তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত অগ্রহণযোগ্য
Published: 13th, August 2025 GMT
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির কোনো ধরনের মতামত গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।
তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (হু এফসিটিসি) আর্টিকেল ৫.৩ এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই অবিলম্বে সরকারকে স্টেক হোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
বুধবার (১৩ অগাস্ট) রাজধানীতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘জনস্বার্থ বনাম তামাক কোম্পানির প্রভাব: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন তরান্বিতকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.
অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা বলেন, “তামাক হৃদরোগ, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায় এবং ৪ লাখের বেশি মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)। পাশাপাশি বিভিন্ন জনসমাগমস্থল ও গণপরিবহনে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে এখনই প্রয়োজন বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সরকার স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা হু এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন। তাই আমাদের দাবি, সরকার দ্রুত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করুক।”
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, “তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারজনিত কারণে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ অকালে মারা যাচ্ছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরি। অথচ দুঃখজনকভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বর্তমান সরকার নানা অজুহাতে এই আইন সংশোধনে গড়িমসি করছে। ফলে প্রতিদিন মানুষ যেভাবে অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছেন, তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছিল বিভিন্ন খাতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু গত ১ বছরে তামাক আইন সংশোধনের বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং তামাক কোম্পানিগুলোর অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে তারা স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তাদের মতামত নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা হু এফসিটিসি-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই অবিলম্বে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অবিলম্বে অনুমোদন ও কার্যকর করতে হবে।”
কর্মশালায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা বলেন, হু এফসিটিসি-এর আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী, তামাক কোম্পানিকে নীতি প্রণয়ন বা সংশোধন প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করা যাবে না। অথচ ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়া নিয়ে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
তারা আরো বলেন, তামাক কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা অর্জন, জনস্বাস্থ্য নয়। এদের কোনো মতামত গ্রহণ মানেই জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা। আমরা এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংশোধনী হলো— ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (ডিএসএ) বন্ধ করে শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা; তামাক বিক্রয়স্থলে পণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করে তরুণ ও সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ রোধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস থেকে কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করা; তামাক প্যাকেট ও কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উপদেষ্টা নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফর, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল প্রমুখ।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম ক ক ম প ন র মত মত এফস ট স সরক র জনস ব
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের সহযোগিতা চাইলেন সিইসি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সব দলের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
রবিাবর (১৬ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনের সংলাপের শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এ সহযোগিতা চান।
আরো পড়ুন:
দুর্নীতিতে ৩ বার চ্যাম্পিয়ন দলকে জনগণ আর ভোট দেবে না: তাহের
বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে নির্বাচনে অসুবিধা নেই: উপদেষ্টা
সিইসি বলেন, “সবার জন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেবে কমিশন।” নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ভোটারদের কেন্দ্রে আনা ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশের জন্য দলগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংলাপে প্রথম পর্বে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি—মোট ছয়টি দল অংশ নিয়েছে।
ইসি জানায়, দুপুর ২টা থেকে দ্বিতীয় পর্বে জাসদ, ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে মতবিনিময় হবে।
আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) সংলাপের তৃতীয় দিনে জামায়াতে ইসলামীসহ ১২টি দলের সঙ্গে বসবে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেবার পার্টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)-এর সঙ্গে বৈঠক হবে।
এছাড়া, সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সংলাপে অংশ নেবে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করতে অংশীজনদের মতামত ও সুপারিশ নিতে পুরো নভেম্বরজুড়েই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলবে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে ১২টি দলের সঙ্গে দুই পর্বে মতবিনিময় করে কমিশন।
প্রতি দলের বক্তব্য, দাবি ও পরামর্শ নথিবদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এএএম/ইভা