নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জি এম কাদের এবং সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই পক্ষই তৎপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায়। দুই পক্ষই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হয়েছে।

সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করার পর আনিসুল ইসলামরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের ‘স্বীকৃতি’, অর্থাৎ দলের নিবন্ধন ও ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ব্যবহারের অধিকার চাইছে। অন্যদিকে জি এম কাদের সম্মেলন অনুষ্ঠান, কমিটি গঠনসহ পুরো প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলে ইসিকে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’–এর পর নবনির্বাচিত নেতৃত্বের তথ্য দিয়ে ইসি সচিবের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তারা দলীয় গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা ২০/১/ক বাতিল করার কথা বলেছে। এ ধারায় চেয়ারম্যানকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ধারাটি সংশোধন করে আনিসুল ইসলামরা দলের কোনো কেন্দ্রীয় সদস্যকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি এবং জেলা ও ইউনিটি বাতিল করার আগে প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিলেও প্রেসিডিয়াম সভায় তাঁর অনুমোদন নেওয়ার কথাও যুক্ত করেছে। গঠনতান্ত্রিকভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে এসব সংশোধনী আনার কথা উল্লেখ করে তারা ইসির স্বীকৃতি চেয়েছে।

সম্মেলনের পরদিন ১০ আগস্ট আনিসুল ইসলামদের নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত কমিটির শীর্ষ চার নেতার তালিকা কমিশনে জমা দেওয়া হয়। এ কমিটিকে জাতীয় পার্টির ‘মূলধারা’ দাবি করে তারা বলেছে, ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ব্যবহারের বৈধ অধিকার কেবল তাদের কমিটির আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন তারা জাতীয় পার্টির কার্যালয় ও দলীয় তহবিল বুঝিয়ে দিতে এবং দলের নিবন্ধন নম্বর ১২ ব্যবহার না করতে জি এম কাদেরকে আইনি নোটিশ পাঠানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

এদিকে আজ বুধবার জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একজন নেতা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে চিঠি দিয়েছেন। জানা গেছে, ওই চিঠিতে দলের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যাঁরা সম্মেলন আহ্বান করেছেন, তাঁরা দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কারও সম্মেলন ডাকার এখতিয়ার নেই। ফলে এ সম্মেলন ও কমিটি গঠনের পুরো প্রক্রিয়া অবৈধ, বেআইনি।

৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)। সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম চেয়ারম্যান, মুজিবুল হক নির্বাহী চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও এ বি এম রহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হন। জি এম কাদের তাঁদের জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদসহ অন্যান্য পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে বিবাদী করে আনিসুল ইসলামসহ ১০ নেতা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত দুজনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর ১২ আগস্ট পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে (৯ আগস্ট) আনিসুল ইসলামরা সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেন।

১২ আগস্ট ছিল জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। সেদিনই বাদীপক্ষ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করে। এদিকে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিব্রতবোধ করায় ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকে ১১ আগস্ট মামলাটি ষষ্ঠ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়। পরদিন (১২ আগস্ট) বিচারক মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে জি এম কাদেরসহ দুজনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না।

এ বিষয়ে জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে আমরা আনন্দিত। এর ফলে চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আইনগতভাবে নেই। এখন তিনি মুক্তভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন।’

আনিসুল ইসলামসহ ১০ নেতা হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলেন, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন তো তিনি (জি এম কাদের) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন। আমরা সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেছি, মামলা থাকবে কেন? মামলা থাকলে তো তাঁকে চেয়ারম্যান স্বীকার করা হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র প রথম র ওপর আগস ট গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

দল থেকে বহিষ্কৃত ওসমান পরিবারের দোসররা আপনার আশপাশে : টিপু 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু মডেল মাসুদকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া এখানে সমীচীন নয়, তারপরও বলতে চাই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে যারা নতুন এসেছেন, বিশেষ করে কয়েকজন শিল্পপতি, তারা যেন দলের গঠনতন্ত্র ও চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করেন। 

কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে যোগদান করেই আপনি দলের ব্যানার ব্যবহার করে পাল্টা কাজ করছেন। আপনার আশপাশে রয়েছেন ওসমান পরিবারের দোসররা, যারা দল থেকে বহিষ্কৃত।

আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, বরং তারা কর্মীদের ভয় দেখাতেন। গতকাল রাতে বন্দর ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে ঢাকা শরী মন্দিরে এক বক্তব্যে তিনি এ সতর্কতা জানান।

টিপু আরও বলেন, আজ আপনি পূজা মণ্ডপে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বলছেন দলে বিভক্তি করবেন না। অথচ বিভক্তি তো আপনিই করছেন। আপনাকে এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? তারেক রহমান কি দিয়েছেন? দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কথা থাকলেও আপনি তা করেননি।

তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনি যদি চেইন অব কমান্ড ভেঙে দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেন, তবে বিগত বছরগুলোতে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তারা কিন্তু কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না। আমরা তিল তিল করে এই দলকে দাঁড় করিয়েছি।

আপনার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেমন আপনার, তেমনি বিএনপি আমাদের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে গড়ে তোলা সংগঠন। একে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করার সাহস দেখাবেন না।

শেষে তিনি মডেল মাসুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি দলে এসেছেন, স্বাগত জানাই। তবে দলের আদর্শ, গঠনতন্ত্র ও নেতৃত্বকে অমান্য করে বিভক্তি তৈরি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রস্তাব রাখব। ওসমান পরিবারের দোসরদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

এ সময় আরো সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওত হোসেন খান ও মহানগরের আরো অনেক নেতৃবৃন্দ ও নারায়ণগঞ্জ পূজা পরিশোধের নেতৃবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাংলাদেশ জাতীয় লীগ’: নিবন্ধন পেতে যাওয়া দল গঠনতন্ত্র দেখাতে চায় না
  • আওয়ামী লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর: মির্জা ফখরুল
  • দল থেকে বহিষ্কৃত ওসমান পরিবারের দোসররা আপনার আশপাশে : টিপু