস্তবতা বদলাতে ব্র্যাক ব্যাংক ‘অপরাজেয় আমি’ উদ্যোগের আওতায় ভিশনস্প্রিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি পোশাক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানায় ১৩ হাজারের বেশি শ্রমিকের চোখের পরীক্ষা করিয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৮০০ শ্রমিক বিনা মূল্যে পেয়েছেন জীবনের প্রথম চশমা।
কিডনির অসুখ একটি যন্ত্রণাদায়ক ও ব্যয়বহুল রোগ। এ রোগে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীদের পাশে দাঁড়াতে ব্র্যাক ব্যাংক ২০২৪ সাল থেকে সিলেটের কিডনি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ৪ হাজার ৭৮৮টি ডায়ালাইসিস সেবা দিয়েছে। পাশাপাশি সেখানে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টও স্থাপন করতে অর্থায়ন করেছে। ব্র্যাক লিম্ব অ্যান্ড ব্রেইস সেন্টারের মাধ্যমে ৩২৫ জন মানুষকে দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম অঙ্গ বা ব্রেইস।
ব্র্যাক ব্যাংক বিশ্বাস করে, অন্তর্ভুক্তি মানে শুধু সহানুভূতি নয়, সুযোগ তৈরি করা। এই বিশ্বাস থেকে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ডেফের (বিএনএফডি) সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, শ্রবণপ্রতিবন্ধী নারীদের সেলাই ও পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বার্তা দিচ্ছে—সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে কেউই আর বাদ যাবে না।
গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের, বিশেষ করে নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসা ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। দেশে এসএমই ব্যাংকিংয়ের পথপ্রদর্শক হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিলে এক লাখ নারী উদ্যোক্তাকে অর্থায়ন ও বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। এই নারীরাই এখন ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট চালাচ্ছেন, নিচ্ছেন ডিজিটাল ঋণ, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং নিজেরাই গড়ে তুলছেন টেকসই ব্যবসা।
ব্র্যাক ব্যাংকের কৃষিকেন্দ্রিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের ২৬টি জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ জন কৃষক এখন সহজে ঋণ পাচ্ছেন। উইগ্রো ও আইফার্মারের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় ব্যাংকটি জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি কার্যক্রমকেও বাস্তব করে তুলছে। বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা নিয়েও নতুনভাবে ভাবছে ব্র্যাক ব্যাংক। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সাশ্রয়ী হোম লোন ‘ঠিকানা’। এর মাধ্যমে বড় শহরের বাইরের ২৯০ জন উদ্যোক্তা নিজেদের জন্য একটি স্থায়ী আবাস গড়ে তুলতে পেরেছেন।
ব্র্যাক ব্যাংক বিশ্বাস করে, সফলতার প্রকৃত মাপকাঠি সম্পদের পরিমাণে নয়; বরং দেশের ও মানুষের সমৃদ্ধির জন্য অবদানের মাধ্যমেই সফলতা নির্ধারিত হয়। জীবন বদলে দেওয়ার এমন অসংখ্য গল্প নিয়েই ২৪ বছর ধরে ব্যাংকিং খাতের শীর্ষস্থানে পৌঁছেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ইকরাম কবীর
হেড অব কমিউনিকেশন, ব্র্যাক ব্যাংক