নির্বাচনী ব্যবস্থার অসংগতি দূর করতে কয়েকটি প্রস্তাব
Published: 14th, August 2025 GMT
স্বাধীনতার পর থেকে নানা সময়ে আমাদের দেশে সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। এগুলো ঠিক কতটা সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে, কতটা তাদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
আমরা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে উন্নতির জন্য এখানে তিনটি প্রস্তাব করব। আপাতত এগুলো সংক্ষিপ্ত। পরে বিস্তারিত দেওয়া হবে।
১.সংযুক্ত সারণিতে বিভিন্ন নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট ও প্রাপ্ত আসনের ভেতরে অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ের অসংগতি দেখা যায়। যেমন ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রায় সমান ভোট পেয়েও বড় দুই দলের আসনপার্থক্য প্রায় ৪৩ শতাংশ।
আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটের পার্থক্য ১৬ শতাংশ, আসনপার্থক্য প্রায় ৬৬ শতাংশ। অন্য নির্বাচনগুলোতেও একই রকম অবস্থা। এই অসংগতি তৈরি হওয়ার কারণ আমাদের বর্তমান পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশের অনেক কম ভোট পেয়ে এবং মাত্র ১টি ভোটের ব্যবধানেও কোনো আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হতে পারে।
দুঃখজনকভাবে এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নজরে পড়ে না। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব এই ৩০০টি আসনের সঙ্গে আরও ৩০০টি আসন যোগ করা, যেগুলো দলগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হবে সারা দেশে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে।
আরও পড়ুনএত কিছুর পরও নির্বাচন নিয়ে ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের দোলাচল কেন১১ জুলাই ২০২৫এ রকমটা হলে ২০০১ ও ২০০৮ সালের ফলাফলে কোনো দলের দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাওয়া সম্ভব হতো না। প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ভেতরে এই রকম আসন বণ্টন আমাদের দেশে নতুন হলেও নানা দেশে চালু রয়েছে।
আমাদের প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় প্রচলিত স্থানীয় আসনের প্রার্থী তালিকার সঙ্গে ভোটের আগেই দলগুলো এই রূপ আসনের জন্যও তাদের ৩০০ জন করে প্রার্থী ঘোষণা করবে। তারপর ভোটের পরে যত শতাংশ প্রাপ্ত ভোট তার ভিত্তিতে তালিকা থেকে প্রথম তত শতাংশ আসন করে দলগুলোকে দেওয়া হবে।
এই প্রস্তাবিত ব্যবস্থা দুটি কারণে শ্রেয়োতর:
১. স্থানীয় সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রতিনিধি যেমন থাকতে পারে আবার জাতীয় সমস্যা সমাধানে জাতীয় দক্ষ প্রতিনিধি থাকতে পারে।
২. আর অকারণ উচ্চমাত্রার সংখ্যাগরিষ্ঠতা এড়ানো যাবে ফলে সরকারি দলের আধিপত্যবাদী হয়ে ওঠার প্রবণতা কম হবে।
প্রসঙ্গগত বলা যায়, এ মুহূর্তে আলাপ হচ্ছে, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে। এ বিষয়ে সংস্কার কমিশন সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থাকে উচ্চকক্ষে ব্যবহার করার কথা বলেছেন, কিন্তু মূল শাসনক্ষমতা তো থাকবে নিম্নকক্ষের হাতে।
এতে নিম্নকক্ষ আগের মতোই নিরঙ্কুশ অবস্থায় দুর্বল গণতন্ত্র ও আধিপত্যবাদী সরকার ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকবে। সংসদের উচ্চকক্ষ আমাদের দেশে জটিলতা বাড়াবে বই কমাবে না।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘ব্লাসফেমি’০৫ আগস্ট ২০২৫২.তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি চমৎকার। কিন্তু এই রূপ সরকার কাদের নিয়ে গঠিত হবে এ বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাহীনতার চর্চা ও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা দেখেছি। ফলে ১৯৯৬, ২০০৬ বা ২০১৪-এর পরে থেকে নানান রাজনৈতিক সংঘাতও আমরা দেখেছি।
তা ছাড়া দলগুলো নানা সময়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেছে, কিন্তু সেগুলো জন সমক্ষে আনেনি। আবার কোন কোন দল এরূপ আলোচনায় অংশ নেবে, সে বিষয়েও কোনো স্বচ্ছতা পরিলক্ষিত হয়নি।
বর্তমান ঐকমত্য কমিশন কিছু দলকে ডেকেছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে নাকি গণতান্ত্রিক উপায়ে এখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে, এটি স্পষ্ট নয়। বর্তমান সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৯৯৬ সালের নিয়মের মতোই প্রস্তাব দিয়েছে: তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হবে ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি, যিনি অবসরে গেছেন, তিনি অপারগ হলে আগেরজন, তার আগেরজন, এভাবে আপিল বিভাগের বিচারপতি, অপারগ হলে তার আগেরজন ইত্যাদি। আর উপদেষ্টা কারা হবেন, তা স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক১৬ জুন ২০২৫এসব বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব হলো পুরো বিষয়টিকে জনসমক্ষে আনতে হবে। বিগত নির্বাচনগুলোতে ন্যূনতম প্রাপ্ত ভোট বিবেচনায় প্রধান দলগুলো থেকে তাদের অনাপত্তি আছে এই রকম নামের তালিকা নেওয়া হবে (শুধু বিচারপতি নয়, অন্যান্য পেশারও)। এসব তালিকা থেকে যেই নামগুলো সব তালিকায় আছে শুধু তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এখানে একাধিক ব্যক্তি উপযুক্ত হলে যাঁদের ক্রম আগের দিকে, তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। দলগুলো বড় তালিকা দেবে এবং প্রত্যেকের তালিকা থেকে সাধারণ নামগুলো চয়ন করা হবে।
জাতীয় টেলিভিশনে এই চয়ন প্রণালি সরাসরি সম্প্রচার করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থায় কোনো একটি দল ইচ্ছাকৃতভাবে যাতে অন্যদের সঙ্গে না মেলে, সে জন্য দুষ্ট একটি তালিকা নিয়ে আসতে পারে। সরাসরি সম্প্রচার হলে এসব দুরভিসন্ধি আমজনতার কাছে ধরা পড়ে যাবে।
তবে এরপরও যেটা হতে পারে, দলগুলোর তালিকার মধ্যে কোনো মিল না থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রেও সমাধান পাওয়ার জন্য পূর্ববর্তী নির্বাচনে তুলনামূলক কম ভোট পাওয়া দলগুলোকে একে একে বাদ দিয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এভাবে ন্যূনতম প্রধান দুটি দলের তালিকা থেকে যেতে পারে এবং সেখান থেকে সাধারণ একটি নাম চয়ন করা যেতে পারে। সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা বা নির্বাচন কমিশনপ্রধান বা কমিশনারদেরও একইভাবে পাওয়া যেতে পারে।
এ ধরনের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সহায়ক হতে পারে। এ রকম সরকারের উপদেষ্টাদের কীভাবে পাওয়া গেল, সে বিষয়ে আমাদের আর অন্ধকারে থাকতে হবে না।
৩.আমাদের দেশের সংসদে মোট আসনসংখ্যা ৩০০। এই সংখ্যা কোথা থেকে এল? কোন বিভাগে বা জেলায় কতটা আসন হবে, তারই বা ভিত্তি কী? পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে আসনসংখ্যা ছিল ৩০০। সেই থেকেই আমাদের স্বাধীন দেশের সংসদেও ৩০০ আসন এসেছে ধারণা করা যায়।
এখানে কোনো তত্ত্ব, তথ্য বা উপাত্ত নেই। আসনবিন্যাস ও পুনর্বণ্টনের একটা আইন আগে ছিল কিন্তু বর্তমানে নেই। এটি হলো ‘কমিশন প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করিয়া প্রতিটি আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করিবে, যাহাতে প্রতিটি আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় থাকে, এবং এইরূপ সীমানা নির্ধারণ সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনে উল্লিখিত জনসংখ্যার, যত দূর সম্ভব, বাস্তব বণ্টনের ভিত্তিতে করিতে হইবে।’
এটাতে জনসংখ্যার বণ্টন ছিল মূল ভিত্তি। কিন্তু আসলে কী হওয়া উচিত? কোনো এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিমাণ? বা মোট ভূমির পরিমাণ? বা অন্য কিছু? আমেরিকার জেফারসন বা হ্যামিল্টন আসন বণ্টনের জন্য জনসংখ্যাভিত্তিক সূত্র এবং বণ্টনের কারণে উদ্ভূত ভগ্নাংশের জন্য এপরসনমেন্ট গণিত নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা ও প্রস্তাবনা করে গেছেন।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘ব্লাসফেমি’০৫ আগস্ট ২০২৫আমাদের দেশে সেসব সূত্র প্রয়োগ করতে হবে তেমন কথা নেই, কিন্তু কোনটি প্রযোজ্য হবে, সেই পাঠও কি হয়েছে? আমরা আমাদের সংখ্যাতাত্ত্বিক পরীক্ষণে দেখেছি, জনসংখ্যা, ভূমির পরিমাণ বা ঘনত্ব কোনোটিই আমাদের বর্তমান আসন বণ্টনের সঙ্গে মেলে না।
যেমন ঝালকাঠির এক আসনে ভোটারসংখ্যা ১ দশমিক ৭৯ লাখ অথচ ঢাকার এক আসনে ভোটারসংখ্যা ৭ দশমিক ৫ লাখ। আমরা জানি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগের আসন বণ্টনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল।
অথচ তৎকালীন নির্বাচন কমিশন প্রধানের লিখিত পুস্তক থেকেও বোঝার উপায় নেই এই সীমানা নির্ধারণ বা আসন বণ্টন কী প্রকারে হয়েছে। ১৯৯১ বা ১৯৯৬ সালেও বা কীভাবে হয়েছে, কিংবা এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত ২০২৬-এর নির্বাচনেই-বা কীভাবে ঘটবে।
জনসংখ্যার অনুপাতে সুষম বণ্টন হলে ঝালকাঠি, মেহেরপুর বা নড়াইলের বর্তমান বরাদ্দ ২টি আসনের জায়গায় ১টি করে আসন পাওয়ার কথা এবং গাজীপুর বর্তমানের ৫টি আসনের জায়গায় ১০টি আসন পাওয়ার কথা।
আমাদের প্রস্তাব হলো, এটি জনসংখ্যা ঘনত্বের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভূমির পরিমাণ বা সম্পদের পরিমাণ তথা জাতীয় রাজস্বে ভাগ ও জনসংখ্যা দুই-ই গুরুত্ব পায়।
স্বাক্ষর শতাব্দ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; মু আ হাকিম নিউটন, ইউনিভার্সিটি অব নিউ ক্যাসেল, অস্ট্রেলিয়া; ফারজানা আলম, ইউনিসেফ লিডারশিপ প্রোগ্রাম; মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো
* মতামত লেখকদের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র দ শ গণতন ত র র পর ম ণ সরক র র জনস খ য ব যবস থ দলগ ল র র জন য তত ত ব আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
নেতৃত্ব কেন উদাসীন থাকবে
সম্প্রতি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গণতন্ত্র শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন।
যেকোনো রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্র ও নীতি-কর্মসূচির ভিত্তিতে। কিন্তু আমাদের নেতা-নেত্রীরা দেশবাসীকে গণতন্ত্রের সবক দিতে যতটা উদ্গ্রীব, দলের গণতন্ত্রায়ণ নিয়ে ততটাই উদাসীন। তারেক রহমানের এ বক্তব্যে যদি সেই উদাসীনতা কাটানোর সদিচ্ছা প্রকাশ পায়, আমরা স্বাগত জানাই।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। এর বাইরে অনেক অনিবন্ধিত দল আছে, যারা নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকুক আর না-ই থাকুক, তাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। তারা যে জনগোষ্ঠীর সমর্থন চায়, তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়। মানুষ দলটির নীতি-আদর্শের পাশাপাশি নেতৃত্ব গঠনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও দেখতে চাইবে। বিশেষ করে দলটি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি কতটা মেনে চলছে, সেসব বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি কম থাকায় এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন প্রতিটি দলের সব স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়, যা ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো দলই সেই শর্ত পূরণ করেনি। বাংলাদেশে কিছু দল আছে, তারা নারী নেতৃত্বের ঘোর বিরোধী। তারা কমিটিতে নারীর উপস্থিতি দেখতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেসব দল দশকের পর দশক নারী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে, সেসব দলও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। এ কারণে কোনো দলের কোনো স্তরে ১০ শতাংশ নারী নেতৃত্বের দেখা পাওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়।
যে রাজনৈতিক দল জনগণকে নেতৃত্ব দেবে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের কর্মকাণ্ডে কেন জবাবদিহি থাকবে না। একনায়ক পদ্ধতিতে দল পরিচালিত হওয়ার পরিণাম কতটা বিপজ্জনক হয়, তার প্রমাণ আমরা নিকট অতীতে কিংবা তারও আগে বহুবার পেয়েছি। তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানসিকতার দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে দলে গণতন্ত্রায়ণের কথা বলেছেন, সেটি সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য। প্রতিটি দল পরিচালিত হতে হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। সেই সঙ্গে যেসব দলের গঠনতন্ত্রে দলীয় প্রধানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা পরিবর্তন করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও দলে গণতন্ত্রায়ণের বিষয়টি সামনে আসে। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক দলের গণতন্ত্রায়ণের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ মুহূর্তে সেই সুযোগ না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব গঠনের কাজটি এগিয়ে নেওয়া।
বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা যখন দলে গণতন্ত্র সংহত করার কথা বলেছেন, তখন সেই দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কতটা মজবুত, দলটির নেতৃত্বের উচিত সেটা খতিয়ে দেখা। বিএনপির তৃণমূল স্তরে যে নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তার জন্য নেতৃত্ব গঠনের দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। যে দলটি ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে চাইছে, সেই দলটির নেতৃত্ব দলের গণতন্ত্রায়ণের বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারে না।