বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারা দেশের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাতে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। তবে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আরেক পক্ষ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার, সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতি-অনিয়ম, হয়রানি বন্ধসহ তিন দফা দাবিতে বরিশালে ছাত্র-জনতার ব্যানারে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা গত শুক্রবার থেকে এই দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দালন অব্যাহত রেখেছেন। এই ছয় দিনে তাঁরা সাড়ে ২৯ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন লাখো যাত্রী।

এ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বরিশালে আসেন। তিনি দুপুর ১২টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও হাপতাাল এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন। বেলা সোয়া তিনটা পর্যন্ত এই সভা চলে। আলোচনায় মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং মেডিকেল কলেজের পরিচালক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে জানান। অন্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।

গতকাল রাতে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সমাবেশে বিএম কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল জেলার সাবেক আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হবে এবং মেডিকেলের সকল সিন্ডিকেট ও দালালদের নির্মূল করা হবে। যদি তা না হয়, আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

এদিকে ব্লকেড কর্মসূচি অব্যাহত রেখে ও গণ–অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন একটি পক্ষ। ছাত্র-জনতার ব্যানারে ওই আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তিনি বলেন, ‘দাবিদাওয়া নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমাদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসেছেন। কিন্তু আমাদের যে দাবি, যে সমস্যা, তা সমাধানের জন্য যথেষ্ট সক্ষমতা (ক্যাপাসিটি) তাঁর নেই। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশালে আসতে হবে।’ এ সময় তিনি চলমান বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচির পাশাপাশি নতুন করে গণ–অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুনষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ, ভুক্তভোগী যাত্রী-চালকদের ক্ষোভ১৬ ঘণ্টা আগে

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন; স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া।

আরও পড়ুনজনদুর্ভোগে বাড়ছে ক্ষোভ, মহাপরিচালকের আশ্বাসেও দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা১২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র ব য ন র ম ড ক ল কল জ বর শ ল কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্র সংসদের দাবিতে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃঢ অবস্থান

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরণ ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১১ আগস্ট) বেলা  ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান সাজু আমরণ অনশন শুরু করেন। তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতীকী অনশনে অংশ নেন। 

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি চলছে। অনশনরত আক্তারুজ্জামান অসুস্থ হওয়ায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির অন্যতম হলো দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা। এই লক্ষ্যেই ২১ জুলাই তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবিপত্র দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও রিজেন্ট বোর্ড থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

পরবর্তীতে ২ আগস্ট প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ১০ আগস্টের মধ্যে রিজেন্ট বোর্ডে প্রস্তাবটি পাস করানোর আহ্বান জানানো হয়। তবে সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত  আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।

অনশনস্থলে শিক্ষার্থীরা “ভাত নয়, আইন খাবো”, “তালা ভাঙছি, মাকসু আনবো”, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। 

গতকাল রাত ১০টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে এসে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করীম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিটি পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডে তুলব। যদি তখনও সমাধান না আসে, তারা পরবর্তী কর্মসূচি নিতে পারেন। আমরা অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেছি এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছি যেন কোনো নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্যঝুঁকি না হয়।”

বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন বলেন, “শিক্ষার্থীদের আবেদনের বিষয়ে প্রশাসন আলোচনা করেছে এবং একটি মিটিংও হয়েছে। আবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, সেই প্রক্রিয়া চলছে।”

ঢাকা/আবিদ/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনদুর্ভোগে বাড়ছে ক্ষোভ, মহাপরিচালকের আশ্বাসেও দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা
  • স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবি বাস্তাবায়নে দীর্ঘসময় লাগবে: স্বাস্থ্য মহাপরিচালক
  • নির্বাচনের সময় অপরিবর্তিত রেখে রাকসুর তফসিল পুনর্বিন্যাস, ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের দাবি
  • স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙাসহ তিন দাবিতে বরিশাল ব্লকেড, জনভোগান্তি
  • উপাচার্যের মায়ের মৃত্যুর কারণে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
  • ছাত্র সংসদের দাবিতে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃঢ অবস্থান
  • এক দফা দাবিতে আমরণ অনশনে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের দাবি, আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
  • ছাত্র সংসদের দাবিতে আমরণ অনশনে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী