“২ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছিলাম। দমকা হাওয়া আর অতিবৃষ্টিতে সব হেলে পড়েছে, পানি জমে গাছ পচে গেছে।” বলছিলেন টেকনাফের মাথাভাঙ্গা এলাকার পানচাষি মোস্তাফিজুর রহমান।
তার ১০ শতাংশ জমির মিষ্টি পানের বরজে এখন কেবল ভাঙা কঞ্চি আর নুয়ে পড়া গাছ অবশিষ্ট রয়েছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত আর প্রবল বাতাসের কারণে এই মৌসুমে আশপাশের প্রায় সব বরজই একই পরিণতির শিকার।
সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ওই অঞ্চলে মিষ্টি ও গাছ পান এই দুই ধরনের পান চাষ হয়। উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা, হাজামপাড়া ও মারিশবুনিয়া এলাকায় রয়েছে প্রায় দুই হাজার পানের বরজ। অতিবৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় একের পর এক পানের বরজ হেলে পড়েছে, জমে থাকা পানিতে গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে চাষিদের মুখে চিন্তার চাপ ও হতাশা। তবে কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় চাষি মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “বরজের চারপাশে দড়ি দিয়ে শক্ত বেষ্টনী তৈরি করলে প্রবল বাতাসের ধাক্কা সামলানো যায়। সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে অতিবৃষ্টির পানি জমে থাকে না, আর গোড়ায় পলিথিন বিছিয়ে দিলে সহজেই পানি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। এতে একটু বাড়তি খরচ করতে হয়।”
তিনি আরো বলেন, “এখন তো আবহাওয়া অনিয়মিত। কখনো অসময়ে বৃষ্টি, কখনো আবার জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে। তাই আবহাওয়ার খবর জেনে পরিকল্পনা করে চাষ করাই একমাত্র উপায়। আমি সেই পথই বেছে নিয়েছি, আর সেইভাবেই পান চাষ চালিয়ে যাচ্ছি।”
কৃষি কর্মকর্তাদের হিসেবে, এ মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ বরজ আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পান চাষি নূর মোহাম্মদ বলেন, “এবার বরজ আগাম বসাতে পারিনি অতিবৃষ্টির কারণে। সময়মতো পানগাছ লাগাতে না পারায় ফলনও প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। আগাম চাষ করতে না পারায় দামও অনেক কম পাই। যে খরচ ও শ্রমে চাষ করেছি, তা বিক্রির আয়ে কোনোভাবেই পোষাচ্ছে না। খরচ মেটাতে গিয়ে ঋণের বোঝা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে চাষ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ভাবতে হবে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সঠিক ব্যবহার, বরজের ড্রেনেজ উন্নয়ন, গোড়ায় পলিথিন দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ এবং দমকা হাওয়ায় বেষ্টনী তৈরির মতো উদ্যোগই জলবায়ু সহনশীল চাষে সহায়ক হতে পারে।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, “তিন বছর আগে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে উপজেলার ৩০ জন চাষিকে বরাদ্দ প্রদান ও আবহাওয়াভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে বরাদ্দ সংকটের কারণে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কিছুটা কমে গেছে। তবুও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পান চাষিদের দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।”
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় পান চাষের জমির পরিমাণ ২৮৫৫ হেক্টর। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহেশখালী উপজেলায় ১৬০০ হেক্টর, টেকনাফ উপজেলায় ৫৭০ হেক্টর। এছাড়াও রামুতে ২০০ হেক্টর, চকরিয়ায় ৫০ হেক্টর, পেকুয়ায় ২০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৮৫ হেক্টর এবং উখিয়ায় ৩০ হেক্টর।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন র বরজ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা
বগুড়ায় অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে মো. রাসেল (২৮) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম ইউনিয়নের চক সরতাজ সুলতানপুর পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত রাসেল সাবগ্রাম ইউনিয়নের চক সরতাজ সুলতানপুর পাড়ার মো. আবু বক্করের ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাসেলকে ঘুম থেকে ডেকে বাড়ির সামনে নিয়ে যায় ওই কিশোর। সেখানে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রাসেলের বুকে ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায় ওই কিশোর।
গুরুতর আহত অবস্থায় রাসেলের পরিবারের সদস্যরা তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান বাসির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ঘটনার পরপরই এক কিশোরকে আমরা আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, রাসেল এবং সে দুজনেই অনলাইনে জুয়া খেলত। জুয়া খেলার টাকার লেনদেন নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল, যার জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।”
ওসি জানান, অভিযুক্তকে থানায় রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/এনাম/এস