নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মহল্লায় মাদক ও কিশোর গ্যাং বিরোধী ক্যাম্পেইন করায় পঞ্চায়েত পরিষদের সেক্রেটারি, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দকে হুমকী দিয়েছে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের দোসররা। বুধবার রাতে মাদক ব্যবসায়ীরা পঞ্চায়েতের সেক্রেটারির বাসভবনের নিচে গিয়ে পঞ্চায়েতের নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও দেখে নেয়ার হুমকী দেয়৷ খবর পেয়ে বাগে জান্নাত এলাকাবাসী জড়ো হয়ে নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক অবরোধ করে। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে মিশনপাড়া এলাকা পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। এরপর প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী। 

 

জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে শহরের চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মহল্লার মাউন্ট রয়েল স্কুল, শিশুকল্যাণ স্কুল, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র এবং বাগে জান্নাত মিশনপাড়া সংযোগ সড়কে বহিরাগতরা এসে মাদক বিক্রি করছে। পাশাপাশি এলাকায় বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আড্ডা ও এলাকায় চুরি ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছিল। মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজের পরে চাষাঢ়া বাগে জান্নাত পঞ্চায়েত পরিষদের সদস্যরা জড়ো হয়ে এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী ক্যাম্পেইন করে। এসময় তারা যেসব স্পটে বহিরাগত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং ও ছিচকে চোরদের আনাগোনা সেসব স্থানে গিয়ে মহড়া দেয় এবং ভুক্তভোগী এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে লাঠি বাশি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার আহবান জানান। মাদক সন্ত্রাস বিরোধী ক্যাম্পইনে চাষাঢ়া পঞ্চায়েত পরিষদের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন অত্র পঞ্চায়েতের সহসভাপতি হাজী সামছুল হক বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক শরীফ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক ফারুক আহাম্মদ রিপন, কার্যকরী সদস্য ভবানী শংকর রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইউব আলী, রহমত উল্লাহ লিটন, কাজী সালাউদ্দিন টিপু, আনিসুর রহমান, হাফেজ মোক্তার হোসেন, কাজী মাহফুজুর রহমান শোয়েব, আবুল কালাম, মোশারফ হোসেন রনি, সোহাগ হোসেনসহ আরো অনেকে।  


এদিকে মাদক সন্ত্রাস বিরোধী ক্যাম্পেইন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের দোসররা পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন মাহমুদের বাসভবনের নিচে গিয়ে পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক ফারুক আহাম্মদ রিপন, কার্যকরী সদস্য হাফেজ মোক্তার হোসেনসহ পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালসহ তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকী দেয়। এসময় মাদক ব্যবসায়ীরা পঞ্চায়েত সেক্রেটারির বাসভবন ও আশেপাশের বাসভবনের ফটকে লাথি ও ঢিল নিক্ষেপ করে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পঞ্চায়েতের সদস্যরা সেক্রেটারির বাসার দিকে যেতে থাকলে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের দোসররা সটকে পড়ে। 


এদিকে পঞ্চায়েতের সেক্রেটারিসহ নেতৃবৃন্দকে হুমকী ও বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে রাত ১১ টার দিকে বাগে জান্নাত মহল্লার সম্মুখস্থ নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক অবরোধ করে বাগে জান্নাত মহল্লাবাসী। এসময় তারা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মিশনপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষুব্ধরা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন। সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশের এসআই রক্তিমের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। 
চাষাঢ়া বাগে জান্নাত পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমরা এর আগেও একাধিবার আন্দোলন করেছি। মিশনপাড়া চাষাঢ়া বাগে জান্নাত পঞ্চায়েতসহ ৪ টি পঞ্চায়েত সম্মিলিতভাবে সদর ওসির নেতৃত্বে মাদক সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল করেছি। মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমরা এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ আছি। কোন ধরনের হুমকী ধমকীতে আমরা ভীত নই।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: সড়ক ন র য়ণগঞ জ জ ন ন ত মহল ল সড়ক অবর ধ র ব সভবন এল ক ব স ম শনপ ড় সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।

নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।

পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।

সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসু

নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’

সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য

চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।

সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’

চাকসু ভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল