‘আমজাদ ভাই এমনভাবে বলেন যে আর না করতে পারিনি’
Published: 14th, August 2025 GMT
তাঁর পরিচয় তিনি লেখক, অভিনয়শিল্পী, পরিচালক। আজ প্রয়াত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেনের জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। জন্মদিন উপলক্ষে আমজাদ হোসেন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক কিছু জানা–অজানা তথ্য।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন আমজাদ হোসেন। তৃতীয় শ্রেণিতে প্রথম ছড়া লেখেন, যা প্রকাশিত হয়েছিল ‘আজাদ’ পত্রিকায় শিশুদের পাতায়। ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কাউকে না জানিয়ে গোপনে কলকাতার দেশ পত্রিকায় কবিতা লিখে পাঠান। প্রকাশের আগেই দেশ পত্রিকা থেকে সম্পাদক সাগরময় ঘোষ আমজাদ হোসেনকে একটি চিঠি পাঠান। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন।
সিনেমায় আমজাদ হোসেনের পথচলা শুরু হয় অভিনয় দিয়ে। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরবর্তী সময়ে তিনি কালজয়ী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন।
আমজাদ হোসেন। ফাইল ছবি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমজ দ হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঐহিক অমরতায় রণদা প্রসাদ সাহা
দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে তাঁর গ্রামের ছোট–বড় সবাই ডাকে জেঠামনি। অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া উপাধি ছিল রায়বাহাদুর। সে নামেও তাঁকে ডাকতেন অনেকে। কিন্তু তিনি সেই অভিজাত সম্বোধন পছন্দ করতেন না। তবে আর পি সাহা নামটিই ছিল সাধারণের মধ্যে অধিক পরিচিত। দাতা বা দানবীর এই মানুষটি মির্জাপুরবাসীর কাছে আজও জেঠামনি হিসেবেই যেন ঘরের মানুষ, প্রাণের ভালোবাসার মানুষটি। এক উচ্চতর মূল্যবোধের অধিকারী, বিস্ময়কর রকম শক্তিমান মানুষ ছিলেন দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। তাঁর প্রাণশক্তি, শ্রমশক্তি ও চিন্তাশক্তি ছিল বিস্ময়কর। আর বোধের জায়গাটিতে—মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাকে তিনি মানবীয় কর্তব্য মনে করতেন। পৃথিবীকে সবার জন্য সুখকর করে তোলা সম্ভব এই বিশ্বাসেই তিনি জনহিতকর কাজ করে যেতেন অক্লান্তভাবে। এই ব্রত থেকেই লাভ করেছিলেন ‘দানবীর’ অভিধা। তাঁর কীর্তির চেয়ে অনেক বড় ছিলেন তিনি।
রণদা প্রসাদ সাহার জন্ম ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কম্পাউন্ড থেকে পুত্র ভবানী প্রসাদসহ তাঁকে রাতের গভীরে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর তাঁদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ৭৪ বছরের কর্মময় জীবন রণদা প্রসাদ সাহার।
মির্জাপুর তখন একেবারেই অজপাড়াগাঁ। পিতা দেবেন্দ্র সাহার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। রুটিরুজির সন্ধানে বারবার তাঁকে পেশা বদল করতে হয়েছে। বেশির ভাগ সময়ে দলিল লেখকের কাজ করেছেন তিনি।
প্রসবকালে ধনুষ্টঙ্কারে অকালে মারা যান মা কুমুদিনী দেবী। তিনি রোগশয্যায় না পেয়েছেন এতটুকু ওষুধ-পথ্য, না পেয়েছেন সেবাযত্ন। শৈশবের এই অসহ্য স্মৃতি রণদা প্রসাদকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এমনভাবে যে পরবর্তীকালে তাঁকে তা একজন সেবকে পরিণত করেছিল। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুস্থ মানুষের সেবাপ্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী’।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অতুলনীয় মাতৃভক্তির কথা আমরা সবাই জানি। রণদা প্রসাদ বিদ্যাসাগরের মতো মাতৃভক্তি দেখানোর সুযোগ পাননি। তিনি মাকে হারান মাত্র সাত বছর বয়সে। মায়ের স্নেহের আঁচল জড়িয়ে ধরতে না ধরতে তিনি বিদায় নেন। অভাবের সংসারে প্রসূতি মায়ের যত্ন দূরে থাকুক, উপযুক্ত আহারই সময়মতো জোটেনি। চিকিৎসার জন্য সারা গ্রাম খুঁজে একজন ডাক্তারও সেদিন মেলেনি কিংবা অর্থাভাবে কোনো ডাক্তার আনা যায়নি। প্রসবকালে ধনুষ্টঙ্কারে অকালে মারা যান মা কুমুদিনী দেবী। তিনি রোগশয্যায় না পেয়েছেন এতটুকু ওষুধ-পথ্য, না পেয়েছেন সেবাযত্ন। অশৌচের অসিলায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুই ছিল তখনকার দিনে মেয়েদের এক মর্মান্তিক নিয়তি। মায়ের এই মৃত্যুদৃশ্যের নীরব দর্শক ছিল সাত বছরের অবোধ বালক রণদা প্রসাদ। শৈশবের এই অসহ্য স্মৃতি রণদা প্রসাদের নিদ্রা-জাগরণের প্রতিটি মুহূর্ত আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এমনভাবে যে পরবর্তীকালে তাঁকে তা একজন সেবকে পরিণত করেছিল। নিজের মায়ের জীবন দেখে তিনি নারী জীবনের অসহায়ত্ব উপলব্ধি করেন এবং নারী জাতির কল্যাণ্যে কিছু করার সংকল্প গ্রহণ করেন। সামর্থ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দুঃখ-স্মৃতিকে রূপ দিয়েছিলেন দুস্থ মানুষের সেবাপ্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী’তে—স্থাপন করেছিলেন মাতৃভক্তির এক অনন্য নজির।
রণদা প্রসাদ সাহা কোলাজ