সিলেটের আরেক পর্যটন এলাকা জাফলংয়েও পাথর লুট করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালুর পাশাপাশি পাথর উত্তোলন করছে অসাধু চক্র। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো প্রতিবাদকারীদের চাঁদাবাজ বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
জাফলং সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এর গেজেট প্রকাশ করা হয়।
ইসিএ ঘোষণার পর জাফলংয়ে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পাথরের মজুত পরিমাপের মধ্যে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে সংরক্ষিত এলাকায় পাথর পর্যবেক্ষণ করা হতো। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৬ জুলাইয়ে করা পরিমাপ অনুযায়ী, জাফলংয়ে পাথর মজুত ছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি পাথর লুট হয়েছে জাফলংয়ে। দাবি করা হয়, রাজনৈতিক ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়ে যায়, যার বাজার মূল্য শত কোটি টাকার বেশি। এ সময় পাথরের সঙ্গে বালুও লুট করা হয়।
এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর দুটি মামলা দায়ের করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সিলেটের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (পরিবেশ) ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মামুনুর রশীদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.
মামলায় জাফলং থেকে ১২০ কোটি টাকার পাথর লুটের কথা উল্লেখ করা হয়। গোয়াইনঘাট থানায় দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন—জাফলং এলাকার চৈলাখেল গ্রামের বাসিন্দা ও সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক (পরে পদ স্থগিত) রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ, জাফলং বাজারের বাসিন্দা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও বিলুপ্ত হওয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ ৯২ জন। আসামিদের মধ্যে অন্তত ৭০ ভাগ বিএনপির সমর্থক এবং ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থক। তবে, এই চক্র এখনো বালু ও পাথর লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই পাথরখেকোরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মামলা হলেও পাথর লুট থেমে নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বালুমহাল ইজারা দেয় সিলেট জেলা প্রশাসন। পিয়াইন নদীর বালুমহাল লিজ নিয়ে বালুর সঙ্গে পাথরও তুলছে ইজারাদার চক্র। মূলত, বালু নয়, পাথরের দিকেই তাদের চোখ।
পশ্চিম জাফলংয়ের বাসিন্দা ইব্রাহীম মিয়া বলেছেন, বালুমহালের ইজারা সাইনবোর্ড মাত্র। আসলে পাথরই তাদের টার্গেট। পুলিশ জড়িত থাকায় কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে চাঁদাবাজ বানিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, গ্রেপ্তার করা হয়। এ ভয়ে অনেকে মুখ খুলছেন না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেছেন, বিগত সময়ে প্রশাসন কঠোর হওয়ার কারণে জাফলং তার হারানো সৌন্দর্য ফিরে পেতে যাচ্ছিল। ৫ আগস্টের পর সব বদলে গেলে। মানুষজনও হিংস্র হয়ে উঠল। সেই থেকে পাথর লুট থেমে নেই।
তিনি বলেন, পাথর লুটপাটে কারা জড়িত, সবাই জানে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন কঠোর হয় না, সেটাও সবার জানা।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমি সন্তান বাংলাদেশ’-এর সংগঠক শুয়াইবুল ইসলাম বলেছেন, প্রশাসন কঠোর হলে লুটপাট ঠেকানো যেত। লুটের পর মায়াকান্না করে কোনো লাভ নেই। যদি কিছু করতে হয়, মরার আগেই করা ভালো।
জাফলংয়ে পাথর লুটপাটের বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই।
লুটপাটের ঘটনায় কয়জন আসামিকে ধরেছেন, জানতে চাইলে বলেন, আমরা অভিযান চালাই। অভিযানের খবর পেয়ে ওরা চলে যায়। বুধবারও অভিযান হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পাথর লুটের সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেছেন, ৫ আগস্টের পরে লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে বলব, ওদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেছেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। আইন প্রয়োগ করছি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। বালুমহাল আগ থেকেই ইজারা দেওয়া হতো। এরা বালুর কথা বলে পাথর তুললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেছেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কারো কারো নাম পাওয়া যাচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী কারো জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামীতেও আমরা কঠোর থাকব।”
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ য় ইনঘ ট থ ন ব এনপ র বল ছ ন ল টপ ট জ ফল য় ট র পর
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৯৩
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জেলা পরিষদসমূহে ৯ম ও ১০ম গ্রেডের ৯৩টি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদনপ্রক্রিয়া চলবে এক মাস। আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে অনলাইনে। আগামী বুধবার (১৯ নভেম্বর ২০২৫) আবেদন শুরু হবে।
পদের নাম ও বিবরণ১. সহকারী প্রকৌশলী
পদসংখ্যা: ৪৪
শিক্ষাগত যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল বা পানিসম্পদ কৌশল বিষয়ে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি।
গ্রেড: ৯
বেতন স্কেল: ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা
২. উপসহকারী প্রকৌশলীপদসংখ্যা: ৪৯
শিক্ষাগত যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত ইনস্টিটিউট বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিভিল উড বা কনস্ট্রাকশন বা এনভায়রনমেন্ট বিষয়ে অন্যূন ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা।
গ্রেড: ১০
বেতন স্কেল: ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা
বয়সসীমা১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ১৮-৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে।
আবেদনের নিয়মhttp://lgd.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের ফিআবেদন ফি ২০০ টাকা। তবে অনগ্রসর নাগরিকদের জন্য সব গ্রেডে আবেদন ফি ৫০ টাকা করে।
আবেদনকারী প্রার্থীর বয়স ১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ১৮-৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে