২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এক যুগসন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতিতে এসে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভারসাম্য আনার চেষ্টা দৃশ্যমান ছিল। কূটনীতিতে ভারসাম্যের সম্পর্ক বজায় রাখা সব সময় চ্যালেঞ্জের। গত এক বছরে চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়েছে। কিন্তু ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গত এক বছরে কূটনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল। এর এক মাস না যেতেই লুৎফে সিদ্দিকীকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর নভেম্বরে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান। পরে এ বছরের এপ্রিলে তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেখভালের জন্য একই সঙ্গে তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সংগত কারণেই এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি আসলে কে সামলাচ্ছেন, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা চলছে। আবার ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের মিশন স্থাপনের মতো ইস্যুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পরিবর্তে অন্য একাধিক উপদেষ্টার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতীতে যে কখনো টানাপোড়েন ছিল না, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো সরকারের আমলে টানাপোড়েন ছিল। তবে গত ১৫ বছরে ঘনিষ্ঠতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আবার ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে এমন তিক্ততা স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম। প্রায় চার মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লোকজনকে ঠেলে পাঠানো (পুশ ইন) হচ্ছে, যা নজিরবিহীন। বাংলাদেশ পরিবর্তিত পরিস্থিতি আর সময়ের নিরিখে এবং জন–আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর স্বার্থের ভিত্তিতে ‘একটি ইতিবাচক সম্পর্ক’ রাখার কথা বলে এসেছে বারবার।

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেন। তৌহিদ হোসেন ওই আলোচনায় কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তোলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাব দেন। ডিসেম্বরে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর এ বছরের এপ্রিলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়েছে। তার পরও সম্পর্কের দূরত্ব ঘোচেনি। ভারত স্পষ্ট বলে দিয়েছে, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ‘এই সম্পর্ক স্বাভাবিক’ হবে না।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে গত এক বছরে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কোন্নয়নে যথেষ্ট উদ্যোগী চীন। চলতি মাসে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখে দেশটি সরকার, রাজনৈতিক দল এবং জনপরিসরে যুক্ততা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে গত মার্চে চীনে গিয়েছেন। এর আগে জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং সফর করেন।

প্রসঙ্গত, বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও অধ্যাপক ইউনূসের শীর্ষ বৈঠকের সঙ্গে ব্যাংককে ইউনূস-মোদি বৈঠকের যোগসূত্র ছিল। মার্চে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া নামের একটি উন্নয়নভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। সরকার চেয়েছিল সফরটি দ্বিপক্ষীয় অর্থাৎ ইউনূস-সি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলেই প্রধান উপদেষ্টা চীনে যাবেন। চীন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল। ফলে মার্চে বাংলাদেশ ও চীনের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর ভারতের দিক থেকে এপ্রিলে ইউনূস-মোদি বৈঠকের বিষয়ে সাড়া পাওয়া গিয়েছিল।

ভারতের সঙ্গে তিক্ততা আর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্যের জন্য একধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভারসাম্যের এই চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এসেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে নানা পরিসরে ঘনিষ্ঠতার ধারাবাহিকতায় চীন গত মে মাসে বাংলাদেশকে একটি ত্রিদেশীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায়। কুনমিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ‘অনানুষ্ঠানিক বৈঠকটির’ আয়োজন করেছিল চীন। হঠাৎ করেই আয়োজিত বৈঠকের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য স্পষ্ট না হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জুনের ওই বৈঠকে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করেছিল। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। ১৯ জুন কুনমিংয়ের বৈঠকে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছিল, ত্রিদেশীয় উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে চীন ও পাকিস্তানের প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। বাংলাদেশ সম্মত না হলেও পাকিস্তান এবং চীন ত্রিদেশীয় বৈঠকে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ঘোষণা দেয়।

পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ওই বৈঠকে কোনো ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাংলাদেশ রাজি হয়নি। আর বাংলাদেশ কোনো জোট গঠন করছে না। এর পর থেকে ত্রিদেশীয় উদ্যোগে বাংলাদেশকে সক্রিয় করতে চাপ দিয়ে চলেছে চীন। দেশটি এখন ফলোআপ হিসেবে ইসলামাবাদে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক করতে চাইছে। চীনের পাশাপাশি সম্প্রতি পাকিস্তানও বাংলাদেশকে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছে।

চীনের ত্রিদেশীয় উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে হুট করে বৈঠকে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ভূরাজনৈতিক এবং ভারসাম্যের সম্পর্কের নিরিখে হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানকে নিয়ে সহযোগিতার উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের শেষ দিক থেকে বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে।

গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিশ্বের নানা দেশ ও জোটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশ নিবিড়। এমন এক আবহে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই চেয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার মাত্রা সীমিত থাকুক। যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তা সরকারের উচ্চপর্যায়ে সরাসরি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্তের মতো বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি আর প্রভাব যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তির কারণ, সেটা স্পষ্ট ছিল পাল্টা শুল্কের দর-কষাকষিতে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত শুল্কের হার বাংলাদেশের জন্য আপাতত স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যাপকতর সহযোগিতার নিরিখে চীনের সঙ্গে ভারসাম্যের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যাবে।

চীনের ত্রিদেশীয় উদ্যোগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মত যেমন উপেক্ষিত ছিল, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে পাল্টা শুল্কের দর-কষাকষিতেও। এপ্রিলের পর কয়েক মাস আংশিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্ততা ছিল। এরপর জুনের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কের আলোচনায় রাখা হয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। অথচ এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট বার্তা ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রে বাজার ধরে রাখার স্বার্থে প্রতিশ্রুতি নয়, বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে সরাসরি জানাতে হবে দেশটি থেকে বাংলাদেশ কী কী কিনবে। কিন্তু সরকার আলোচনায় বসলেও এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। শুরুতে যুক্ত করা হয়নি ব্যবসায়ীদেরও। যদিও শেষ দফা আলোচনার পর্বে ব্যবসায়ীদের যুক্ত করে নানা পণ্য কেনার ঘোষণা এবং চুক্তি করে পরিত্রাণ পেয়েছে।

গত এপ্রিল থেকে হঠাৎ করেই রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এপ্রিলের শেষ দিকে রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’

তৌহিদ হোসেনের এমন বক্তব্যের ঠিক উল্টো কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এক সেমিনারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘আমরা মানবিক করিডর নিয়ে কোনো আলোচনা করিনি। আমরা মানবিক করিডর কিংবা অন্য কিছু নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে এখনো কোনো চুক্তি করিনি।’

একই ইস্যুতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই ব্যক্তি দুই সপ্তাহের মাঝে এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কথা জানানোর পর রাজনৈতিক ও নাগরিক পরিসরে এ নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। বিশেষ করে ‘মানবিক করিডরের’ মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে জাতীয় স্তরে আলোচনা ছাড়া এমন বিষয়ে কেন বা কার স্বার্থে কী করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এ আলোচনা আর এগোয়নি। জাতিসংঘ এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারের একটি পক্ষ প্রাথমিক আলোচনা করেছিল। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি।

সামগ্রিকভাবে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনীতি দ্বিধা আর সমন্বয়হীনতার বৃত্তে যেন আটকা পড়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একাধিক ব্যক্তি নিয়োগের মধ্য দিয়ে সরকারের দ্বিধা আর অস্পষ্টতা দৃশ্যমান। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক, চ্যালেঞ্জিং এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপেক্ষিত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা। একটি দেশের কূটনীতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কমে যাওয়াটা সুখকর কি না, সেটা সময় বলে দেবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট ভ রস ম য র উপদ ষ ট র র পরর ষ ট পর য য় র র ক টন ত র জন ত ক সরক র র সহয গ ত ন র পর ইউন স বছর র ব ষয়ট আগস ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মহালছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, ৩২ হাজার মানুষের ভোগান্তি

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মহালছড়ি-সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী মহালছড়ির মুবাছড়ি ইউনিয়ন, রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার করল্যাছড়ি, সেলোন্যা, সাবেক্ষংসহ ৩০টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার মানুষ।

মহালছড়ি-সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া সেতুটি ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট্ট সেতুটিই উপজেলা সদরের সাথে একটি পুরো ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ার পাশাপাশি এর দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ধসে মাটি সরে গেছে। এতে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। 

চলাচলের জন্য এ এলাকায় একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করেছে এলজিইডি। তবে কাপ্তাই লেকের পানিতে সেটি ডুবে গেছে। বর্তমানে এই সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে কোনোমতে চলাচল করছেন এলাকাবাসী। তবে কোনো পণ্য বহন করতে পারছেন না। অথচ এই সেতু দিয়েই প্রায় ৩২ হাজার মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়।

করল্যাছড়ি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক কুন্ডল চাকমা, সিঙ্গিনালা মেশিন পাড়া নিবাসী বেতছড়ি জেনারেল ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুগত চাকমা ও মনাটকে গ্রামের বাসিন্দা ভবদত্ত চাকমা জানান, এই সেতুটি ছোট হলেও জন গুরুত্বপূর্ণ। সড়কের দুই পাশের ধারক দেয়াল ধসে পড়ে মাটি সরে গেছে। এতে সেতু দিয়ে চলাচল ঝুঁকিতে পড়েছে। কোনোমতে সেতুর দুই পাশের কাঠের উপর দিয়ে চলাচলের কাজ চলছে। তবে পণ্য আনা-নেওয়া করা সম্ভব হচ্ছে না।

তারা জানান, রোগী নিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এলজিইডি থেকে একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করে দিয়েছে। তবে তা এখন কাপ্তাই বাঁধের পানির নিচে ডুবে রয়েছে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানান তারা।

সেতুটি দীর্ঘ ৪০ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে করা হয়েছিল। বিগত দুই বছরের অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ভেঙে মাটি সরে যায়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেটি।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুইতি কারবারী বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে বহু লোকের আসা যাওয়া। সেতুটি নতুন করে নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।”

খাগড়াছড়ির স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, “পরপর দুই বছরের বন্যায় দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে সেতুটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি অনেক পুরানো সেতু। তড়িঘড়ি করে ডিজাইন করতে গিয়ে ডিজাইনে কিছু ত্রুটি ছিল। এ কারণে নতুন করে সেতু নির্মাণে দেরি হয়ে গেছে। ডিজাইন ফাইনাল হয়ে গেছে, এখন টেন্ডারে যাবে।”

ঢাকা/রূপায়ন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ