ভারী বর্ষণ ও প্রবল স্রোতে পঞ্চগড়ের একটি স্লুইসগেট–সংলগ্ন সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

গত মঙ্গলবার রাতে মুষলধারে বৃষ্টির সময় পঞ্চগড় সদর উপজেলার কুচিয়ামোড় স্লুইসগেট–সংলগ্ন সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। এ সময় দেবে যায় স্লুইসগেটটি। এতে স্লুইসগেটের দুই পাশে থাকা পাঁচটি দোকান পানিতে ভেসে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের কুচিয়ামোড় এলাকায় স্লুইসগেট কাম সেতু নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কুচিয়ামোড় গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত সেতুটি পার হয়ে পূর্ব পাশের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ পঞ্চগড় জেলা শহরে আসা–যাওয়া করেন।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মঙ্গলবার রাত আটটার পর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ভারী বর্ষণের সময় সেতুর পাশে গড়ে ওঠা বাজারের নৈশপ্রহরী মো.

আবদুল সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ার শব্দ পান। এ সময় তিনি মুঠোফোনে স্থানীয় লোকজনকে বিষয়টি জানান। এর মধ্যে সেতুর পূর্ব পাশে সংযোগ সড়কে থাকা সাইকেল মেরামতের দোকান ও ফার্নিচারের দোকান এবং পশ্চিম পাশে থাকা মাছের দোকান, চায়ের স্টলসহ আরেকটি দোকান পানির স্রোতে ভেসে যায়।

গতকাল বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে ভিড় করেছেন শত শত মানুষ। স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ার সময় পাঁচটি দোকান ভেসে গেছে। এর মধ্যে একটি দোকান তাঁর ছিল।

কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, এখন পঞ্চগড় শহরে যেতে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে গলেহা এলাকা দিয়ে যেতে হবে। তিনি দ্রুত এটি মেরামতের দাবি জানান।

এলজিইডি পঞ্চগড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ জামান বলেন, ‘এই স্লুইসগেট কাম সেতুটির সংযোগ সড়ক থেকে খালের গভীরতা অনেক বেশি। খাড়া অবস্থায় থাকা সংযোগ সড়কটিতে মাটি আটকে থাকছিল না। এ জন্য সংস্কারের পরিকল্পনা ছিল। এরই মধ্যে অতিরিক্ত পানির চাপে এমন অবস্থা হওয়ায় সেতুটি দেবে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, পানির স্রোত কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটির পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মানুষ চলাচলের জন্য এলজিইডির সহায়তায় অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স য গ সড়ক ভ ঙ স ল ইসগ ট ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

২০ মিনিটেই মিলল টিসিবির পণ্য, খুশি ক্রেতা

চট্টগ্রাম নগরের ঝাউতলা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাহমুদ করিম। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাশেই আমবাগান এলাকায় থাকেন। স্বল্প আয়ের সংসার চালাতে হয় হিসাব করে। তাই খবর পেলেই চলে আসেন টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে পাওয়া গেল নগরের টাইগারপাস এলাকায়। পণ্য নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছেন মাত্র।

মাহমুদ বলেন, প্রায় এক বছর ধরে টিসিবির পণ্য কিনছেন তিনি। ছোট্ট একটি ঝাল নাশতার দোকান তাঁর। এ আয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুল–কলেজের বেতন দিয়ে সংসারে টান পড়ে। আগে ধস্তাধস্তি করে পণ্য নিতে হতো। এবার ২০ মিনিট অপেক্ষা করেই পণ্য পেয়েছেন। এগুলো দিয়ে এ মাসে কিছুটা খরচ বেঁচে যাবে তাঁর।

প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামে ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিদিন নগরের ২৫টি আলাদা স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি। এর বাইরে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে পরিবার কার্ডের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি চলছে।

আজ নগরের ৯টি ওয়ার্ডের ২৫টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। এর মধ্যে শুলকবহর, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, উত্তর আগ্রাবাদ, পূর্ব মাদারবাড়ী, আন্দরকিল্লা, উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের তিনটি করে স্থানে এবং দেওয়ান বাজার ও বক্সিরহাট ওয়ার্ডের দুটি করে স্থানে পণ্য বিক্রি হয়েছে। পরিবেশকেরা জানিয়েছেন, কোনো স্থানে পণ্য না পেয়ে ক্রেতারা ফিরে যাননি। ফেরত যাওয়া ক্রেতার সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচ।

টিসিবি সাধারণত দুইভাবে পণ্য বিক্রি করে থাকে। একটি সারা বছর ধরে চলে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে। নগরের প্রায় তিন লাখ পরিবার এ সুবিধা পেয়ে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরে ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। সবশেষ গত কোরবানির ঈদে বন্ধ হওয়ার পর চলতি আগস্টে আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মূলত যেসব গ্রাহকের কাছে পরিবার কার্ড নেই, তাঁরা সারি বেঁধে ট্রাক থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন। পরিবার কার্ডধারীদের ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ মাসের কার্যক্রমে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে পাঁচটি। এ ছাড়া প্রতি ট্রাকে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে এখন প্রতিদিন ৫০০ ক্রেতা পণ্য কিনতে পারবেন।

টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নগরে মোট পরিবেশকের সংখ্যা ১৫৯। প্রতিদিনই স্থান বদল করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। যেসব ওয়ার্ডে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে একাধিক ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এবার দামও কমানো হয়েছে, বরাদ্দও বেড়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম থেকে তেল, ডাল ও চিনি কিনতে আগে একজন ক্রেতার খরচ হতো ৫২০ টাকা। মাঝখানে পবিত্র রমজানে খেজুর যোগ হওয়ায় সেটি ছিল ৫৮৮ টাকা। তবে এবারের কার্যক্রমে প্রতিটি পণ্যের দাম কমিয়েছে টিসিবি।

টিসিবি জানিয়েছে, টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রমে এখন ভোজ্যতেল ২৫ টাকা কমে ১১৫ টাকা, ডাল ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা ও চিনি ৫ টাকা কমে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় খরচ কমেছে ৭০ টাকা। এখন একজন ক্রেতার ৪৫০ টাকা খরচ হবে। তবে পরিবেশকের দোকান থেকে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে কেনা পণ্যের দাম একই থাকছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামে টিসিবি পরিবেশক সমিতির সভাপতি আবদুস ছবুর বলেন, বরাদ্দ বাড়ানোর কারণে পরিবেশক ও ক্রেতার লাভ হয়েছে। পরিবহন খরচের পর পরিবেশকদের হাতে কিছু লাভ থাকবে। অন্যদিকে আগে অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরতে হতো। এখন সে সংখ্যাও কমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ